দুর্ঘটনার খবরের রেশ, ক্লস্ট্রোফোবিয়া অর্থাৎ বদ্ধ জায়গায় থাকা নিয়ে আতঙ্ক, ককপিট নিয়ে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকা, ইত্যাদি বিবিধ কারণে উড়ান নিয়ে ভয় তৈরি হয়। অনেকে ওষুধ নিয়ে বা খেয়ে বিমানে ওঠেন। কিন্তু ওষুধ ছাড়াও ছোটখাটো কৌশলে আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঠিক যেমন, অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার পর বিমানে ওঠা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই জানা যাবে, স্বল্পদৈর্ঘ্যের রাস্তার জন্য উড়ানের বদলে ট্রেনের দিকে ঝুঁকছেন যাত্রীদের একাংশ। যদিও একই ভাবে করমণ্ডল ট্রেন দুর্ঘটনার পর ট্রেন নিয়ে এমন ভয় দেখা দিয়েছিল মানুষের মনে। কিন্তু এই মুহূর্তে অনেকে প্রতিজ্ঞা করছেন, সারা জীবনে কোনও দিন বিমানে উঠবেন না। কারও আবার আগে থেকেই বিমান নিয়ে ভয় রয়েছে। টার্বুলেন্স বা টেকঅফ অথবা ল্যান্ডিংয়ের সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন ধারণা রয়েছে অনেকের। তা ছাড়া ক্লস্ট্রোফোবিয়া অর্থাৎ বদ্ধ জায়গায় থাকা নিয়ে আতঙ্কের মতো সমস্যা থাকলেও অনেকে বিমানে উঠতে পারেন না। অথবা উঠলেও উদ্বেগের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কখনও কখনও বিমানে উঠে উদ্বেগ হতে পারে, এ কথা ভেবে ভেবেই উদ্বেগ শুরু হয়ে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পর এই ভয় আরও জাঁকিয়ে বসেছে অনেকের মধ্যে। কিন্তু ভয়ে ভয়ে তো জীবন কাটানো যায় না। হঠাৎ দূরে কোথাও যাত্রা করতে হতেই পারে। ট্রেনযাত্রার সময় হয়তো পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে কী করা যায়? নিজেকেই উপায় খুঁজে যুঝে নিতে হবে। নয়তো এই ভয় পঙ্গু করে রাখার ক্ষমতা রাখে। 'দ্য ল্যানসেট' জার্নালে উল্লেখ করা হয়েছিল, করোনা অতিমারির আগে উদ্বেগজনিত রোগে ভুগছিলেন ৪.৪ কোটি ভারতীয়। কোভিডের পর বিশ্বের নিরিখে উদ্বেগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। আর তা নাকি সফরের ক্ষেত্রেই বেশি হয়েছে।
সাম্প্রতিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর বিমানে ওঠা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ছবি: এআই।
বিমানে ওঠার আগে কী কী করবেন?
· বিমানে ওঠার আগে মনে করে কিছু খেয়ে নিতে হবে। দেখবেন, আপনার পেট যেন অর্ধেক বা চার ভাগের তিন ভাগ ভরা থাকে। পুরো ভরা থাকলে বমি ভাব আসতে পারে, খালি থাকলে গ্যাসের চোট বুকে ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যাগুলি উৎকণ্ঠার মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে।
· ওঠার আগে চোখ বন্ধ করে বিমানসফর নিয়ে সুন্দর, উপভোগ্য দৃশ্য কল্পনা করুন।
বিমানে উঠে উদ্বেগে ভুগলে কী করবেন?
· নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন সেই মুহূর্তে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। ‘মাইন্ডফুলনেস’ অনুশীলন করা শিখে নিলেও উপকার মিলবে। অথবা কোনও এক প্রকার ধ্যান করলেও আতঙ্ক থেকে মন সরে যেতে পারে।
· ‘বক্স ব্রিদিং’-এর নিয়মও মেনে দেখতে পারেন। নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে কয়েক মুহূর্তে আটকে রাখুন। তার পর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে হাওয়া ছেড়ে দিন। তিনটি ধাপই করতে হবে ১ থেকে ৪ গুনে গুনে। যত বার ইচ্ছে, করতে থাকুন।
আরও পড়ুন:
· বিমানে উঠেই অল্প অল্প করে জল দিয়ে গলা ভেজান। অনেক সময়ে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। সে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জল খেতে থাকুন অল্প করে। এর ফলে শরীর হাই়ড্রেটেড থাকে। অসুস্থ লাগার ঝুঁকি কমে যায়। শরীর সুস্থ থাকলে উদ্বেগের সমস্যা একটু কমে।
· বিমানসেবিকা বা বিমানসেবকদের সঙ্গে কথা বলে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন নিজের ভয়ের কথা। বিমানকর্মীরা এ বিষয়ে সাধারণত সহানুভূতিশীল হন। তাঁরা এসে এসে আপনাকে জল দিয়ে যাবেন, অথবা সুস্থ আছেন কি না, সে দিকে নজর রাখবেন। এতে আপনার মনে হবে, আপনি একা নন। সাহায্যের জন্য সঙ্গে রয়েছেন অনেকে।
· ব্যাগের মধ্যে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ছবির পর্দায় দেখা যায় বটে। কিন্তু তাতে ক্ষতি বেশি হয়।
· কানে রাখুন পছন্দের গান, হাতে রাখুন পছন্দের বই। নানা ভাবে নিজের মনকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।
· চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে অনেকেই ওষুধ সঙ্গে রাখেন। সে ওষুধ হাতে রেখে দিলেও কাজ হতে পারে। আতঙ্ক সৃষ্টি হলে ওষুধ খেয়ে ঠিক হয়ে যাবেন, এটা ভেবেও অনেকে সুস্থ বোধ করেন, বা আতঙ্ক তৈরিই হয় না শেষ পর্যন্ত।