দেশ জুড়ে বায়ুদূষণের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। একই সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে। চিকিৎসাজগতে নানা রকমের ওষুধপত্র, পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি ঘরোয়া পন্থায় ফুসফুস সুস্থ রাখার চেষ্টা শুরু করেছেন অনেকেই। শীতের সময়ে ধোঁয়াশায় ভর্তি হয়ে থাকে চারদিক। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বায়ু গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু যদি ফুসফুসকে সে ভাবে প্রস্তুত করেন, যাতে সেটি দূষিত পদার্থ টেনে বার করে দেবে, তা হলে অনেকটাই চিন্তামুক্ত হতে পারবেন। তার জন্য প্রাচীন এক টোটকায় ভরসা রাখতে পারেন। প্রয়োজন একটু পানীয় জল এবং গুড়। শহরের ধোঁয়া-দূষণে ক্লান্ত ফুসফুসকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার এই প্রাচীন উপায় আজ বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণেও প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করছে।
কী সেই টোটকা?
একটি কাপে হালকা গরম জল নিন। তাতে এক চা চামচ গুড় মিশিয়ে দিন। ভাল করে নাড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিন। সকালে খালিপেটে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হবে। এতে গলায় আরাম মিলবে, শ্বাসনালী পরিষ্কার হবে। মাঝে মাঝে এক চিমটে হলুদ বা গোলমরিচ গুঁড়ো মেশানো যেতে পারে। এতে শরীরে প্রদাহরোধী ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদানের পরিমাণ বাড়বে। দূষণের পরিমাণ তীব্র থাকলে সপ্তাহে ২-৩ বারও এটি খেতে পারেন। তবে গুড়ে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত না খাওয়াই ভাল।
গুড় দিয়েই ফুসফুসের যত্ন নিন। ছবি: সংগৃহীত।
কেন এই টোটকা কার্যকরী?
গুড় অপ্রক্রিয়াজাত মিষ্টিতে ভর্তি। এতে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কিছুটা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও। ফলে বিপাক ক্রিয়ায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে গুড়। গরম জল শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা আলগা হতে সাহায্য করে, ফলে কফ সহজে বেরিয়ে যায়। একত্রে কাজ করলে গুড় ও জল শ্বাসনালীর এই পরিষ্কারের প্রক্রিয়া, অর্থাৎ ‘মিউকোসিলিয়ারি ক্লিয়ারেন্স’কে সাহায্য করে। ফলে ধুলো ও ধোঁয়ার কণাগুলি দ্রুত বাইরে যেতে পারে। গরম জল মিউকাস মেমব্রেনগুলির শুষ্কতা দূর করে আর্দ্র করতে পারে। আর গুড় মিউকাস নিঃসরণে সাহায্য করে। ফলে শ্বাসনালী আর্দ্র থাকে এবং ক্ষতিকর কণাগুলি সহজে বেরিয়ে যেতে পারে।
কারা সতর্ক হবেন?
যদি ডায়াবিটিস বা কোনও বিপাকজনিত সমস্যা থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই রুটিন শুরু করবেন। গলার ক্ষতি করবে, এমন মাত্রায় গরম করা উচিত নয় জল। ধূমপায়ী বা প্রচণ্ড ধুলোময় পরিবেশে যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন, তাঁদের জন্য শুধু এই মিশ্রণই যথেষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে এয়ার পিউরিফায়ার, মাস্ক ব্যবহার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরি।