সারা দিনে প্রচুর জল খাচ্ছেন। তিন লিটারের মতো জল খেয়েও যদি শরীরে জলের ঘাটতি হতে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে সমস্যা অন্য জায়গায়। গরমের দিনে যে কেবল ডিহাইড্রেশন বা শরীরে জলের ঘাটতি হয়, তা নয়। বর্ষার সময়েও হয়। অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাব, বারে বারে গলা শুকিয়ে যাওয়া, মুখের ভিতরে শুষ্ক ভাব, মাথা যন্ত্রণা যদি লাগাতার হতে থাকে এবং জল খেয়েও সমস্যার সমাধান না হয়, তা হলে বুঝতে হবে অন্য কিছুর ঘাটতি হচ্ছে শরীরে।
পর্যাপ্ত জল পানের পরেও হতে পারে ‘ডিহাইড্রেশন’?
‘হাইড্রেশন’ মানে শুধু জল নয়, শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের ভারসাম্যও বোঝায়। এই খনিজ লবণগুলির কাজ হল শরীরের কোষে কোষে জল পৌঁছে দেওয়া। যদি খনিজগুলির ঘাটতি হয়, তা হলে পর্যাপ্ত জল পানের পরেও তা শরীরের সর্বত্র গিয়ে পৌঁছবে না। ফলে যে যে জায়গার কোষে জলের ঘাটতি হবে, সেখানকার পেশিতে টান ধরবে, ব্যথা হবে। বারে বারে গলা শুকিয়ে যাবে, মুখের ভিতরও শুষ্ক হতে থাকবে।
এই খনিজ লবণগুলি যারা শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে, তাদের ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ বলে। শরীরে প্রধানত চারটি কাজের জন্য ইলেক্ট্রোলাইট দরকার— ১) শরীরের ফ্লুয়িড অর্থাৎ তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা, ২) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ৩) হৃৎপিণ্ড-সহ সারা শরীরের পেশি সঙ্কোচন ও প্রসারণে সাহায্য করা এবং ৪) রক্তের পিএইচ অর্থাৎ অ্যাসিড এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা। কাজেই ইলেক্ট্রোলাইটের গোলমাল হলে এই কাজগুলি ব্যাহত হবে। তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকবে।
আরও পড়ুন:
তবে শুধু ইলেক্ট্রোলাইটের গোলমালে নয়, আরও কিছু কারণে শরীরে জলের ঘাটতি হতে পারে। যেমন, অতিরিক্ত কফি বা অ্যালকোহল খেতে থাকলে শরীরে ক্যাফিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এর থেকেও জলের ঘাটতি হবে। টাইপ ২ ডায়াবিটিস বা কিডনির রোগ থাকলেও এমন হতে পারে। খুব বেশি কার্ডিয়ো বা স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে পর্যাপ্ত জল ও তরল খাবার খেতে হয়। না হলেই শরীরে জলের ঘাটতি হবে।
সমস্যা মিটবে কী ভাবে?
নিয়মিত ও পরিমাণমতো জল পান করলে শরীর স্বাভাবিক ভাবেই হাইড্রেটেড থাকে। এতে শরীরের সর্বত্র প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছয়, শরীরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রায় বজায় থাকে, শরীরে জমা বর্জ্যও ঠিকমতো শরীর থেকে বেরিয়েও যেতে পারে। শরীরে রোজকার জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য সাধারণ পানীয় জলের সঙ্গে ফলের রস, দুধ ইত্যাদি পানীয়েরও দরকার হয়। ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বাড়িতেও তৈরি করে নেওয়া যায়। এক গ্লাস জলে দু’চামচ চিনি আর এক চিমটে নুন গুলে নিলেই হবে। ডায়াবিটিস থাকলে চিনির বদলে লেবুর রস মেশাতে পারেন।
মুসাম্বি লেবুর রসের সঙ্গে সামান্য পাতিলেবুর রস, অল্প নুন, ডাবের জল আর ঠান্ডা জল পরিমাণমতো মিশিয়ে তৈরি করা যায় সুস্বাদু ইলেক্ট্রোলাইট।
আরও এক ভাবে তৈরি করা যায়, ২ কাপ জলে ১ চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার, ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু ও এক চিমটে নুন মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়।