হাতের দশটা আঙুলের উপরে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নির্ভর করে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আমরা যতটা যত্নশীল, হাতের আঙুল নিয়ে ততটা নয়!
ব্যথার কারণ
আঙুল ব্যথার পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। আর এই ব্যথা যে কোনও বয়সে হতে পারে। ফিজিয়োথেরাপিস্ট পূষণ দাস বললেন, “আঙুলের সমস্যা হয় নানা কারণে। ট্রিগার ফিঙ্গারের জন্য আঙুল, বিশেষ করে বুড়ো আঙুল বাঁকানোর সময়ে আটকে যায়। এ ছাড়া যাঁদের রাইটার্স ক্র্যাম্প থাকে, তাঁরা কিছুক্ষণ লিখলে আঙুলে বেশ ব্যথা হয়। এই ধরনের সমস্যা স্ট্রোকের পরে বা পারকিনসন’সের সমস্যা থাকলেও হয়। এখন ছোট-বড় প্রায় সকলেই দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইলে টাইপ করেন, স্ক্রোল করেন, গেম খেলেন, যার ফলে টেক্সট থাম্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকে।” এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, কারপাল টানেল সিনড্রোম, দুর্ঘটনাজনিত আঘাত ইত্যাদি কারণে আঙুল নাড়ালে যন্ত্রণা হয়, আঙুলের জয়েন্টে ব্যথা হয়, ফুলে ওঠে।
আঙুলের জন্য ব্যায়াম
আঙুলের পেশিগুলি সূক্ষ্ম ও নরম। তাই অতিরিক্ত স্ট্রেস হলে আঙুল তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়। কিছু ব্যায়ামে এর সমাধান সম্ভব। “ইনফ্লামেশন থাকলে ব্যায়াম করার আগে তা কমিয়ে ফেলা জরুরি। এর জন্য আইস থেরাপি, লেজ়ার থেরাপি বা আলট্রাসোনিক থেরাপি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে ফ্যারাডিক হ্যান্ড বাথের পরামর্শ দেওয়া হয়। একটা বড় জলপূর্ণ পাত্রে ছোট মেশিনের মধ্য দিয়ে জলে বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয়। জলে হাত ডুবিয়ে রাখলে জলের মধ্যের কম্পন হাতের সূক্ষ্ম পেশিগুলো স্টিমুলেট করে, যা ব্যথা নিরাময়ে ও পেশির জোর বাড়াতে সাহায্য করে,” ব্যাখ্যা করে বললেন ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট। তবে ব্যথা হলে বিশ্রাম নিন এবং এই সময়ে স্প্লিন্ট বা ব্রেস ব্যবহার করলে ভাল।
টেক্সট থাম্বের সমস্যা এখন বেশি দেখা যায়, কয়েকটি ব্যায়ামের পরামর্শ দিলেন পূষণ দাস—
- টেবিলের উপরে কয়েকটি কয়েন বা বোতাম ছড়িয়ে নিন। আঙুল দিয়ে একটা করে তুলে অন্যত্র রাখুন।
- ছোট তোয়ালে মুঠোর মধ্যে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে স্কুইজ় করুন।
- বুড়ো আঙুল ও এক এক করে তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে ইংরেজির ‘ও’-এর মতো করুন। পাঁচ সেকেন্ড ধরে রেখে ছেড়ে দিন।
- যে আঙুলে সমস্যা হচ্ছে অন্য হাতের আঙুল দিয়ে সেখানে হালকা মাসাজ করা এবং তার পরে মুঠো করা ও ছাড়া। এ ভাবে ৩০ সেকেন্ড। প্রতিটি এক্সারসাইজ় ১০ বার করে, দিনে দু’-তিনবার করতে হবে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তেরা এই ব্যায়ামগুলো করুন:
- টেবিলে এক হাতের পাতা সোজা করে রেখে চারটে আঙুল জড়ো করে মুঠো করা এবং বুড়ো আঙুল প্রসারিত করা।
- টেবিলের উপর হাতের পাতা উল্টো করে রেখে বুড়ো আঙুল ও তর্জনী প্রসারিত করা। তখন বাকি আঙুলের মধ্যে ফাঁক থাকবে না।
- গ্রস গ্রিপের যন্ত্র দিয়ে ব্যায়াম করা যায়।
- কোনও একটা নরম জিনিস দুটো আঙুল দিয়ে চিপতে হবে।
সমস্যা না থাকলেও ব্যায়াম করতে পারেন। এতে আগাম রুখে দেওয়া যাবে সমস্যা। “নিয়মিত নাকল এক্সারসাইজ় করলে হাতের পেশি মজবুত থাকে, স্টিফনেস কমে। বিশেষ করে যাঁরা লেখালিখি বা টাইপ করেন, তাঁরা করতে পারেন,’’ পরামর্শ ফিটনেস ট্রেনার সৌমেন দাসের।
- দশ আঙুল যতটা সম্ভব ফাঁক করে হাত টানটান করে খুলুন। তার পরে আঙুল ও তালুর পেশিগুলো প্রসারিত ও সঙ্কুচিত করতে হবে।
- বুড়ো আঙুলের তলায় তর্জনী থেকে কনিষ্ঠ প্রতিটি আঙুল এনে বুড়ো আঙুলে চাপ দিতে হবে।
- বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতে বুড়ো আঙুলের ফাঁক দিয়ে চারটে আঙুল একসঙ্গে ধরে একবার পিছনে ও একবার সামনে চাপ দিতে হবে। চারটে আঙুলের মাঝে কোনও ফাঁক থাকবে না। একই ভাবে ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে করতে হবে।
- আঙুল ও কবজির পেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য কাজের ফাঁকে সফট স্মাইলি বল স্কুইজ় করতে পারেন।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে, ব্যায়াম করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)