ক্যানসার হওয়ার পরে অস্ত্রোপচার করালেন। নানা ধরনের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থও হয়ে উঠলেন। অথচ এত কিছুর পরেও ক্ষীণ আশঙ্কা থেকে গেল সেই ক্যানসার আবার ফিরে আসার! যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় রেকারেন্স। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে এই রেকারেন্সের পরে চিকিৎসা করিয়েও রোগীকে আর ফেরানো যায়নি। তবে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ক্যানসারের ফিরে আসার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। আর সেই ওষুধ রয়েছে সাধারণের হাতেই। এমনকি, তার জন্য কানাকড়িও খরচ করতে হবে না!
ওই গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে। শুধু তা-ই নয়, ওই গবেষণালব্ধ ফলের কথা ঘোষণা করা হয়েছে শিকাগোয় আয়োজিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যানসার সম্মেলন ‘আমেরিকান সোসাইটি অফ ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজি অ্যান্যুয়াল মিটিং’-এও।
কী জানা গিয়েছে গবেষণায়?
গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে, ক্যানসারের রোগীদের শরীরে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি অনেকটাই কমতে পারে যদি তাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে শরীরচর্চাই হল ক্যানসারের রোগীদের দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার ওষুধ।
কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত গবেষকেরা?
গবেষণাটি করেছেন কানাডা, আমেরিকা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা। ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবার্টা, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, বেল ফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়-সহ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গবেষণাটি করা হয়েছিল আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কানাডা এবং ইজ়রায়েলের কোলন ক্যানসারের রোগীদের উপর। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাঁদের ক্যানসারের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি এবং তদপরবর্তী সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াতে নজর রাখা হয়। এঁদের মধ্যে কিছু রোগীকে নিয়মিত নির্দিষ্ট কিছু শরীরচর্চা করানো হয়েছিল। বাকিদের করানো হয়নি। দেখা যায় যাঁরা নিয়মিত ভাবে শরীরচর্চা করেছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি বাকিদের থেকে ২৮ শতাংশ কমেছে। এমনকি, ক্যানসার থেকে মৃত্যুর আশঙ্কাও কমেছে ৩৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
শরীরচর্চা কী ভাবে সাহায্য করে?
১। যে কোনও বড় অস্ত্রোপচার বা দীর্ঘ মেয়াদী রোগের চিকিৎসার পরে রোগীকে আবার আগের মতো সুস্থ করে তুলতে শরীরচর্চা করতে বলেন চিকিৎসকেরা। ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পরেও নানা ধরনের ব্যায়াম করতে বলা হয় রোগীদের। নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রটিতে প্রতিবেদক লিখেছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে তা কোষের বিভাজন এবং বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতেই পারে। উল্লেখ্য, ক্যানসার যখন কারও শরীরে বাসা বাধে, তখন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে থাকে। গবেষকেরা মনে করছেন, শরীরচর্চা তা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
২। এ ছাড়া, শরীরচর্চা করলে শরীরে বিপাকের হার বাড়ে, বাড়তি মেদ কমায়, যা টিউমার তৈরি বা তার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
৩। বহু গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, শরীরে ইনসুলিনের বর্ধিত মাত্রা স্তন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, কিডনির ক্যানসার এবং মলাশয় বা কোলনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। শরীরচর্চা করলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ইনসুলিনের মাত্রাও।