মস্তিষ্কের টিউমারের অস্ত্রোপচারের নাম শুনলেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় হয়। খুলি ফুটো করে অস্ত্রোপচার করার পদ্ধতি যথেষ্টই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে রোগীর প্রাণসংশয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে বর্তমানে টিউমার অস্ত্রোপচারের নানা রকম পদ্ধতি এসে গিয়েছে, যাতে কাটাছেঁড়া করার দরকার পড়ে না। তবে সেগুলির বেশির ভাগই শরীরের নানা জায়গায় হওয়া টিউমার। মস্তিষ্কের টিউমার নির্মূল করতে হলে যে ক’টি থেরাপি আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও কার্যকরী পদ্ধতি এসে গিয়েছে দেশে, যার নাম ‘ফোকাস আলট্রাসাউন্ড থেরাপি’(এফইউএস)।
উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গের সাহায্যে মস্তিষ্কের ভিতরে গজিয়ে ওঠা টিউমার নির্মূল করে ফেলা যায় এই থেরাপিতে। এর জন্য খুলিতে কাটাছেঁড়া করার দরকার পড়ে না। এই ধরনের অস্ত্রোপচারকে বলে ‘নন-ইনভেসিভ’ রেডিয়োসার্জারি, যা এখন এ দেশেও হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে ‘ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড থেরাপি’-র কার্যকারিতার কথা বলেছেন গবেষকেরা। জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ পাঠানো হয় রোগীর মস্তিষ্কে। সেই শব্দতরঙ্গ কেবলমাত্র টিউমার কোষগুলির উপরেই আঘাত হানে ও কোষের অনিয়মিত বিভাজন বন্ধ করে দিতে পারে। কী ভাবে তা সম্ভব? এই প্রসঙ্গে স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অনিমেষ কর জানাচ্ছেন, আলট্রাসাউন্ড থেরাপির বৈশিষ্ট্য হল উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ পাঠিয়ে যে জায়গাটিতে আঘাত হানা হয়, সেখানকার কোষ খুব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই জায়গায় যে তাপ তৈরি হয়, তা টিউমার কোষগুলিকে নষ্ট করে দেয়। যদি টিউমার কোষ ছোট হয়, তা হলেও এই পদ্ধতিতে আশপাশের সুস্থ কোষগুলিকে আঘাত না করে শুধুমাত্র টিউমার কোষকে ধ্বংস করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:
আরও একটি থেরাপি রয়েছে, যার নাম ‘গামা নাইফ’। এই পদ্ধতিতে বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট— দু’রকম টিউমারই নির্মূল করা সম্ভব। ছুরির ফলার মতো গামা রশ্মি পাঠিয়ে টিউমার কোষ ধ্বংস করাই এর লক্ষ্য। এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রোগী তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
দেশে ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা গামা নাইফ থেরাপির খরচ বেশি। হাসপাতাল অনুযায়ী তা নির্ভর করে। তবে সাধারণত আড়াই থেকে সাত লক্ষ টাকার মতো খরচ হতে পারে।