Advertisement
E-Paper

৬০০ টাকায় ৫ মিনিটের আলিঙ্গন! মেয়েরা কেন অচেনা পুরুষদের জড়িয়ে ধরে শান্তি পাচ্ছেন?

টাকা খরচ করে ঘর থেকে বেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ানো, তার পর অচেনা এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে জড়িয়ে ধরা। চলবে মিনিট পাঁচেক। আর তাতেই শান্তি মিলছে কত নারীর!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫ ১৫:৪০
অচেনা ব্যক্তিকে আলিঙ্গনে শান্তি কেন?

অচেনা ব্যক্তিকে আলিঙ্গনে শান্তি কেন? ছবি: সংগৃহীত।

একা হয়ে আসছে সকলে। ভিড়ের মাঝেও। নতুন যুগের ব্যস্ত, ছন্নছাড়া জীবনে উষ্ণতার অভাব। ঠিক যে ভাবে ছোটবেলায় মায়ের বুকে মাথা রেখে শান্তি পাওয়া যেত, সে ভাবেই আশ্রয় খুঁজছে সবাই। সে শান্তি খোঁজার উপায় এক এক জনের কাছে এক এক রকমের। কেউ প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে, কেউ বা এখনও বাবা-মায়ের কাছে, কেউ বা অচেনা ব্যক্তির কাছে খুঁজে চলেছেন শান্তি। ত়ৃতীয়টি শুনে একটু থমকে দাঁড়াতে হয়। তবে সে ব্যক্তি কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই অচেনা। যাঁদের প্রেমের সঙ্গী নেই, বাবা-মায়ের সান্নিধ্যও হয়তো পান না, তাঁরা মনের বিশ্রাম খুঁজতে সম্পূর্ণ অচেনা ব্যক্তির কাছে। তাও মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য।

এমনই নতুন ধারা শুরু হয়েছে চিন দেশে। যেখানে মহিলারা ঠিক পাঁচটি মিনিটের জন্য ৬০০ টাকা (ভারতীয় হিসেবে) খরচ করে অচেনা ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছেন। নির্জনে নয়, যে রাস্তা লোকে লোকারণ্য। মূলত পুরুষদের খুঁজছেন মহিলারা। চিনা ভাষায় যাঁদের ডাকা হচ্ছে ‘ম্যান মাম্‌স’ বলে। চিনের এক সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা গিয়েছে, এক কালে চিনে এই শব্দটি সেই পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত, যাঁদের দেহ সুঠাম, পেশিবহুল। এখন ‘ম্যান মাম্‌স’ বলতে তাঁদের বোঝানো হয়, দেহসৌষ্ঠবের পাশাপাশি যাঁরা নরম মনের মানুষ। অনুভূতি, আবেগে ভরা পেশিবহুল পুরুষদের চাহিদা বেড়েছে এই পেশায়। যাঁদের জড়িয়ে ধরে খানিক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে উষ্ণতার ছোঁয়া পাওয়া যাবে, যা আসে মনের ওই বৈশিষ্ট্যের কারণেই। এই আলিঙ্গনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থির হয় চ্যাটিং অ্যাপে। তার পর তাঁরা শপিং মল অথবা স্টেশনে দেখা করেন।

চিনে মহিলারা পাঁচ মিনিটের জন্য অচেনা ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছেন।

চিনে মহিলারা পাঁচ মিনিটের জন্য অচেনা ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত।

সম্প্রতি চিনের এক ছাত্রী পাঁচ মিনিটের আলিঙ্গনের বুকিংয়ের জন্য সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। নিজের গবেষণার কাজ নিয়ে অত্যন্ত মানসিক চাপে রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। অচেনা কাউকে জড়িয়ে ধরার দরকার আছে বলে মনে হতে থাকে তাঁর। ছাত্রী নিজেই পোস্ট করে জানিয়েছেন, স্কুলে পড়াকালীনও এক বার এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর ভাল লেগেছিল। এ বারও তাঁর চাহিদা পাঁচ মিনিটের আলিঙ্গন। আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে। কত টাকা তিনি দিতে পারবেন, সে কথাও জানিয়ে দিয়েছেন। সেই পোস্ট ঘিরে তোলপাড় হয়। বহু মহিলা সেখানে এই পদ্ধতিকে সমর্থন জানান। সেখান থেকেও বিভিন্ন গল্পের কথা শোনা যায়।

ওই পাঁচটি মিনিটে কী হয়?

এক মহিলা জানিয়েছেন, তিনি তিন মিনিটের জন্য এক জন ‘ম্যান মাম’-এর সঙ্গে দেখা করেন।তার আগে কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা কাজ করে এসেছেন। সে অভিজ্ঞতা বেশ খারাপ ছিল। কিন্তু কয়েকটি মুহূর্তের ওই আলিঙ্গন তাঁকে আরাম দিয়েছে। ওই কয়েকটি মিনিটে সেই ব্যক্তি মহিলার অফিস সংক্রান্ত সমস্ত রাগের কথা, বিরক্তির কথা, মন খারাপের কথা শুনেছেন। আর তাতে মানসিক ভাবে হালকা হতে পেরেছেন সেই মহিলা।

অচেনা ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরলে শান্তি মেলে কি?

আলিঙ্গনের সঙ্গে সুস্বাস্থ্যের যোগ অনেকেরই জানা। ‘স্ট্রেস হরমোন’, কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে ‘হ্যাপি হরমোন’ ডোপামাইনের উৎপাদন বাড়াতে পারে আলিঙ্গন। তা ছাড়া, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখা, ঘুমের মান উন্নত করা, উদ্বেগের সমস্যা কমানোর উপকারিতাও মেলে প্রিয় কাউকে মিনিটখানেক জড়িয়ে ধরলে। কিন্তু শুনে অবাক লাগলেও একই রকমের উপকারিতা মিলতে একেবারে অচেনা কোনও ব্যক্তির বুকে বা কাঁধে মাথা রাখলে। ‘কম্প্রিহেনসিভ সাইকোনিউরোএন্ডোক্রাইনোলজি’-র সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, অপরিচিত ব্যক্তিদের আলিঙ্গন করলেও কর্টিসলের প্রতিক্রিয়া কমে শান্ত হয় মন। আলিঙ্গন এবং স্পর্শ আসলে নিরাপত্তার সঙ্কেত হিসেবে কাজ করতে পারে। যাঁরা এতে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা এমন অনুভূতি পেয়েছেন, যেন সব কিছু ঠিক চলছে। বিজ্ঞানীদের মতে, স্পর্শ এবং আলিঙ্গন এক জন ব্যক্তিকে চাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বেশ কার্যকরী একটি উপায়।

প্রেমিক সঙ্গীর সঙ্গে আলিঙ্গনে  সম্পর্কের ইতিহাস, মানসিক ঘনিষ্ঠতা এবং যৌন সম্পর্কের স্বাচ্ছন্দ জুড়ে থাকে।

প্রেমিক সঙ্গীর সঙ্গে আলিঙ্গনে সম্পর্কের ইতিহাস, মানসিক ঘনিষ্ঠতা এবং যৌন সম্পর্কের স্বাচ্ছন্দ জুড়ে থাকে। ছবি: সংগৃহীত।

তবে এ কথা ঠিক যে, এক জন প্রেমিক সঙ্গীর স্পর্শ আর এক জন অপরিচিত ব্যক্তির আলিঙ্গনের মধ্যে অনেক তফাৎ থাকে। কারণ, প্রথমটিতে দম্পতির সম্পর্কের ইতিহাস, মানসিক ঘনিষ্ঠতা এবং যৌন সম্পর্কের স্বাচ্ছন্দ জুড়ে রয়েছে। কিন্তু যদি প্রেমিকের অস্তিত্ব না থাকে, তা হলে চিনের মহিলাদের এই পদ্ধতি অবলম্বন করলেও উপকার মিলতে পারে। কিন্তু অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে এবং সতর্ক থেকে সঠিক মানুষ বেছে তার পরই যাওয়া উচিত। নয়তো বিপদের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

Hugging Mental Health Tips Chinese Lady China News Healthy Lifestyle Tips Hug In Public
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy