হাতকড়া পরিয়ে, পা বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়েছিল! আটকে রাখা হয়েছিল ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’। নিরামিষ খান জেনেও এমন খাবার দেওয়া হত, যা মুখেই তুলতে পারেননি ৭৩ বছর বয়সি হরজিৎ কৌর! তাঁর কথায়, ‘‘আমি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় ছিলাম। কিন্তু আচমকাই আমাকে নির্বাসিত করা হল। কোনও কারণ জানালেন না কেউই।’’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কোপে পড়েছেন এই বৃদ্ধা। আদতে পঞ্জাবের বাসিন্দা হলেও ১৯৯২ সালে ভারত থেকে দুই পুত্রকে নিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন হরজিৎ। প্রায় দুই দশক আমেরিকায় নির্ঝঞ্ঝাট আমেরিকায় থাকার পর হঠাৎই নির্বাচন প্রক্রিয়ার জালে আটকে পড়েন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ওয়ার্ক পারমিট ছিল, আমি ওখানে সব রকম কর দিয়েছি, তবু আমার সঙ্গে এমন করা হয়েছে।’’ প্রতি ছ’মাস অন্তর হরজিৎকে ‘হাজিরা’ দিতে হত। তার পরেও কেন তাঁকে গত ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে আমেরিকা থেকে নির্বাসন করা হল, তা বুঝেই উঠতে পারছেন না ওই বৃদ্ধা।
গ্রেফতারের সময় এবং তার পরে কী অবস্থায় ছিলেন, তা বলতে গিয়ে বার বার কেঁপে উঠছেন হরজিৎ। সেই আতঙ্ক তাড়া করছে তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়ার্ক পারমিট এবং অন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আচমকাই তিন-চার জন এসে ধরে নিয়ে যান। একটি ঠান্ডা ঘরে আটকে রাখা হয় আমাকে। ঠান্ডায় কাঁপছিলাম, তা-ও কেউ একটা কম্বল পর্যন্ত দেননি।’’ গ্রেফতারের পর সারারাত আমাকে ওই ঘরে আটকে রেখে পরের দিন সকালে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দিদের মতো হাতকড়া পরিয়ে, পা বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানান হরজিৎ।
শুধু তা-ই নয়, নিরামিষভোজী জেনেও হরজিৎকে এমন খাবার দেওয়া হয়েছে, তা খেতেই পারেননি। অন্য খাবার চাইলে মুখের উপর ‘না’ বলে দেওয়া হত! ভারতে ফিরে আসলেও তাঁর মন পড়ে রয়েছে তাঁর আমেরিকাতেই। কারণ, আমেরিকাতেই রয়েছে তাঁর গোটা পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘আমার সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা ওখানে আছে। আমি ওদের দেখতে চাই। ওদের কাছে যেতে চাই।’’ তাঁর দাবি, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই এই সব ঘটেছে।
আরও পড়ুন:
দুই দশকের বেশি সময় ধরে সান ফ্রান্সিসকোর বে এরিয়ায় থাকতেন হরজিৎ। বার্কলেতে একটি শাড়ির দোকানে কাজ করতেন। তবে বছরের শুরুতে স্বাস্থ্যগত কারণে কাজ ছাড়তে হয় তাঁকে। ২০১২ সাল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। তবে তিনি নিয়মিত অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ছ’মাস অন্তর অন্তর ‘হাজিরা’ দিতেন।