রান্নায় দেওয়া নুন, চিনি, শিশুর জন্য বাজার থেকে কেনা দুধ, এমনকি পানীয় জলেও মিশে থাকতে পারে প্লাস্টিকের কণা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায় সে প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি ইটালির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দাবি করেছেন, প্যাকেটের বা প্লাস্টিকের বোতলে যে দুধ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মিশে রয়েছে হাজার হাজার প্লাস্টিক কণা। এমনকি তাজা ভেবে যে প্যাকেটজাত চিজ় কিনে আনছেন বাড়িতে, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে প্লাস্টিকের উপস্থিতি। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রেও এমনই দাবি করা হয়েছে।
খাবারে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে। মানুষের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার পক্ষে যা খুবই বিপজ্জনক। কিছু দিন আগেই, ভারতের খাদ্যপণ্যের গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা এফএসএসএআই জানিয়েছিল, নুন-চিনি ও কয়েক রকম মশলার প্যাকেটে পাওয়া গিয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা বা ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’। এমনকি যে প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খাওয়া হয়, তাতেও নাকি মিশে থাকে লক্ষ লক্ষ অণু-প্লাস্টিক। এখন দুধ, চিজ় ও অন্যান্য কিছু দুগ্ধজাত পণ্যেও অণু-প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
ইটালির গবেষকেরা সেখানকার বিভিন্ন দোকানে পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রতি কিলোগ্রাম প্যাকেটজাত চিজ়ে প্রায় ১৮৫৭ প্লাস্টিকের কণা মিশে যাকে, প্যাকেট দুধের প্রতি লিটারে কম করেও ১২৮০ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা পাওয়া গিয়েছে। এই সব দুধ ও চিজ় বিশ্বের নানা জায়গায় রফতানি হয়। তাই সকলকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকেরা।
তিন ধরনের প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গিয়েছে দুগ্ধজাত পণ্যে— পলিইথিলিন টেট্রাফ্যালেট (পিইটি), পলিইথিলিন ও পলিপ্রপেলিন। প্লাস্টিকের প্যাকেট ও বোতলে পলিইথিলিন ও পলিপ্রপেলিন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এগুলি থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার যা ফুড প্যাকেজিংয়ের সময়ে কাজে লাগে। এগুলি থেকে সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা বার হয়ে খাবারে মিশতে থাকে। এমনও দেখা গিয়েছে, প্লাস্টিকের একটি বোতল থেকে লক্ষ লক্ষ প্লাস্টিকের কণা বার হতে পারে। সেগুলি দিনের পর দিন রক্তে মিশতে থাকলে তা বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। প্লাস্টিক রক্তে মিশলে ইনসুলিনের ক্ষরণে প্রভাব ফেলে। যা পরবর্তী সময়ে ডায়াবিটিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে। শুধু তা-ই নয়, প্লাস্টিক শরীরে হরমোনের ভারসাম্যও বদলে দিতে পারে। এই প্লাস্টিক কণা গিয়ে জমা হয় মস্তিষ্কেও, যা ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া লিভারের সমস্যা, হার্টের রোগ, কিডনির জটিল অসুখ হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাবে।