সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার অভ্যাস এখন অনেকেরই নেই। অফিসে বা কাজের জায়গায় হোক অথবা বহুতল আবাসনে, লিফ্ট ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত বেশির ভাগ মানুষই। সিঁড়ি ভাঙতে গেলেই হাঁপ ধরে যায়। অভ্যাস না থাকা এক রকম, কিন্তু যদি দেখেন অল্প সিঁড়ি ভাঙলেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, বুক ধড়ফড় করছে, তা হলে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সেই যদি এমন সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে বিষয়টি হেলাফেলা করার নয়। হতেই পারে তা হার্টের রোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আগে মনে করা হত, বয়স্কেরাই বুঝি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা অন্য। হার্টের যে কোনও অসুখ হানা দিতে পারে যে কোনও বয়সে। হৃদ্রোগ বাছবিচার করে আসে না। আর ইদানীং কালে কমবয়সিরাই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এর কারণই হল অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার অভাব। হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমারের মত, কম বয়সেই যদি সিঁড়ি ভাঙতে সমস্যা হয়, অল্প কয়েকটি ধাপ উঠেই বুক ধড়ফড় করে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তা হলে চেক আপ করিয়ে নিতে হবে। কারণ সেটি কার্ডিয়াক হাইপারট্রফির লক্ষণ হতে পারে।
হাইপারট্রফি কী?
হার্টের পেশি শক্ত ও পুরু হয়ে গেলে তখন রক্ত চলাচল বাধা পায়। সাধারণত হৃদ্পিণ্ডের বাম দিকের নিলয়ের দেওয়াল পুরু হয়ে যায়। এর ফলে হার্টকে পাম্প করতে অনেক বেশি চাপ দিতে হয়। একটা সময়ের পর থেকে হার্টের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে, হৃৎস্পন্দনের হারও অনিয়মিত হয়ে যায়। এতে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে।
আরও পড়ুন:
কারা সাবধান হবেন?
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সাবধান হতেই হবে। তার উপরে যদি রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হয়, তা হলে কার্ডিয়াক হাইপারট্রফির ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।
পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
অতিরিক্ত ওজনও হাইপারট্রফির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
হার্টের ধমনীতে সমস্যা থাকলেও এমন হয়। ধমনী যদি সরু হতে থাকে, তা হলে রক্ত চলাচল বাধা পেয়ে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ে।
সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাওয়া হাইপারট্রফির একটি লক্ষণ। এ ছাড়া যখন তখন শ্বাসকষ্ট, অল্প পরিশ্রম করলেই বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও এর উপসর্গের মধ্যেই পড়ে। হাইপারট্রফি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করিয়েই জানা যাবে। ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি, ইলেক্ট্রোকার্ডিয়োগ্রামের মতো পরীক্ষা করিয়ে রাখা ভাল। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রার মান বদলাতে হবে। পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা করা ও ধূমপান-মদ্যপানের নেশা কমাতে পারলেই সুরক্ষিত থাকা যাবে।