রজোনিবৃত্তির পর্যায়টা সহজ নয়। এক দিকে যেমন শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, তেমনই বদলে যায় মনমেজাজ। সংসার, কাজকর্ম, ছেলেমেয়ের অজস্র ঝড়ঝাপটা সামলে জীবনের মধ্যপর্বে এসে যখন একটু থিতু হওয়ার সময়, তখনই রজোনিবৃত্তি নতুন সঙ্কট ডেকে আনে। শরীর ও মনের নানা পরিবর্তনের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে সংসার ও পেশা সামলানো যথেষ্টই কঠিন হয়ে পড়ে। চল্লিশোর্ধ্ব অনেক মহিলাই তাঁদের রজোনিবৃত্তির পর্যায়ে এসে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন অহরহ। সঙ্কোচের কারণে তা মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না অনেকে। ফলে লড়াইটা চলে নীরবেই। প্রত্যেকের জন্য অভিজ্ঞতা এক রকম হয় না। তাই এ সময়ে শরীরচর্চা করলে দেহ ও মন, দুই-ই ভাল থাকবে। খুব সহজেই এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যাবে।
সামনেই পুজো। তার আগেই কয়েক ধরনের ব্যায়াম শুরু করলে শরীর ভাল থাকবে। মনের বিষণ্ণতাও কাটবে।
কোন ধরনের ব্যায়াম এ সময়ে করবেন?
রজোনিবৃত্তির কাছাকাছি সময়ে বেশির ভাগ মহিলার ওজন বেড়ে যেতে দেখা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। হাড় ভাল রাখে। রজোনিবৃত্তি পর্ব পেরিয়ে গেলেই মহিলাদের মধ্যে অস্টিয়োপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই হাড় মজবুত রাখার জন্যও ব্যায়াম জরুরি। সেই সঙ্গেই এমন কিছু ব্যায়াম করতে হবে, যা মন ভাল রাখে। এই পর্বে হরমোনের ওঠানামা চলতে থাকে। তাই ঘন ঘন বদলে যায় মেজাজ। ব্যায়ামেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কোন কোন ব্যায়াম এ সময়ে মহিলারা করতে পারেন, তা শিখিয়ে দিলেন ফিটনেস প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য।
ব্যায়ামের কিছু পদ্ধতি
কাফ রেজ়
কাফ মাসল তৈরির জন্য এই এক্সারসাইজ় গুরুত্বপূর্ণ। হাতে ওজন নিয়েও এই ব্যায়াম করা যায়। দেওয়ালের ধারে দাঁড়িয়ে, পায়ে ভর দিয়ে গোড়ালি ওঠাতে এবং নামাতে হবে। রোজ ২০টি করে ২ সেট করতে হবে।
আরও পড়ুন:
স্ট্রেচিং
বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে শরীরের নমনীয়তা চলে যায়। তাই এ সময়ে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ় করলে শরীরের নমনীয়তা বাড়ে। স্ট্রেচিংয়ের নানা ধরন আছে, যেমন—
ক্যাট-কাউ পোজ়: বিদেশে এই ব্যায়ামের গালভরা নাম ক্যাট-কাউ পোজ়। এ দেশে এই ব্যায়ামটি যোগাসনের একটি বিশেষ পদ্ধতি চক্রবক্রাসন। এতে পিঠে ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, মানসিক চাপ কমবে। প্রথমে ম্যাটের উপর টান টান হয়ে শুয়ে পড়ুন। পায়ের পাতা যেন মাটি স্পর্শ করে থাকে। এ বার পা এবং হাতের পাতার উপর ভর দিয়ে পুরো শরীরটাকে মাটি থেকে শূন্যে তুলে নিন। মাথা যেন মাটি স্পর্শ করে থাকে। মাটি থেকে মাথা তুলে নেওয়ার পর গোটা দেহের ভার থাকবে হাত এবং পায়ের পাতায়। শরীরের ভার বহন করা এবং ভারসাম্য রাখার প্রক্রিয়াটি আগে সঠিক ভাবে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।
চেস্ট ওপেনার স্ট্রেচ: চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। কাঁধ সোজা রেখে দুই হাত পিঠের দিকে নিয়ে যান। এ বার পিঠের দিকে এক হাত দিয়ে অন্য হাত ধরুন। পিঠ টানটান রেখে দুই হাত যতটা সম্ভব পিছনের দিকে টানুন। বুক প্রশস্ত হবে, ওই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন। গভীর ভাবে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে।
ফরোয়ার্ড ফোল্ড: সোজা হয়ে দাঁড়ান। তার পর কোমর ভেঙে দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। মাথা যতটা সম্ভব নীচের দিকে ঝোঁকান। প্রথম প্রথম পায়ের পাতা স্পর্শ করতে সমস্যা হবে, ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
স্টেপ আপ
হাঁটুতে কোনও বড় ধরনের অসুখ না থাকলে, অর্থাৎ সিঁড়ি ভাঙা একেবারে বারণ না হলে সিঁড়ি ভাঙার অভ্যাস কিন্তু বজায় রাখতে হবে। হাতে দু’লিটারের জলভর্তি বোতল নিয়ে সিঁড়ির ধাপের সামনে প্রথমে বাঁ পা তুলে উঠুন। তার পর ওই পা নামিয়ে ডান পা তুলুন ও নামান। দু’পা মিলিয়ে মোট ২৪ বার ওঠানামা করতে হবে।
পুশ আপ
পুশ-আপ মূলত বুক, কাঁধ, ট্রাইসেপস এবং মূল পেশিগুলির জন্য করা হয়। শরীরের উপরিভাগের শক্তি বৃদ্ধি করতে এই ব্যায়াম বেশ উপকারী। হাত তালু আর পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে শরীরকে এক বার তুলুন আর আর এক বার নামান। ২০টি করে তিনটি সেট করতে পারেন।
বেঞ্চ স্টেপ আপ
এই ব্যায়াম করতে পারেন নিয়মিত। দুই হাতে দু'টি ডাম্বল নিয়ে একটি ছোট বেঞ্চ বা টুলের সামনে দাঁড়ান। এক পা বেঞ্চে রেখে সোজা হয়ে বেঞ্চের উপর দাঁড়ান। মনে রাখবেন, পুরো শরীরের ভর যেন এক পায়ে পড়ে, অন্য পা ভেসে থাকবে। এ ভাবে তিন সেকেন্ড এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। আবার নেমে গিয়ে পুনরায় অন্য পায়ে ভর দিয়ে করুন। প্রতিটি পায়ে ১০ বার করে মোট ২০ বার এই ব্যায়ামটি করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি
রজোনিবৃত্তি বা ‘মেনোপজ়’-এরও কিন্তু তিনটি পর্যায় রয়েছে। ‘পেরিমেনোপজ়’, ‘মেনোপজ়’ এবং ‘পোস্টমেনোপজ়’। প্রতিটি পর্বেই মহিলাদের নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই সময়ে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য শুরু হয়। ফলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়। অনেকেই বলেন, রাতে শোয়ার পর দরদর করে ঘাম হয়, যখন তখন শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে ব্যথাও হয়। ফলে সকলের জন্য সব ধরনের ব্যায়াম সঠিক হবে না। সে কারণে যে কোনও ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।