লাড্ডুকে মানে গোলকাকার বলেই মতো জানেন সকলে। কিন্তু মুম্বইয়ের রন্ধনশিল্পী সন্জ্যোত কির বলছেন, তরল লাড্ডুর কথা। যেটি, খেলেই বর্ষার গা ম্যাজম্যাজে ভাব উধাও হবে। জ্বরজারি, সর্দি-কাশি ঠেকানো যাবে।
কিন্তু জিনিসটি কী? লাড্ডু, তা-ও আবার আবার তরল! পঞ্জাবি পরিবারের ছেলে সন্জ্যোত। ছেলেবেলায় সর্দি, কাশি, গলাব্যাথা হলেই দিদিমা তাঁদের বানিয়ে দিতেন এমন জিনিস। ঘি, বেসন, দুধ, ড্রাই ফ্রুটস, হলুদ, জাফরান, গোলমরিচ দিয়ে বানানো জিনিসটি খেলেই তাঁর মনে হত যেন বেসনের লাড্ডু গলিয়ে কাপে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। উপাদেয় এবং পুষ্টিকর। রন্ধনশিল্পীর দাবি, বর্ষায় জ্বরজারির মরসুমে এমন ঘরোয়া টোটকা খুব কাজের। সর্দি-কাশি, মাথাধরা, গলা ব্যথায় দারুণ কাজ দেয়।
জিনিসটি কি সত্যি এত উপকারী? তরল লাড্ডু বানানো হয় মূলত ঘি, বেসন, দুধ, গুড়, কাঠবাদাম, আদা, ড্রাই ফ্রুট্স দিয়ে। গলা ব্যথায় একটু গরম জিনিস সব সময়েই খেতে ভাল লাগে। তার পর তা যদি সহজেই গিলে ফেলা যায়, খেতে সুবিধাও হয়।
রন্ধন পদ্ধতি
রন্ধনের পদ্ধতিও কঠিন নয় মোটেই। কড়াইয়ে ঘি গরম হতে দিয়ে তার মধ্যে বেসন দিয়ে নাড়াচাড় করে নিতে হয়। কাঁচা ভাব কেটে গেলে দিতে হয় দুধ। ক্রমাগত খুন্তি দিয়ে নাড়া জরুরি না হলেই তলায় ধরে যাবে। এর পর একে একে আদা কুচি, গুড়, দিয়ে নাড়াচাড়া করে শেষ ধাপে দিতে হয় বাদামের টুকরো। এটি কাপে খেতে দেওয়া হয়। দেখতে হয় ক্রিমের মতো।
আরও পড়ুন:
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী এবং অনন্যা ভৌমিকের কথায়, যে সমস্ত উপাদান ব্যবহার করে খাবারটি তৈরি করা হচ্ছে, তা প্রত্যেকটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। অনন্যা বলছেন, ‘‘বেসন, ঘি, গুড়, কাঠবাদাম, দুধ— এগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। বেসনে প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন রয়েছে। ঘিয়ে কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ‘গাট হেল্থ’ বা পাকস্থলী, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য জরুরি। তার ফলে সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।’’
কোন উপকরণের কোন গুণ?
ঘি: ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, ক্যালশিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর ঘিয়ের অনেক গুণ। পুষ্টিবিদ শম্পা বলছেন, স্বল্প পরিমাণে ঘি হজমে সহায়ক। তা ছাড়া, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও মেলে এতে। এই সমস্ত ভিটামিন এবং খনিজ শরীরের পক্ষে কার্যকর। রোগ প্রতিরোধকও।
কাঠবাদাম: স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে পূর্ণ কাঠবাদামে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো জরুরি উপাদান। ভিটামিন ই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
দুধ: সুষম খাবার বলে চিহ্নিত দুধে রয়েছে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, পটাশিয়াম, ফসফরাস-সহ একাধিক গুরুত্বপূ্র্ণ পুষ্টিগুণ।
গুড়: চিনির মতো গু়ড়েও শর্করা আছে ঠিকই, কিন্তু অল্প কিছু ভিটামিন এবং খনিজ মেলে এতে। শম্পা বলছেন, ‘‘খাঁটি আখের গুড়ে জ়িঙ্ক, পটাশিয়াম, আয়রন মেলে।’’ তবে অনন্যা মনে করাচ্ছেন, ডায়াবিটিস থাকলে কিন্তু গুড়ও চিনির মতো ক্ষতিকর হবে। কারণ, এতেও চিনির সমান শর্করাই থাকে।
আদা: গলা খুসখুস, বমি ভাবে আদার ব্যবহার সকলেই জানেন। কোভিডের সময়েও গলার ব্যথা, খুসখুসে ভাব কমাতে যে ‘কড়া’ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তাতে আদা ছিল। আদায় জিঞ্জেরলস নামে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট মেলে, যা ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
এটি আবার শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য, ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকর বলছেন শম্পা। অনন্যা বলছেন, ‘‘গলা খুসখুস কমাতেও সাহায্য করে ঘি। পুষ্টিগুণ শোষণেও এর ভূমিকা রয়েছে। রোগ প্রতিরোধে ঘিয়ের গুণাগুণ যথেষ্ট।’’
তবে পুষ্টিবিদদের কথায়, তরল লাড্ডু পু্ষ্টিগুণের বিচারে উপকারী, সন্দেহ নেই। তবে, ওজন বশে রাখতে চাইলে গুড় মেশানো লাড্ডু খেতে হবে পরিমিত। ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রেও এমন খাবার খাওয়া ঠিক নয়, বিশেষত যথেষ্ট গুড় মেশানো হলে। দুধের ল্যাক্টোজ় হজমে সমস্যা থাকলেও, তরল লাড্ডু চলবে না বা দুধ বাদ দিতে হবে।
তবে সরাসরি সর্দি-কাশি কমাতে পারে কি না তরল লাড্ডু, সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন পুষ্টিবিদেরা। তবে এই খাবার যে সামগ্রিক ভাবে শরীরের জন্য ভাল, সে ব্যাপারে সিলমোহর দিচ্ছেন দুই পুষ্টিবিদই।