মাছ, মাংস, ডিম বাদ। মুসুর ডাল খাচ্ছেন তো? নিয়ম করে মুগ, অড়হর, বিউলির ডাল খেলেও বাদ পড়ে যায় মুসুর ডাল। অথচ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং প্রোটিনে ভরপুর ডালটি শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানোর জন্য একাই একশো। বিশেষত যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁদের প্রোটিন জাতীয় খাবারের ঘাটতি হতে পারে। সেই সমস্যার সমাধানের জন্য পাতে রাখা দরকার মুসুর ডাল। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এই ডাল খাওয়া কেন জরুরি?
প্রোটিন এবং আয়রনে ভরপুর: কিছু মানুষ যেমন আমিষ খান না, তেমনই কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত কোনও খাবারই মুখে তোলেন না। গরুর দুধ, তা থেকে তৈরি দই, ছানা পনিরেও আপত্তি তাঁদের। এঁদের বলা হয় ভিগান। নিরামিষ এবং ভিগানদের প্রোটিন এবং আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য মুসুর ডাল খাওয়া জরুরি। আমেরিকার কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম মুসুর ডালে ২৪.৪৪ গ্রাম প্রোটিন, ৬ মিলিগ্রাম আয়রন মেলে। এতে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা পেশি গঠনের জন্য খুব জরুরি। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য জরুরি। তা ছাড়া আয়রন ভিটামিন সি এবং ফোলেটের পুষ্টিগুণ শোষণেও সহায়ক।
প্রয়োজনীয় খনিজ: ভাল মানের ফাইবারে পরিপূর্ণ ডালটিতে ফ্যাটের মাত্রা বেশ কম। ফলে হার্টের রোগী বা যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁদের জন্যও এই ডাল খুব উপকারী। ১০০গ্রাম মুসুর ডালে ১১.১ গ্রাম ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে। ডালের ফাইবার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এতে মেলে ম্যাগনেশিয়াম এবং ফোলেট, যা হার্টের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য জরুরি। এতে থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন:
ফাইবার: ফাইবার থাকায় পেট ভরিয়ে রাখতেও সাহায্য করে মুসুর ডাল। তা ছাড়া, পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্যও ফাইবার জরুরি। ওজন বশে রাখতে গেলেও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলা হয়।
শর্করার মাত্রা: যে খাবার খেলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় না, সেই খাবার লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স– এর তালিকায় পড়ে। আমেরিকার কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী মুসুর ডালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ২৫-৩০ এর মধ্যে। ফলে প্রোটিন, ফাইবারে পরিপূর্ণ, অথচ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, এমন খাবারের তালিকাতেও মুসুর ডাল পড়ে। ডায়াবিটিস থাকলেও এই ডাল খাওয়া যায়।
ভাতের পাতে মুসুর ডাল খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে সর্বত্রই। তবে দৈনন্দিন খাবারে আরও নানা ভাবে মুসুর ডাল যোগ করা যায়।
স্যুপ: ভাত-রুটি বাদ দিয়ে নৈশ আহারে কিংবা প্রাতরাশে মুসুর ডালের স্যুপ রাখতে পারেন। পেঁয়াজ, রসুন, টম্যাটো এবং সব্জি দিয়ে ডাল হালকা নাড়িয়ে সেদ্ধ করে মিক্সারে ঘুরিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় স্যুপ।
মুসুর ডালের তড়কা: তড়কা সাধারণত বিভিন্ন রকম ডাল মিশিয়ে হয়। তবে শুধু খোসা-সহ মুসুর ডাল দিয়েও তড়কা করতে পারেন। ডাল সেদ্ধ করে তেলে শুকনো লঙ্কা, রসুন ফোড়ন দিন। পেঁয়াজকুচি, আদা, টম্যাটো দিয়ে ধনে, জিরেগুঁড়ো ভাল করে নাড়াচাড়া করে সেদ্ধ ডাল ঢেলে দিন। আরও কিছু ক্ষণ রান্না করলেই তৈরি হয়ে যাবে তড়কা।
মুসুর ডালের খিচুড়ি: নিরামিষ খিচুড়ি সাধারণত মুগডাল দিয়ে হয়। তবে নিরামিষভোজীরা মুগ-মুসুর মিশিয়ে কিংবা শুধু মুসুর ডাল দিয়েও খিচুড়ি বানিয়ে নিতে পারেন। এতেও পুষ্টিগুণ বাড়বে।