মেঘালয়ে বুধবার শেষবেলার ভোট-প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধীর স্পষ্ট অভিযোগ ছিল, আদতে বিজেপির ‘সুবিধা করে দিতে’ই গোয়া-সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোটে লড়ছে তৃণমূল। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার প্লেনারি অধিবেশনের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি সম্পর্কে ‘নরম’ মনোভাব নিয়ে চলার অভিযোগ তুললেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
রাহুলের দলের অভিযোগ, বিজেপির প্রতি ‘নরম মনোভাব’ থেকেই প্রথমে আদানি-কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবির বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল। এখনও আদানি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না তারা। তৃণমূলের প্রশ্ন, তারা কোথায় ভোটে লড়বে, তা কি কংগ্রেস ঠিক করে দেবে? সনিয়া-রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হলে, তখন কংগ্রেস চুপসে যায় বলেও কটাক্ষ তাদের।
শুক্রবার থেকে ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রায়পুরে শুরু হচ্ছে কংগ্রেসের তিন দিনের প্লেনারি অধিবেশন। বৃহস্পতিবার, অধিবেশন শুরুর আগের সন্ধ্যায় প্লেনারি অধিবেশনের মঞ্চ থেকে এআইসিসি-তে জনসংযোগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের অভিযোগ, “তৃণমূল বিজেপির প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে চলছে। এখন তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর গায়ে কালি ছিটিয়ে, তাঁর প্রার্থীপদ বাতিল করতে চাইছে। কারণ, ওখানে কংগ্রেস প্রার্থী ভাল অবস্থায় রয়েছেন।”
আদানি-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের অবস্থানের দিকে আঙুল তুলে জয়রাম প্রশ্ন ছুড়েছেন, “সব বিরোধী দল যখন আদানি কেলেঙ্কারিতে যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) তদন্ত চাইছিল, তখন একমাত্র কোন দল তার বিরোধিতা করেছিল?” গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে গিয়ে কংগ্রেসের দলে ও ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দিতে চাইছে বলেও ফের জয়রাম অভিযোগ করেছেন। বুধবার মেঘালয়ে গিয়ে তৃণমূলের নাম করে এই অভিযোগ তোলেন রাহুল গান্ধী।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা দলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৃণমূল কোথায় নির্বাচনে লড়বে, তা কি কংগ্রেস ঠিক করে দেবে? ন্যাশনাল হেরাল্ড-কাণ্ডে যখন ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সনিয়া-রাহুল গান্ধীর ডাক পড়ে, তখন কংগ্রেস চুপসে যায়। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যত বার ডাকা হয়েছে, তিনি তত বারই গিয়েছেন।’’
রায়পুরের এই প্লেনারি অধিবেশনে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের বিরোধী জোট নিয়েও আলোচনা হবে। কংগ্রেস আজ ইঙ্গিত দিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো বিরোধী নেতানেত্রীরা বিজেপির প্রতি ‘নরম মনোভাব’ নিয়ে চললে, তাঁদের ছাড়াই কংগ্রেস বিরোধী জোটের কথা ভাববে। শুধু মোদী সরকারের সমালোচনা নয়, বিরোধী জোটের অভিন্ন কর্মসূচিও তৈরি হবে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সম্প্রতি দাবি করেছেন, ২০২৪-এ বিরোধী জোটই ক্ষমতায় আসবে। কংগ্রেস সেই জোটের নেতৃত্ব দেবে। সেই বিরোধী জোটে তৃণমূল, বিআরএস-এর উপস্থিতির প্রশ্নে আজ রমেশ জবাব দিয়েছেন, অধিবেশনের শেষে কংগ্রেস সভাপতি তাঁর বক্তৃতায় এই বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।
কংগ্রেস যে প্রয়োজনে তৃণমূল, বিআরএস, আপ-এর মতো দলগুলিকে বাদ দিয়েই জোটের কথা ভাববে, তার ইঙ্গিত দিয়ে আজ রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা মাণিকম টেগোর বলেছেন, কংগ্রেসের অধিনায়কত্বে ১৬টি দল প্রগতিশীল ভারতের জন্য আরএসএস-কে হারাতে কাজ করছে। মাণিকমের এই ১৬টি দলের তালিকায় ডিএমকে, এনসিপি, জেডিইউ, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ইত্যাদি থাকলেও তৃণমূল, আপ বা বিআরএস নেই। তিনটি ক্ষমতাসীন আঞ্চলিক দলকে বাদ দিয়ে কী ভাবে বিরোধী জোট সম্ভব, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে রমেশ তৃণমূলের জন্য কার্যত শর্ত বেঁধে দিয়ে বলেছেন, “বিরোধী জোটে যাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাতে চান, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীতি ও মনোভাবের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। কোনও দ্বিধা না রেখে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।”
রাহুল মেঘালয়ে গিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করার পরে অভিষেক পাল্টা জবাবে বলেছিলেন, কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে ব্যর্থ। গত ৪৫টি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৪০টিতেই হেরেছে। রায়পুরে জয়রাম রমেশ তার পাল্টা উত্তরে বলেছেন, “আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছি। তৃণমূল হার নিয়ে এত চিন্তিত হলে, কংগ্রেসের নেতাদের ভাঙানো বন্ধ করুক। মেঘালয়ে তৃণমূল তো কংগ্রেসের নেতাদের ভাঙিয়েই তৈরি হয়েছে। গোয়াতেও তৃণমূল এই একই কাজ করে ব্যর্থ হয়েছিল।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)