পান্তা হোক বা স্যালাড, গ্রীষ্মে রোজ কাঁচা পেঁয়াজেই রসনাতৃপ্তি! এর ফলে শরীরে কী প্রভাব পড়ে

গ্রীষ্মে স্যালাড হিসেবে হোক বা পান্তা ভাতের সঙ্গী, রুটির সঙ্গে হোক বা রায়তা হিসেবে, পাতে কাঁচা পেঁয়াজ পড়লে যেন রসনাতৃপ্তি বেড়ে যায়। এবং গরমের সময়ে কাঁচা পেঁয়াজ দেওয়া পদের চল খানিক বেশি। কিন্তু গরমের সময়ে রোজ কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া কি ভাল না কি নয়, কী প্রভাব পড়ে শরীরে?

পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ কী কী?

পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার যৌগ এবং কোয়ারসেটিন থাকে, থাকে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও। যা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজে থাকা সালফার যৌগগুলিতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। তা ছাড়া এগুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। এ ছাড়াও রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক যৌগ এবং ভিটামিন সি।

গরমের সময়ে পেঁয়াজের উপকারিতা রয়েছে?

১. হাঁসফাঁস করা গরমে দেহে জলের ঘাটতি মেটাতে এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। ফলে হাইড্রেশনে বড় অবদান রয়েছে পেঁয়াজের। এ ছাড়াও, পটাশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট সরবরাহ করে পেঁয়াজ, শরীরে তরলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে যার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রোজের খাদ্যতালিকায় পেঁয়াজের সংযোজন ঘটলে শরীরের হাইড্রেশন বজায় থাকে এবং গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে যে ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায়, তার ভারসাম্য বজায় থাকে।

২. পেঁয়াজের মধ্যে শীতলীকরণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে এবং তাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। কাঁচা বা হালকা রান্না করে খেলে পেঁয়াজ কোয়ারসেটিন এবং সালফার যৌগ নিঃসরণ করে। আর সেটিই শরীরকে ঠান্ডা করে। এই যৌগগুলির উপস্থিতির কারণেই বাষ্পীভবনের মাধ্যমে, অর্থাৎ ঘাম বার হয়ে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসে।

৩. গ্রীষ্মের উচ্চ তাপমাত্রা দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে কোষের ক্ষতি হয়, প্রদাহজনিত সমস্যা বাড়তে থাকে। পেঁয়াজে যে হেতু অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক যৌগ এবং ভিটামিন সি রয়েছে, সেগুলি ফ্রি র‍্যাডিকালকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমতে শুরু করে। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে গ্রীষ্মের উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত অতিবেগনি রশ্মি এবং পরিবেশের বিষাক্ত পদার্থের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট।

৪. গরমের সময়ে বদহজমের সমস্যা দেখা যায় ঘরে ঘরে। উচ্চ তাপমাত্রা হজম এবং খিদেবোধে ব্যাঘাত ঘটায়। ফাইবার, প্রিবায়োটিক এবং পাচনে সাহায্যকারী এনজ়াইম থাকে পেঁয়াজে, ফলে পাচনক্রিয়া উন্নত হয়। পেঁয়াজের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে এবং অন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারে।

তাই গরমের সময়ে পান্তা ভাত খেলে কাঁচা পেঁয়াজ রাখুন নিশ্চিন্তে। স্যালাড বা রায়তায় পেঁয়াজ দিয়ে আরও সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর করে তুলুন। তবে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকলে, ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম এবং অ্যালার্জির রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত। রোজ পাতে কাঁচা পেঁয়াজ থাকবে কি না, সে বিষয়ে বিশদে জেনে নেওয়া দরকার চিকিৎসকের থেকে।

(এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। রোজ পাতে কাঁচা পেঁয়াজ থাকতে পারে কি না, সে বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।)