ব্যথার সঙ্গে আর বয়সের ভারের কোনও সম্পর্ক নেই। এখন অল্প বয়স থেকেই নানা ধরনের ব্যথায় সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। আর্থ্রাইটিস থেকে শুরু করে সায়াটিকা কিংবা নানা ধরনের ক্রনিক ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৮০। এই ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে দিনে অন্তত এক বার হনহনিয়ে হাঁটা বা ব্রিস্ক ওয়াকিংয়ের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে, দিনে এক বার আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা হনহনিয়ে হাঁটলেন আর সারা দিন শুয়ে বসে থাকলেন, তাতে কোনও কাজ হবে না। বিশেষ করে কোমরে ব্যথার সমস্যা যদি থাকে, তবে ৭৮ মিনিট হাঁটতে হবে। আর সেই হাঁটাহাঁটি করতে হবে সারা দিন ধরে।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জামা নেটওয়ার্ক ওপেন’ জার্নালে। গবেষকেরা সেখানে লিখেছেন, ৭৮ মিনিটের ফর্মুলা পেতে তাঁরা ১১ হাজার মানুষকে নিয়ে সমীক্ষা করেছেন। এই ১১ হাজার মানুষের মধ্যে ২০ বছর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ছিলেন। গবেষণার স্বার্থে এঁদের প্রত্যেকের ডান দিকের উরুতে এবং কোমরে অ্যাকসেলেরোমিটার পরতে বলা হয়েছিল। সেই অ্যাকসেলেরোমিটার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, যাঁরা দিনে ৭৮ মিনিট বা তার বেশি হেঁটেছেন, তাঁদের নাছোড় কোমরে ব্যথার ঝুঁকি কমেছে ১৩ শতাংশ। কিন্তু যাঁরা তার কম সময় হেঁটেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ তফাত হয়নি। আর যাঁরা ১০০ মিনিটের বেশি হেঁটেছেন, তাঁদের কোমরে ব্যথার ঝুঁকি কমেছে ২৩ শতাংশ।
এই অংশগ্রহণকারীরা যে একবারে এই ৭৮ মিনিট হেঁটেছেন তা নয়। বরং অধিকাংশই সারা দিন ধরে নানা সময়ে হাঁটাচলা করেছেন। গবেষকেরা বলছেন, ‘‘সুস্থ থাকতে হাঁটার যে নিদান চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন, তাতে কোনও ভুল নেই। তবে আমাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দিনের কোনও একটি সময় হনহনিয়ে হাঁটার থেকে সারা দিন ধরে সক্রিয় থাকার উপকার বেশি। অন্তত কোমরে ব্যথার সমস্যার ক্ষেত্রে তো বটেই।’’
দৈনন্দিন কাজের ধরনে বদল এসেছে অনেক। মাত্রাছাড়া কাজের চাপ সামলাতে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকেন। সারা দিন ধরে এক জায়গায় বসে থাকার এই প্রবণতা যে শরীরে নানা রোগ ডেকে আনছে, তা দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন চিকিৎসকেরা। এ বার এই গবেষণাও বলল।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এক জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকার কারণে ‘ডেড বাট সিনড্রোম’ হচ্ছে। তা থেকে বাড়ছে নাছোড় কোমরে ব্যথা। এই সমস্যার কারণ হল আমাদের নিতম্বে থাকা গ্লুটাস মিডিয়াস পেশি। নিতম্বের এই পেশিকে সক্রিয় না রাখলে তা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তা থেকে অন্য পেশি এবং অস্থিসন্ধিতেও ব্যথা হতে পারে।
২০২২ সালের একটি গবেষণা বলছে, এই ধরনের কোমরে ব্যথার সমস্যা ভারতীয়দের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। আর পুরুষদের থেকেও মহিলারা এই সমস্যায় ভোগেন বেশি।