মাঝরাতে পিঠের নীচের অংশ প্রবল ব্যথা। চিকিৎসায় ধরা পড়ল কিডনিতে পাথর। দিন কয়েক গ্যাস-অম্বলে ভুগছিলেন রিমঝিম। আমল দেননি। স্ত্রী রোগ সংক্রান্ত চিকিৎসায় আলট্রা সনোগ্রাফি করতে গিয়ে দেখা গেল পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে।
কিডনি হোক বা পিত্তথলি অথবা গলব্লাডার—পাথর হওয়াটা যেন জলভাত হয়ে গিয়েছে। কখনও কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায়, কখনও আবার চট করে তা ধরা পড়ে না। কিডনিতে পাথর জমলে অনেক সময় ওষুধের মাধ্যমে তা ভেঙে বার করে দেওয়া যায়। যদি তা সম্ভব না হয় তা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচার ছাড়া বার করার উপায় থাকে না সাধারণত।
কিডনি এবং পিত্তথলিতে পাথরের তফাত কী?
কিডনি হল শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ যা ছাঁকনির কাজ করে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দেয় মূত্রের মাধ্যমে।মূত্রের বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় উপাদান, খনিজ জমে পাথর তৈরি হয়। ক্যালশিয়াম অক্সালেট, ক্যালশিয়াম ফসফেট, ইউরিক অ্যাসিড—এগুলি থাকে নেপথ্যে। কম জল খাওয়া, বাইরের ভাজাভুজি খাওয়ার প্রবণতা, বংশগত কারণ-সহ নানা কারণ থাকতে পারে এর পিছনে।
পিত্তথলি হল যকৃতের নীচের অংশে থাকা একটি প্রত্যঙ্গ। মূলত ফ্যাট বিপাকে সাহায্য করে পিত্তথলি নিঃসৃত পিত্তরস। পিত্তথলির পাথরের উপাদান হল কোলেস্টরল, বিলিরুবিন। অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে, অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পাথর পিত্তরস নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করলে ব্যথা হয়।
ছোটখাটো কোন লক্ষণে সতর্ক হওয়া দরকার?
কিডনিতে পাথর হোক বা পিত্তথলিতে পাথর— শুরু থেকেই যে সব লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা নয়। অনেক সময় ছোটখাটো বিষয় না বুঝে এড়িয়ে যান লোকে। এগুলি কিন্তু পাথর হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
· পিঠের অংশে, তলপেটের কোনও একটি দিকে ব্যথা করছে? হালকা ব্যথাও কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। শুরুতে এমন হলেও হঠাৎ করেই একদিন প্রবল ব্যথা শুরু হতে পারে। বিশেষত পিঠের দিকে, তলেপেটের বাম দিক বা ডান দিকে ব্যথা হলে এবং সেই ব্যথা এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরলে সতর্ক হতে হবে। এগুলি কিডনি স্টোনের লক্ষণ।
· অন্য দিকে, পিত্তথলিতে পাথর হলে ব্যথা হবে পেটের উপরের অংশে। সব সময় ব্যথা যে হবেই এমনটা নয়। বরং অম্বল-গ্যাস হতে পারে। খাওয়াদাওয়ার বেনিয়ম হলেই বমি, শরীর খারাপ হতে পারে।
· কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাবে সমস্যা হতে পারে। বদলে যেতে পারে মূত্রের রং। বিশেষত, পাথর যদি প্রস্রাব বেরোনোর পথে কোনও রকম বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পিঠের দিকে ব্যথার পাশাপাশি কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাবের সময় জ্বালা করতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাব পেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে বমি ভাবও দেখা যায়।
· পিত্তথলিতে পাথর হলে, একটু ভাজাভুজি খাওয়া হলেও প্রবল অম্বল-গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুরু হতে পারে বমি। বিশেষত, পাথর যদি পিত্তরস বেরোনোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
· কিডনিতে পাথর হলে যেমন মূত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, তেমনই পিত্তথলিতে পাথর হলে কখনও কখনও বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। গায়ের বর্ণ, প্রস্রাব হলুদ, চোখের সাদা অংশ হলুদ দেখালে সতর্ক হতে হবে এ ক্ষেত্রে।
অম্বল, গ্যাস, বমি, পেটব্যথার সমস্যা ঘন ঘন হলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।