সর্বদল বৈঠকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। ছবি: পিটিআই।
অন্তরায় হতে পারে শীর্ষ আদালতের দু’বছর আগেকার রায়। কিন্তু বুধবার সর্বদল বৈঠকের পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে মরাঠা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণ চালু করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মরাঠা জনগোষ্ঠীকে কুনবি শ্রেণিভুক্ত হিসাবে ওসিবি তালিকায় সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হবে।’’ কিন্তু বর্তমান সংরক্ষণের সুবিধা প্রাপকদের উপর কোনও আঁচ আসবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সংরক্ষণের দাবিতে মরাঠা আন্দোলনের জেরে গত এক সপ্তাহ ধরে অশান্তি চলছে মহারাষ্ট্রে। মরাঠাওয়াড়া এবং পশ্চিম মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে একাধিক মন্ত্রী, বিধায়কের ঠিকানা। আন্দোলনের নেতা মনোজ জারঙ্গে পাটিলের অনশন কর্মসূচি বুধবার এক সপ্তাহ ছুঁয়েছে, মনোজ ঘোষণা করেছিলেন, সরকার সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা না-করলে বুধবার থেকে জলগ্রহণও বন্ধ করবেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি সর্বদল বৈঠকের আয়োজন করেছিল শিবসেনা (শিন্ডে)-বিজেপি-এনসিপি (অজিত) জোট সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীস হাজির ছিলেন সর্বদল বৈঠকে। ছিলেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, উদ্বব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা অনিল পরব এবং বিধানসভা এবং বিধান পরিষদের বিরোধী দলনেতারা। তবে অসুস্থতার কারণে আর এক উপমুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপির দলছুট গোষ্ঠীর নেতা অজিত পওয়ার হাজির ছিলেন না বৈঠকে। অন্য দিকে, উদ্ধবকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে তাঁর গোষ্ঠীর অভিযোগ।
মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে শিন্ডে সরকার জানিয়েছিল, কুনবিদের পিছিয়ে পড়া অনসগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) আওতায় সংরক্ষণের শংসাপত্র দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঠিক হয়, মরাঠা সম্প্রদায় শিক্ষাগত এবং সামাজিক ক্ষেত্রে কতটা পিছিয়ে সে বিষয়ে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করবে ওবিসি কমিশন। কুনবিরা মূলত কৃষক সম্প্রদায়ভুক্ত মরাঠা। শিন্ডে কমিটি তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ১ লক্ষ মরাঠা সম্প্রদায়ভুক্তের নথি যাচাই করে ১১,৫৩০ জন কুনবিকে চিহ্নিত করেছে তারা।
কিন্তু মন্ত্রিসভার সেই প্রস্তাব খারিজ করে মরাঠা আন্দোলনের নেতা মনোজ বলেছিলেন, ‘‘আমরা কোনও আংশিক সংরক্ষণের প্রস্তাব মানব না। সমগ্র মরাঠা জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভাবে পূর্ণাঙ্গ সংরক্ষণ চাই।’’ কিন্তু এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ২০২১ সালের রায় অন্তরায় হতে পারে বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশের বেশি আসনকে জাতপাত ভিত্তিক সংরক্ষণের আওতায় আনা যায় না।
জাত এবং বর্ণের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে। তাই মরাঠাদের জন্য নতুন করে বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। আগের সরকারের আমলে মরাঠা সম্প্রদায়ের জন্য চাকরিতে এবং শিক্ষায় ১৬ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। মরাঠাদের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি হিসেবে ঘোষণা করে ২০১৮ সালে ওই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ২০২১-এর মে মাসের রায়ে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছিল, এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের জন্য বিধিবদ্ধ ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যা সাংবিধানিক ব্যবস্থার পরিপন্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy