কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট বলে বোঝানোর নয়। যিনি ভুক্তভোগী, তিনিই জানেন। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে খাবার মেপে খেতে হয়, তেলমশলা দেওয়া খাবার একেবারে বাদ দিতে হয়। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যত বেশি খাওয়া যাবে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া ততই সহজ হবে। সেই সঙ্গে বেশি করে জল খাওয়ারও পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে ওষুধ খেয়ে হোক বা ঘরোয়া টোটকা মেনে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলতে হয়। ব্রিটিশ ডায়েটেটিক অ্যাসোসিয়েশন ডায়েট সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা দিয়েছে যা মেনে চললে কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে দাবি করা হয়েছে।
কিংস কলেজ লন্ডনের চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা মিলে নির্দেশিকাটি তৈরি করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট কমাতে রোজকার খাওয়াদাওয়ায় প্রয়োজনীয় বদল আনতেই হবে। রোজ যা যা খাচ্ছেন তা যথাযথ নয়। বরং কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে খেতে হবে কিছু বিশেষ খাবার। কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি অন্যতম কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। তবে শুধু বাইরের খাবার খাওয়া বা জল কম খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়, তা নয়। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়ার ফলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অনেকেই ব্যথানাশক বিভিন্ন ওষুধ খান। অবসাদ কমানোর ওষুধও খান। সে সব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্ট কমাতে হলে হজমপ্রক্রিয়াকে আগে ঠিকমতো চালনা করতে হবে। তার জন্যই প্রয়োজন সঠিক ডায়েট।
কেমন হবে সেই ডায়েট?
১) সারা দিনে অন্তত ৩০ গ্রামের মতো ফাইবার খেতেই হবে।
২) দিনে অন্তত ২ লিটার জল পান করতেই হবে।
৩) ২-৩টি কিউই ফল সারা দিনে খেলে ভাল। এই ফলে এত রকম খনিজ উপাদান ও ভিটামিন রয়েছে যা বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি করে, হজমপ্রক্রিয়াকে ঠিকমতো চালনা করতে পারে। তবে কিউই সহজলভ্য না হলে, সে জায়গায় কিশমিশও চলতে পারে।
আরও পড়ুন:
৪) কোষ্ঠকাঠিন্যে খুব ভাল কাজ দেয় প্রোবায়োটিক। তার জন্য দই খাওয়া যেতে পারে। তবে দইয়ের সঙ্গে মেশাতে হবে তিসির বীজ। তিসি বা ফ্ল্যাক্সসিড হল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। এ ছাড়া তিসির বীজে রয়েছে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড। তিসি ফাইবার সমৃদ্ধ। এই সমস্ত উপাদান বিপাকক্রিয়ার হার ঠিক রাখে।
কী ভাবে খাবেন?
জলখাবার
ওট্মিল, কিনোয়ার পরিজ়, অথবা ডালিয়ার খিচুড়ি, সঙ্গে নানা রকম বাদাম ও বীজ, বেরির বদলে বেদানা খেতে পারেন।
দুপুরের খাওয়া
ব্রাউন রাইস, ডাল, নানা রকম মরসুমি সব্জি দিয়ে কমমশলায় রাঁধা কোনও তরকারি। সব্জি সেদ্ধ খেতে পারলে আরও ভাল হয়।
আরও পড়ুন:
বিকেলের স্ন্যাক্স
দুটো কিউই, সঙ্গে বাদাম। কিউই না পেলে কিশমিশ ও শুকনো ডুমুরও খেতে পারেন।
রাতের খাওয়া
মাল্টিগ্রেন আটার রুটি অথবা ওট্সের চিল্লা, কম তেলে রান্না সব্জি ও একবাটি দই।
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে খাওয়া শুরু করলে সপ্তাহ দুয়েক পর থেকেই উপকার পেতে শুরু করবেন। তবে এর সঙ্গে জ়াঙ্ক ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি দেওয়া পানীয়, মিষ্টি খাওয়া একেবারেই বন্ধ করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানে লাগাম টানতে হবে।