শীত এখনও আসেনি। তবে আবহাওয়া বদলে বাতাসে হালকা হিমেল ছোঁয়া। ঋতু বদলের এই সন্ধিক্ষণে সবচেয়ে বেশি ভোগায় বাতের ব্যথাবেদনা। আবার বাত যাঁদের নেই, তাঁদেরও সময় বিশেষে গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা বাড়ে। ক্লান্তি ভাব, আলস্য কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন, তাঁদের পায়ের পাতায় ও গোড়ালিতে ব্যথাও বাড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাটিতে পা রাখা মাত্রই তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় গোড়ালিতে। হাঁটতে গেলে টান ধরে। বাত হোক বা না হোক, মরসুম বদলের সময়ে ব্যথাবেদনাকে কাবু করার সহজ কিছু উপায় আছে। এর জন্য ব্যথানাশক ওষুধের উপর ভরসা করার প্রয়োজন নেই।
কেন বাড়ে গাঁটে গাঁটে ব্যথা?
অস্থিসন্ধি বা দু’টি হাড়ের সংযোগস্থলে অর্থাৎ, হাড়ের আগায় সাদা রঙের রবারের মতো দু’টি তন্তুর মতো বস্তু থাকে। এদের কাজ অস্থিসন্ধির দু’টি হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ কমানো। তা ছাড়া কোনও আঘাত লাগলে এগুলি ‘শক অ্যাবজরভার’ হিসাবে কাজ করে। কোনও কারণে ওই কার্টিলেজ ক্ষয়ে গেলে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় এবং বাতের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। এ দেশে সবচেয়ে বেশি হয় অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের মতো বাত। এই ধরনের বাত সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে থাকে। অস্থিসন্ধিতে থাকা কার্টিলেজ ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে যন্ত্রণা হয়। ঠিকমতো শারীরিক পরিশ্রম না করা, শরীরচর্চা না করা, দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া এই সবই হল এমন বাতের কারণ।
আরও পড়ুন:
আমেরিকার হার্ভার্ড হেল্থ থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, শীতের সময়ে অস্থিসন্ধির চারপাশের কোষ, তন্ত্র, রক্তবাহী নালি সঙ্কুচিত হয়। ফলে রক্ত সঞ্চালন ধীর গতিতে চলে। এতে অস্থিসন্ধির চারপাশে থাকা স্নায়ুতে চাপ পড়ে, সে কারণেও প্রদাহও বাড়ে। পেশি সঙ্কোচনের কারণে গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা শুরু হয়। আবার এই সময়ে শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রাও কমতে থাকে। সে কারণেও ব্যথাবেদনা হয়।
নিরাময়ের উপায় কী কী?
১) হাঁটাচলা, শরীরচর্চা কমিয়ে দিলে চলবে না। শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। বয়স্কদের নিয়মিত সকালে ও সন্ধ্যায় অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটতেই হবে। এতে অস্থিসন্ধি সচল থাকবে, রক্ত সংবহনও ঠিকমতো হবে। ব্যথা হবেই না।
২) ব্যথার জন্য অনেক সময় অস্থিসন্ধি ভাঁজ হতে চায় না। গরম সেঁক দিলে এ ক্ষেত্রে আরাম পেতে পারেন। এই সময় থেকেই ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করা শুরু করুন।
৩) ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, বাদাম, মাছ, সব্জি প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় রাখা দরকার। সেই সঙ্গে পর্য়াপ্ত জল, টাটকা ফলের রস ও তরল খাবারও খেতে হবে।
৪) ব্যথা বাড়লে লেগ রেজ় ব্যায়াম করলে উপকার পেতে পারেন। টানটান হয়ে শুয়ে দু’হাতের তালু মেঝের উপরে রাখুন। এ বার বাঁ পা আস্তে আস্তে উপরে তুলুন। মাটি থেকে অন্তত ৪৫ ডিগ্রি কোণে তুলতে পারলে ভাল। পাঁচ সেকেন্ড ওই ভাবে পা তুলে রাখুন। তার পরে ধীরে ধীরে নামিয়ে নিন। এই একই পদ্ধতিতে ডান পা ওঠান এবং উপরে কিছু ক্ষণ রেখে নামিয়ে নিন। শুরুর দিকে দু’পায়ে চার বার করে এই লেগ রেজ ব্যায়াম করতে পারেন।
৫) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান। মুসাম্বির রস, আঙুর, লেবু, ফুলকপি, ব্রকোলি, পালং শাক, নানা রঙের বেলপেপার রোজের খাদ্যতালিকায় রাখুন।
৬) দুধ, দই, পনির, ছানা ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি না থাকলে, সেগুলি খেতে পারেন। এতে ক্যালশিয়ামের জোগান পাওয়া যাবে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখবে।