Advertisement
E-Paper

মহিলা না পুরুষ, ব্যথায় বেশি কষ্ট পান কারা? আশ্চর্য তথ্য পেলেন বিজ্ঞানীরা

ব্যথাকে বাইরে থেকে না যায় দেখা, না যায় মাপা। ব্যথা কেমন ও কত গভীরে, তার আন্দাজ পাওয়া কঠিন। এক জনের কাছে যা ‘সাত’, তা হয়তো আর এক জনের কাছে ‘পাঁচ’।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০১
Why men and women feel pain differently, science has the answer

ব্যথায় বেশি কষ্ট পান কারা, মহিলা না পুরুষ? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দেহকোষের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদানগুলিকে অণুবীক্ষণের তলায় দেখে, তাদের কেটে এবং সেঁটে বিজ্ঞানীরা নানা দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময় উদ্ভাবন করছেন। কিন্তু ব্যথাকে বাইরে থেকে না যায় দেখা, না যায় মাপা। ব্যথা কেমন ও কত গভীরে, তার আন্দাজ পাওয়া কঠিন। এক জনের কাছে যা ‘সাত’, তা হয়তো আর এক জনের কাছে ‘পাঁচ’। এই সাত-পাঁচ ভাবনা থেকেই ব্যথায় কারা বেশি ব্যথিত, মহিলা না পুরুষ, তা খুঁজে বার করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ব্যথার তীব্রতার অনুভূতি অনেকটা নির্ধারিত হয় মানব শরীরের জিন দিয়ে। তবে এর সঙ্গে শরীরের গঠন, হরমোনের ওঠানামা, রোগ প্রতিরোধ শক্তি, শরীরে প্রদাহের মাত্রা, সব কিছুই নির্ভরশীল। এত কিছু বিষয় যদি একসঙ্গে ধরা হয়, তা হলে দেখা যাবে, ব্যথার ব্যাপারে পুরুষের চেয়ে মহিলারাই অনেক এগিয়ে। শারীরিক ব্যথায় পুরুষদের চেয়ে বেশি কষ্ট পান মহিলারাই। শৈশব থেকে কৈশোর পেরিয়ে বয়ঃসন্ধি, যৌবনের সময়কাল থেকে রজোনিবৃত্তি পর্ব অবধি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যথার ধরন ও তীব্রতা বিভিন্ন। পুরুষদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। কী রকম?

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে ব্যথার ধরন ও তার প্রকাশ নিয়ে লিখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ক্রনিক ব্যথা অর্থাৎ, যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে আছে, এমন যন্ত্রণা পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশি। বয়ঃসন্ধির আগের সময়টা অবধি ব্যথার তীব্রতায় মহিলা ও পুরুষের মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য থাকে না। আসল খেলা শুরু হয় বয়ঃসন্ধি পর্বের পর থেকে। মহিলারা ঋতুমতী হওয়ার পরের সময় থেকে হরমোনের ওঠানামা শুরু হয়। তখন ঋতুস্রাবজনিত ব্যথা, ঋতুকালীন চক্রের নানা পর্যায়ে ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি। মেয়েদের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনই শারীরবৃত্তীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই দুই হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন হরমোনের গোলমাল হলে তশরীরে প্রদাহ বাড়ে, প্রতিরোধ শক্তি কমে এবং ঋতুচক্রের নানা সমস্যায় ব্যথাবেদনা বাড়তে থাকে।

আবার ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা যখন থেকে কমতে শুরু করে, অর্থাৎ, চল্লিশের পর থেকে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা বাড়ে মহিলাদের। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগের প্রকোপ মহিলাদের শরীরেই বেশি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাতের ব্যথা এবং হজমজনিত সমস্যা বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)-এ মহিলারাই বেশি ভোগেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যথার উপসর্গ ২০ শতাংশেরও কম জনের মধ্যে দেখা যায়।

ব্যথার অনুভূতি কার কেমন, তাতেও এগিয়ে মেয়েরাই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের কোনও অংশে প্রদাহ হলে সেই বার্তা বা সঙ্কেত স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছয়। তখনই ব্যথার অনুভূতি হয়। এই পর্যায়টি হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সে ক্ষেত্রে মহিলারাই ভুক্তভোগী। তাই বলে পুরুষদের যে ব্যথার অনুভূতি কম, তা একেবারেই নয়। তবে তীব্রতা সম্পূর্ণ ভাবেই আলাদা। মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতা বেশি এবং তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি। জিন ও হরমোনগত তারতম্যই এর জন্য দায়ী। পুরুষের শরীরে টেস্টোরস্টেরন হরমোন ব্যথাবেদনা সারাতে বড় ভূমিকা নেয়। তাই অনেক সময়েই পুরুষদের শরীরে ক্রনিক ব্যথা সারাতে টেস্টোস্টেরন থেরাপিও করা হয়।

‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, মহিলা ও পুরুষদের শারীরিক গঠন আলাদা। হরমোনের ওঠানামার প্রক্রিয়াও আলাদা। তাই যে ব্যথানাশক ওষুধটি পুরুষের শরীরে ভাল কাজ করছে, তা মহিলাদের শরীরে কার্যকরী না-ও হতে পারে। মহিলা ও পুরুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধী কোষগুলির (ইমিউন কোষ) মধ্যেও পার্থক্য বিস্তর। মস্তিষ্কে এক প্রকার ইমিউন কোষ আছে, যার নাম ‘মাইক্রোগ্লিয়া’। এর কাজ হল মস্তিষ্কে প্রদাহ কমানো ও ব্যথা নাশ করা। পুরুষের শরীরে এই কোষটিই কাজ করে। কিন্তু মহিলাদের শরীরে এই কাজটিই করে টি-কোষ। আর টি-কোষের সংখ্যা যদি কম থাকে, তা হলে ব্যথা সারতেও দেরি হয়।

Pain Genetics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy