পাকিস্তান এবং চিনের ‘সখ্য’ নিয়ে সম্প্রতি বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে। ‘সার্ক’ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় বিকল্প জোট তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে ইসলামাবাদ এবং বেজিং। পরবর্তী দলাই লামা বাছাই ঘিরেও সম্প্রতি চিনের বিভিন্ন মন্তব্যে বিতর্ক ছড়িয়েছে। এরই মাঝে আগামী সপ্তাহে চিন সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
গত পাঁচ বছরে এই প্রথম বার চিন সফরে যাচ্ছেন জয়শঙ্কর। অর্থাৎ, ২০২০ সালে লাদাখে চিনা ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় সেনার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে এটিই প্রথম চিন সফর ভারতের বিদেশমন্ত্রীর। আগামী ১৫ জুলাই চিনের তিয়ানজিনে আন্তর্জাতিক জোট ‘শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন’ (এসসিও)-এর বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলন রয়েছে। মূলত ওই সম্মেলনের জন্যই জয়শঙ্করের চিন সফর। তবে এই সফরে দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচিও রয়েছে বিদেশমন্ত্রীর। যদিও দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি নয়াদিল্লি।
১০ দেশের জোট এসসিও-র মধ্যে ভারত, চিনের পাশাপাশি রয়েছে পাকিস্তানও। এ ছাড়া রাশিয়া, ইরান, কাজ়াখস্তান, কিরগিজ়স্তান, তাজিকিস্তান, উজ়বেকিস্তান এবং বেলারুশ। গত মাসে এসসিও সদস্যরাষ্ট্রগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলন হয়েছে চিনে। সেখানে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে নাম-না করে পাকিস্তানকে বিঁধেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দু’মুখো আচরণের যে কোনও জায়গা নেই, তা-ও সেখানে স্পষ্ট করে দেন তিনি। সম্মেলনের নথিতে পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের উল্লেখ না-থাকায় ওই নথিতে স্বাক্ষর করেননি রাজনাথ। ফলে কোনও যৌথ বিবৃতি ছাড়াই গত মাসে সমাপ্ত হয় এসসিও সদস্য দেশগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলন।
রাজনাথ চিন সফর সেরে আসার পরে এ বার চিনে যাচ্ছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। ঘটনাচক্রে, এমন একটি সময়ে তিনি চিনে যাচ্ছেন যখন ‘সার্ক’-এর পরিবর্ত হিসাবে নতুন জোটটি তৈরি করতে চাইছে ইসলামাবাদ এবং বেজিং। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ সংস্থা পিটিআই সম্প্রতি জানিয়েছে, সম্প্রতি চিনের কুনমিঙে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে চিন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে। বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, কুনমিঙের বৈঠকও আসলে এই নতুন জোট তৈরির প্রক্রিয়ার অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলি সার্কের সদস্য, তাদের এই নতুন জোটে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়েও চিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে দাবি ওই সূত্রের।
পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামার উত্তরসূরি বাছাই ঘিরে সম্প্রতি বিতর্ক ছড়িয়েছে। চিন জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অনুমোদন ছাড়া পঞ্চদশ দলাই লামার মনোনয়ন হবে না। কয়েক দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বর্তমান দলাই লামা তেনজ়িং গ্যাৎসোকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোয় আপত্তি জানিয়েছে বেজিং। দলাই লামাকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের আবহে নয়াদিল্লি ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, কারও ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচরণের বিষয়ে কথা বলে না ভারত । শুধু তা-ই নয়, এই বিষয়ে ভারত কোনও অবস্থানও নেয় না বলেও জানান বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দলাই লামার প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে তাঁর দেওয়া বিবৃতি দেখেছি। সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে ভারত সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।”