পরিবারের ১৮ জন মিলে হায়দরাবাদ থেকে সৌদি আরবের মদিনায় গিয়েছিলেন। আগামী শনিবার দেশে ফেরার কথা ছিল। তার আগে উমরা করে মদিনায় যাওয়ার পথে সেই ১৮ জনেরই প্রাণ গেল পথদুর্ঘটনায়। নিহতদের মধ্যে ন’জন শিশু। খবর পেয়ে হায়দরাবাদে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। তাঁদের কথায়, ‘‘এই ঘটনা আমাদের পরিবারের জন্য ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭০ বছরের নাসিরুদ্দিন তাঁর ৬২ বছরের স্ত্রী আখতার বেগম, পুত্র সালাউদ্দিন (৪২), কন্যা আমিনা (৪৪), রিজওয়ানা (৩৮), শাবানাকে (৪০) নিয়ে উমরা করতে মদিনায় গিয়েছিলেন। নাসিরুদ্দিনের চার সন্তানের পুত্র-কন্যারাও ছিলেন। মহম্মদ আসিফ বলেন, ‘‘আমার দাদা, বৌদি, তাঁদের পুত্র-কন্যা, নাতি-নাতনিরা আট দিন আগে সৌদিতে গিয়েছিলেন। উমরা সেরে মদিনার পথে ফিরছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বাস। তাতে আগুন ধরে যায়। শনিবারই দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁদের।’’ তিনি জানান, দুর্ঘটনার আগে পর্যন্ত পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করছিলেন নাসিরুদ্দিনেরা। তাঁর কথায়, এই ঘটনা গোটা পরিবারের জন্য ‘ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি’।
সপরিবার হায়দরাবাদের রামনগরে বাস করতেন নাসিরুদ্দিন। দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁদের বাড়িতে ছুটে যান বোন। বাড়ির দরজায় তখন তালা ঝুলছে। পাশের বাড়ি থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢোকেন নাসিরুদ্দিনের বোন। তার পরেই ভেঙে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের গোটা পরিবার নির্মূল হয়ে গেল।’’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রবিবার মাঝরাতে মক্কা থেকে একটি বাসে করে উমরাযাত্রীরা মদিনায় যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে মুফরিহাটের কাছে একটি ডিজ়েল ট্যাঙ্কারের সঙ্গে সেটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তার পরই বাসে আগুন ধরে যায়। ঘুমন্ত অবস্থাতেই ঝলসে মৃত্যু হয় ৪২ উমরাযাত্রীর। যে সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেই সময় যাত্রীরা সকলেই ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। ফলে সংঘর্ষের পর পরই বাসে আগুন ধরে যাওয়ায় যাত্রীরা বাসের বাইরে বেরিয়ে আসার সুযোগ পাননি।
খলিজ টাইম্স-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা এবং শিশু। ঝলসে যাওয়া দেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। শনাক্তকরণের কাজ চলছে। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্যেই তেলঙ্গানা সরকার রিয়াধে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। মৃতদের পরিবারকে সব রকম ভাবে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।