সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে ফিট থাকার কায়দা, নিয়ম, ধরন। কখনও যোগাভ্যাস, কখনও ভারী শরীরচর্চা, কখনও কার্ডিয়োয় মনোযোগ দিয়ে শরীর সুস্থ রাখার পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন মানুষ। ইদানীং ফিটনেস প্রশিক্ষকদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে পিলাটিজ়। গত শতকের গোড়ার দিকে জোসেফ পিলাটিজ় শুরু করেছিলেন ফিট থাকার এই নয়া উপায়। তাঁর নাম থেকেই পরে নামকরণ হয়। কোনও যন্ত্রপাতির ব্যবহার নয়, স্ট্রেচিং-এর উপর জোর দেওয়া হয় এই বিশেষ পদ্ধতিতে। বলি পাড়ার অনেক অভিনেতা ও অভিনেত্রীরাই সুস্বাস্থ্য পেতে ইদানীং পিলাটিজ়-এর উপর ভরসা রাখছেন।
সম্প্রতি জাহ্নবী কপূর, সারা আলি খান, অনন্যা পাণ্ডের পিলাটিজ় প্রশিক্ষক নম্রতা পুরোহিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পিলাটিজ়-এর জন্য দিনে ২০ মিনিট সময় বার করতে পারলেই শরীর আর মন দুইয়েরই অবাক করা পরিবর্তন লক্ষ করা যেতে পারে। খেলোয়াড় যিনি চোট-আঘাত সামলে ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন কিংবা কোনও এক জন যিনি সদ্য ফিটনেস নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন— যে কেউ দক্ষ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে এই ব্যায়াম করতে পারেন।
পিলাটিজ় নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা
অনেকেই মনে করেন পিলাটিজ় খুব সহজেই করা যায়, খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। নম্র্রতা বলেন, ‘‘পিলাটিজ় করা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। পিলাটিজ় মানেই স্ট্রেচিং, এ কথাও ঠিক নয়। পিলাটিজ় বড় বড় খেলোয়াড়দেরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে, আবার যিনি কখনও কোনও ব্যায়ামই করেননি তিনিও পিলাটিজ় করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি কতটা ঘামছেন তা জরুরি নয়, আপনার শরীরের ভঙ্গি আর গতিশীলতাই গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মিনিটে কী কী ব্যায়াম করা যেতে পারে?
ফিট থাকতে নম্রতার মতে ২০ মিনিটে প্লাঙ্ক, লেগ সার্কেল, ব্রিজ, মেরুদণ্ডের স্ট্রেচিংয়ের মতো ব্যায়ামগুলি করা যেতে পারে। ফিটনেট প্রশিক্ষক বলেন, ‘‘পিলাটিজ়-এর ক্ষেত্রে কত ক্ষণ ব্যায়াম করছেন তার থেকেও বেশি জরুরি হল নিয়মিত করছেন কি না। রোজ নিয়ম করে অল্প সময়ের জন্যও এই ব্যায়াম করলে কিন্তু বড় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।’’
আর কী কী সুফল পাওয়া যায় পিলাটিজ় করলে?
১) বিশেষ কিছু আঘাতে প্রায়ই ভোগেন নানা মানুষ। স্লিপ ডিস্ক, ফ্রোজেন শোল্ডার, স্পন্ডিলোসিস, আর্থ্রাইটিস— এই ধরনের সমস্যা, ব্যথা থেকে পিলাটিজ় অনেকাংশে মুক্তি দেয়। পিলাটিজ় কিন্তু কোনও রোগকে নির্মূল করে সারিয়ে তোলে না। কিন্তু হাড়, অস্থিসন্ধি, পেশিগত নানা আঘাতের কষ্ট কমিয়ে সুস্থ জীবনে ফেরাতে সাহায্য করে করে এই ব্যায়াম।
২) মেরুদণ্ড, তলপেট, পেটের উপর দিক এবং পেলভিক অঞ্চলের পেশির জোর বাড়িয়ে গোটা শরীরের ভারসাম্য বাড়াতে সাহায্য করে। শরীর নমনীয় করে তুলতে সাহায্য করে এই ব্যায়াম।
৩) আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। যন্ত্রণায় কাবু যাঁরা হাঁটতে-চলতে কষ্ট পান, তাঁরাও নিয়মিত পিলাটিজ় চর্চার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারেন। মানসিক অবসাদ কমাতেও এই ব্যায়াম দারুণ উপকারী।
৪) এ ছাড়াও মেদ ঝরাতে এই ব্যায়াম বেশ উপকারী। তবে অন্যান্য শরীরচর্চার মতো দ্রুত গতিতে ফ্যাট ঝরে না এই ক্ষেত্রে। পেশির জোর বাড়ে। পিলাটিজ় করলে ওজন মারাত্মক কমবেই, তার কোনও মানে নেই। কিন্তু শরীরের গড়ন সুন্দর করতে সাহায্য করে এই ব্যায়াম। নম্রতা বলেন পিলাটিজ়-এর সঙ্গে কার্ডিয়ো ব্যায়াম নিয়ম করে খরলে ওজন ঝরার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়।
এই ধরনের ব্যায়াম করার সময়ে কোন কথাগুলি অবশ্যই মাথায় রাখবেন?
১) শ্বাস-প্রশ্বাস: ঠিক মতো শ্বাস নেওয়া ও পুরোপুরি নিঃশ্বাস ছাড়ার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ফিট থাকার মন্ত্র। টেনে শ্বাস নিলে অনেকটা অক্সিজেন শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে, ফলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। এই ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও কখন শ্বাস নেবেন আর কখন নিঃশ্বাস ছাড়বেন সেটি কিন্তু ভীষণ জরুরি। সঠিক উপায়ে শ্বাস নিলে তবেই মিলবে সুফল।
২) নিয়ন্ত্রণ: অনেক সময়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে পেশি উত্তোলন করা হয়। ফলে নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ।
৩) মনোযোগ: এই ব্যায়ামের ক্ষেত্রে মনোযোগ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত চোট আঘাতের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই ব্যায়াম করা হয়। তাই মনোযোগ না দিলে এই ব্যায়াম করার সময় পেশিতে চোট পেতে পারেন।