Advertisement
E-Paper

চিনকে ডেকে এনে শিলিগুড়ি করিডরের গায়ে বিমানঘাঁটি তৈরি করতে চাইছেন ইউনূস, সংঘাত তৈরি হলে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে

সংঘাতের পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী কোনও পরিকাঠামো গুঁড়িয়ে দিতে ভারতীয় বাহিনীর খুব একটা সময় লাগবে না। কিন্তু ইউনূসের নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ যে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় চিন এবং পাকিস্তানকে একসঙ্গে সক্রিয় করে তুলতে চাইছে, তা নিয়ে আমার মনে সংশয়ের কোনও অবকাশ নেই।

সুব্রত সাহা, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ০৮:৫৭
Bangladesh wants to revive World War II era airfield ne Siliguri Corridor with Chinese help, India keeps a close watch

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভারতের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলার অদম্য ইচ্ছা। নিজের ক্ষমতায় না কুলোলে অন্য কাউকে প্ররোচিত করে সেই উদ্দেশ্যসাধনের চেষ্টা। তবে খোলাখুলি নয়, বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কার্যকলাপের আড়ালে খানিকটা নিঃশব্দে ভারতের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর আয়োজন।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ আপাতত এই নীতি নিয়ে এগোতে চাইছে। তাই শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে চিনা সহযোগিতায় বিমানঘাঁটি তৈরির কথা ভাবতে শুরু করেছে ঢাকা। বিমানঘাঁটি হোক বা অন্য যে কোনও পরিকাঠামো, প্রয়োজন পড়লে তা গুঁড়িয়ে দিতে ভারতের খুব একটা সময় লাগবে না। তার নমুনা ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ সদ্য দেখিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান নিয়ন্ত্রকেরা ভারত সম্পর্কে ঠিক কী ভাবছেন, কোন নীতি নিয়ে এগোতে চাইছেন, তার আভাস মিলছে এই বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগে।

পুনরুজ্জীবন, কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তৈরি হওয়া একটি বিমানঘাঁটিকে নতুন করে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা শুরু করেছে ঢাকা। এই বিমানঘাঁটির অবস্থান বাংলাদেশের লালমণিরহাটে। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ বিমানবাহিনী এই বিমানঘাঁটি তৈরি করেছিল। যুদ্ধ থামার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার অসামরিক যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার জন্য লালমণিরহাটের বিমানবন্দরটি আবার চালু করে। কিন্তু পরে তা ফের বন্ধ হয়ে যায়। শেখ হাসিনার আমলে ওই বিমানঘাঁটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা ঘোষিত হয়েছিল। যেখানে বিমান চলাচল এবং মহাকাশ প্রযুক্তি সংক্রান্ত পড়াশোনা হবে। কিন্তু ইউনূসের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি উৎসাহী বিমানঘাঁটি সচল করে তুলতে।

লালমণিরহাটের এই বিমানঘাঁটি কেন চর্চায়, তা জানতে হলে এই জেলা তথা এই বিমানঘাঁটির অবস্থান বুঝতে হবে। বাংলাদেশের উত্তরে রংপুর বিভাগের উত্তরতম জেলা হল লালমণিরহাট। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের এই জেলাটির। সীমান্ত থেকে ওই বিমানঘাঁটির দূরত্ব বড় জোর ১৫ কিলোমিটার। আর শিলিগুড়ি করিডর (যাকে চিকেন’স নেক বলা হয়) থেকে লালমণিরহাটের বিমানঘাঁটির দূরত্ব মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার।

ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যের একমাত্র স্থলসংযোগ যেহেতু শিলিগুড়ি করিডর, তাই এই করিডর নিয়ে বিশ্ব জুড়েই ভূ-রাজনীতি তথা ভূ-কৌশল বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানা রকমের চর্চা চলে। ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই করিডরের কোনও কোনও অংশের প্রস্থ মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার। এর একপাশে নেপাল, অন্য পাশে বাংলাদেশ। উত্তর-পূর্বে কিছুটা গেলে ভুটান। আর ১০০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে চিন সীমান্ত। অর্থাৎ ভারতের দুই অংশের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী এই সঙ্কীর্ণ ভূখণ্ডের চার দিকে অন্য চারটি দেশের অবস্থান। তাই ভূ-কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে শিলিগুড়ি করিডর খুবই ‘সংবেদনশীল’। স্বাভাবিক কারণেই ভারত সরকার এই করিডরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ মাত্রায় সতর্ক থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান নিয়ন্ত্রকেরা সম্ভবত শিলিগুড়ি করিডরের সংবেদনশীলতা আর একটু বাড়িয়ে তুলতে ইচ্ছুক। তাই বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবনের অছিলায় শিলিগুড়ি করিডরের পূর্ব দিকে চিনকে পা রাখার জায়গা করে দিতে চাইছেন ইউনূস।

শিলিগুড়ি করিডর শুধু তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সংবেদনশীল নয়। অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক দিয়েও ভারতের জন্য এই ভূখণ্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সংযোগকারী দু’টি জাতীয় সড়ক এবং দু’টি ব্রডগেজ রেলপথ এই অংশের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এই অংশ দিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পরিবহণ হয়। বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্থলপথে ভারতের বাণিজ্য চলে এই করিডর হয়ে। ভারতের স্থলসেনা এবং বায়ুসেনার খুব গুরুত্বরপূর্ণ একাধিক ঘাঁটিও শিলিগুড়ি করিডর এবং তাকে ঘিরে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে চিনের সঙ্গে ভারতের দুটো বড় সীমান্ত সংঘাতও ঘটে গিয়েছে। ১৯৬৭ সালে নাথু লায় এবং ২০১৭ সালে ডোকলামে। তাই এই করিডর নিয়ে ভারত বরাবরই ‘স্পর্শকাতর’। শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা কোনও ভাবে সামান্যও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দেখলেই ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়।

ডোকলাম সংঘাত বেশি দিনের পুরনো ঘটনা নয়। অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে, ২০১৭ সালের সেই ঘটনায় ত্রিদেশীয় সীমান্তের (ভারত-ভুটান-চিন) সন্ধিস্থলের কাছে একতরফা ভাবে স্থিতাবস্থা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল চিন। ভারত কিন্তু চিনকেও রেয়াত করেনি। ৭৩ দিন ভারত ও চিনের সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। পরে দু’দেশই সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। ইউনূসের বোঝা উচিত যে, শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় তৈরি করার চেষ্টা হলে বাংলাদেশকেও রেয়াত করা হবে না।

গত মার্চ মাসে ইউনূস চিন সফরে গিয়েছিলেন। চিনকে তখন তিনি এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব হল জলপথে চিনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে চিনের নতুন ‘অর্থনৈতিক চারণভূমি’ করে তোলার। বাংলাদেশের বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে চিন নিজেদেরকে বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরের একচ্ছত্র ‘অভিভাবক’ করে তুলুক— কার্যত এমনই প্রস্তাব দিয়েছেন ইউনূস। সেখানেই থামেননি। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য যে স্থলবেষ্টিত এবং তাদের যে সরাসরি সমুদ্রে পৌঁছনোর কোনও পথ নেই, সে কথাও ইউনূস উল্লেখ করেছিলেন চিনে। আসলে বাংলাদেশকে কাজে লাগিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে চিনকে নজর দিতে বলেছেন ইউনূস। বাংলাদেশের বন্দর বা সড়ক পরিকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতেও চিন ব্যবসা করুক। উত্তর-পূর্বের যাবতীয় আমদানি-রফতানি চিন নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশি বন্দরের মাধ্যমে হোক। এবং কালক্রমে উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনীতি অনেকাংশে চিনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ুক। এই সুযোগ বেজিংকে দিতে চেয়েছে ঢাকা। উত্তর-পূর্ব ভারতের একাংশে চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত-বিরোধ রয়েছে। ভৌগোলিক ভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের দখল চিন নিতে না পারলেও অর্থনৈতিক ভাবে ভারতের ওই অংশকে চিন যাতে নিজের উপনিবেশ বানিয়ে ফেলতে পারে, ইউনূস তার ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছেন।

শুধু চিন নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে নেপাল, ভুটানকেও নজর দিতে বলছেন ইউনূস। গত ১৪ মে নেপাল পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানামগর বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার সময়েও ইউনূস উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রসঙ্গ তোলেন। ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। আলাদা ভাবে নয়, একসঙ্গে কাজ করলেই আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারব।”

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষের প্রধান উপদেষ্টার কথাবার্তায় আসলে বার বার উত্তর-পূর্ব ভারতে নাক গলানোর অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশে তাঁর সমর্থকেরা প্রকাশ্যে বলছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। ইউনূস আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতায় সে সব কথা প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না। কিন্তু ঘুরিয়েফিরিয়ে নানা মোড়কে ওই কথাই বলার চেষ্টা করছেন। উত্তর-পূর্বে নাক গলানোর চেষ্টাই করছেন। লালমণিরহাটে চিনা সহযোগিতায় বিমানঘাঁটি তৈরি করতে চাওয়া সেই প্রচেষ্টায় নবতম সংযোজন।

চিনা প্রতিনিধিদের ইতিমধ্যেই রংপুরে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের একটি প্রতিনিধিদলকেও সম্প্রতি রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে রংপুর তথা লালমণিরহাটকে কেন্দ্র করে ইউনূসের বাংলাদেশ কোন ছক কষছে, সে দিকে ভারত সতর্ক নজরই রাখছে।

কিন্তু হঠাৎ রংপুর বিভাগকে ঘিরে এত তৎপরতা কেন, তা-ও বোঝা দরকার। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়েও রংপুর পাকিস্তানি বাহিনীর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ছিল। লালমণিরহাটের সামরিক বিমানঘাঁটি তখন সচল ছিল না। তা সত্ত্বেও রংপুরে পাক বাহিনীর অবস্থান দৃঢ়ই ছিল। পাক বাহিনীর ওই শক্ত ঘাঁটিগুলোকে এড়িয়ে ভারত সরাসরি ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পেরেছিল বলে পাক সেনা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু সীমান্ত লাগোয়া সামরিক চৌকিগুলি রক্ষার উপরে জোর না দিয়ে দেশের ভিতরের শহরগুলিকে আরও দুর্ভেদ্য করে তুলতে পারলে এত দ্রুত পরাজয় হত না বলে তাদেরই অনেকের অভিমত ছিল। যদিও পাক বাহিনীর অন্দরেই পাল্টা মতও ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালের যুদ্ধে কোথায় কেমন পরিস্থিতি ছিল, সে কথা মাথায় রেখে ইউনূস এখন ঘুঁটি সাজানোর চেষ্টা করছেন কি না, তা নিয়ে কোনও কোনও মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, লালমণিরহাটের বিমানবন্দরকে বাণিজ্যিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই চিনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। কোনও সামরিক ভাবনা নেই। কিন্তু বাণিজ্যিক বিমানবন্দরকে যে কোনও মুহূর্তেই যে সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা কারও অজানা নয়। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে শিলিগুড়ি করিডরের এত কাছে যে চিনা সক্রিয়তা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তার দিকে দিল্লি নজর রাখছে। এত দিন শুধু উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে শিলিগুড়ি করিডরে ভারতের প্রস্তুতি দেখতে পেত চিন। কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে অনেক কিছুই অস্পষ্ট থেকে যায়। বাংলাদেশি বিমানবন্দরের পুনরুজ্জীবনের নামে লালমণিরহাটে যদি চিন সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়, তা হলে অনেক কাছ থেকে শিলিগুড়ি করিডরের দিকে তারা নজর রাখতে পারবে। রেডার ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েও নানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।

আবার বলছি, সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে লালমণিরহাটের ওই পরিকাঠামো গুঁড়িয়ে দিতে ভারতীয় বাহিনীর খুব একটা সময় লাগবে না। কিন্তু ইউনূসের নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ যে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় চিন এবং পাকিস্তানকে একসঙ্গে সক্রিয় করে তুলতে চাইছে, তা নিয়ে আমার মনে সংশয়ের কোনও অবকাশ নেই।

(লেখক ভারতের প্রাক্তন উপ-সেনাপ্রধান ২০১৪-২০১৫ সালে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর ১৫ কোরের কমান্ডার ছিলেন। নিবন্ধটি তাঁর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিতএই নিবন্ধের মতামত তাঁর নিজস্ব এবং ব্যক্তিগত)

Indian Army Indian Air Force Indo-Bangladesh Relations China Siliguri Corridor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy