বালোচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে কয়েক দিন আগেই পাকিস্তান সরকারকে সতর্ক করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এ বার সেখানে সক্রিয় স্বাধীনতাপন্থী বিদ্রোহী বালোচদের সংগঠন বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-র তরফে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসাবে ঘোষণার দাবি তোলা হল। ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দুষেছে তারা। পাশাপাশি, সমাজমাধ্যমে বিএলএ দাবি করেছে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা পাক সশস্ত্র বাহিনী এবং তার পরিকাঠামোর উপর ৫১টি স্থানে ৭১টি ‘সুনির্দিষ্ট হামলা’ চালিয়েছে।
মার্চ মাসে অন্য দুই সশস্ত্র বালোচ গোষ্ঠী, বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) ও বালোচ রিপাবলিকান গার্ডস (বিআরজি) এবং সিন্ধুপ্রদেশে সক্রিয় বিদ্রোহী সংগঠন ‘সিন্ধুদেশ রেভলিউশনারি আর্মি’র (এসআরএ) সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন যৌথমঞ্চ গড়েছে বিএলএ। বস্তুত পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম বার ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বালোচদের তিনটি প্রধান জনগোষ্ঠী মারি, মেঙ্গল এবং বুগতি প্রভাবিত সংগঠনগুলি। পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ, ভারতের তৎপরতাতেই একজোট হচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের রাজনৈতিক ও জনসংযোগ বিষয়ক মুখ্য উপদেষ্টা রানা সানাউল্লা সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, বালোচ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান জারি রাখা হবে।
তার পরেই ১৫ এপ্রিল থেকে নতুন করে হামলা শুরু করেছেন স্বাধীনতাপন্থী বালোচ যোদ্ধারা। তার পোশাকি নাম ‘অপারেশন হেরোফ’। প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ১১ অগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল দেশীয় রাজ্য কালাত। ১২ অগস্ট কালাতের শাসক মির সুলেমান দাউদ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বাধীনতার মেয়াদ ছিল মাত্র সাত মাস। ১৯৪৮-এর ২৭ মার্চ পর্যন্ত। বালোচিস্তানের মানুষের কাছে সেই দিনটা আজও যন্ত্রণার ‘পরাধীনতা দিবস’! সাত দশক আগে ওই দিনেই পাকিস্তানি সেনা দখল করেছিল বালোচিস্তান। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তৎকালীন শাসককে বাধ্য করেছিল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে।
বালোচিস্তানের পরবর্তী ইতিহাস ফের নতুন স্বাধীনতার যুদ্ধের। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর কয়েক হাজার মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক দানা বেঁধেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালোচিস্তান প্রাকৃতিক ভাবে সবচেয়ে সম্পদশালী। ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে বালোচ নাগরিকদের। ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) তৈরির পরে গত কয়েক বছরে সেই লুট আরও বেড়েছে। পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া ওই রাস্তা কারাকোরাম পেরিয়ে ঢুকেছে পাকিস্তানে। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে বালোচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে চিন নিয়ন্ত্রিত গ্বদর বন্দরে।
আরও পড়ুন:
ওই রাস্তা ব্যবহার করেই ইসলামাবাদ এবং বেজিঙের শাসকেরা বালোচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে বলে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং ‘বালোচিস্তান ইয়ারজ়েথি কমিটি’ (‘বালোচিস্তান ইউনিটি কমিটি’ বা বিওয়াইসি নামে পরিচিত)-র মতো সংগঠনের অভিযোগ। এমনকি, সম্প্রতি গ্বদর উপকূলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরাও চিনাদের আপত্তিতে বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ‘বালোচিস্তানের গান্ধী’ বলে পরিচিত স্বাধীনতাপন্থী নেতা আবদুল কাদির বালোচ বছর কয়েক আগে দিল্লি এসে বলেছিলেন, তাঁরা চান ১৯৭১-এ ভারত যে ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে ভাবেই পাশে দাঁড়াক বালোচিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বালোচিস্তানের উপর পাক ফৌজের নিপীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ডেরায় ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের পরে বিএলএ জানিয়েছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার নয়াদিল্লির পাশে রয়েছে।