উত্তরপ্রদেশে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হল এক বুথ স্তরের আধিকারিকের (বিএলও)। গত কয়েক দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষামিত্রদের সংগঠনের তরফে ওই বিএলও-র অসুস্থতার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করা হয়েছে। দাবি, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিএলও। তার পরেই তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
৫০ বছর বয়সি বিজয়কুমার বর্মা লখনউয়ের মলিহাবাদ এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষামিত্র হিসাবে কাজ করতেন। নিজের এলাকায় বিএলও-র দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে গত ১৪ নভেম্বরই এসআইআর-এর দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল, জানিয়েছেন লখনউয়ের জেলাশাসক বিশক জি। তাঁর জায়গায় অন্য এক জনকে ওই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই যে বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে, মেনে নিয়েছেন জেলাশাসক। তবে কাজের চাপের অভিযোগ তিনি মানতে চাননি।
আরও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি একাধিক রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে বিএলও-দের। ৯ তারিখ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা। লখনউয়ের এই বিএলও-র মৃত্যুর পর উত্তরপ্রদেশ প্রাথমিক শিক্ষামিত্র সঙ্ঘের রাজ্য জেনারেল সেক্রেটারি সুশীল কুমার কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য সিনিয়র আধিকারিকেরা ওঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। বলেছিলেন, সময়ে কাজ শেষ না-করতে পারলে ওঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হতে পারে। যখন-তখন ফোন করছিলেন।’’ মৃতের পরিবারও এসআইআর-এর কারণে মারাত্মক চাপের কথা জানিয়েছেন, দাবি সুশীলের। কাজ করতে করতে গত সপ্তাহে পড়ে গিয়েছিলেন বিএলও। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো গেল না।
পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর-এর কারণে কাজের চাপের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বিএলও-রা। তাঁদের দাবি, এত কম সময়ে এক জনের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিশ্রম অনুযায়ী বেতনও যথেষ্ট নয়। ইতিমধ্যে একাধিক বিএলও-র মৃত্যু খবর এসেছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কেউ আবার চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতেও সম্প্রতি এক বিএলও এসআইআর-এর কাজের চাপকে দুষে আত্মঘাতী হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল প্রথম থেকেই এসআইআর নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করছে। দাবি, প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য এটা বিজেপির চক্রান্ত। বিজেপির পাল্টা দাবি, এসআইআর-এর মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীমুক্ত হবে ভোটার তালিকা। এ বার বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশ থেকেও বিএলও-র অসুস্থতা এবং মৃত্যুর খবর এল।