Advertisement
E-Paper

নির্দিষ্ট ঘণ্টার বেশি কাজ করার ফলে মস্তিষ্কে আশ্চর্য বদল! কোন ধরনের কর্মক্ষেত্রে প্রভাব বেশি জানেন?

দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, যাঁরা খুব বেশি পরিশ্রম করেন, তাঁদের মস্তিষ্কের কিছু অংশে স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৫ ২০:১৪
Working long hours can have effect on brain functions and mental health

অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ব্যক্তির মস্তিষ্ক এবং মানসিক সুস্থতার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। ছবি: সংগৃহীত।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় কর্মক্ষেত্রে। সারা দিন পর শরীরে ক্লান্তি নেমে আসে। নিজের জন্য সময় বার করা দূরস্ত, ঘুমের অভাব দেখা দেয়। কিন্তু জানেন কি, শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মস্তিষ্কে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে অতিরিক্ত খাটনি? আপনি কত ঘণ্টা খাটেন, তার উপর নির্ভর করছে আপনার মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন। নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মস্তিষ্কের যে অংশগুলি দায়ী, সেখানেই বদলগুলি দেখা গিয়েছে।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘অক্যুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন’-এর জার্নালে। অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ব্যক্তির মস্তিষ্ক এবং মানসিক সুস্থতার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, যাঁরা খুব বেশি পরিশ্রম করেন, তাঁদের মস্তিষ্কের কিছু অংশে স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। যে অংশগুলি সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং অনুভূতি-আবেগের সঙ্গে বোঝাপড়া করায় সাহায্য করতে পারে।

১১০ জন কর্মীকে নিয়ে গবেষণা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক।

১১০ জন কর্মীকে নিয়ে গবেষণা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক। ছবি: সংগৃহীত।

মোট ১১০ জন কর্মীকে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক। সকলের মস্তিষ্কের স্ক্যান রিপোর্ট তুলনা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩২ জন প্রতি সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ৭৮ জন স্বাভাবিক ওয়ার্কিং আওয়ারে কাজ করতেন। সেখানেই দেখা গিয়েছে, যাঁরা বেশি সময় কাজ করেন, তাঁদের মস্তিষ্কের কিছু অংশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। মনোযোগের অভাব, আবেগনিয়ন্ত্রণ, স্মৃতিশক্তি এবং সমস্যার সমাধানের বিষয়ে প্রভাব পড়েছে। মিডল ফ্রন্টাল জাইরাস মস্তিষ্কের একটি অংশ, যা স্মৃতি এবং ভাষা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। সেই অংশে সবচেয়ে বেশি বদল লক্ষ করা গিয়েছে। এ ছাড়াও সুপিরিয়র ফ্রন্টাল জাইরাসে প্রভাব পড়েছে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিকল্পনা করায় সাহায্য করে। আর প্রভাব পড়েছে ইনসুলা অংশে, যেটি আবেগের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে এবং নিজের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকার বিষয়ে সাহায্য করে।

এমনিতে আগেও বহু গবেষণায় এটি লক্ষ করা গিয়েছে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও তৈরি হয়। যদিও এখনও স্পষ্ট নয় যে, এই পরিবর্তনগুলি আদৌ ক্ষতিকারক না কি অতিরিক্ত কাজের চাপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পন্থা। তবে অবশ্যই দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্তি আসে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত খাটনির কারণে প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এই গবেষণার ফলে স্পষ্ট হল, কী ভাবে অতিরিক্ত কাজের চাপ নীরবে মস্তিষ্কের গঠন বদলে ফেলতে পারে।

তবে একই সঙ্গে গবেষকেরা জানিয়েছেন, এটি একেবারেই ছোট একটি গবেষণা। এখান থেকে এ কথা প্রমাণ হয় না যে মস্তিষ্কের এই বদল বেশি ক্ষণ কাজ করার কারণেই হয়েছে। কাজের অভ্যাস মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, তা পুরোপুরি বোঝার জন্য এই গবেষণার সাহায্য নিয়ে কাজ হতে পারে পরবর্তী কালে।

গবেষণার লেখকেরা বিভিন্নসংস্থা এবং মালিকদের পরামর্শ দিয়েছেন, যেন ওয়ার্কিং আওয়ার কমানোর বিষয়ে ভেবে দেখেন তাঁরা। কাজ আর ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে দাবি তাঁদের।

Overworked Overwork problems Work hour Mental Health Healthy Lifestyle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy