Advertisement
০১ মে ২০২৪
Hathras Case

হাথরস কাণ্ডে গাফিলতি ছিল পুলিশের, দাবি সিবিআই চার্জশিটে

তরুণীর বয়ান থেকে শুরু করে মেডিক্যাল পরীক্ষা সব কিছুতেই যে পুলিশি তৎপরতার অভাব ছিল, সিবিআই চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:৫০
Share: Save:

হাথরসের ঘটনা কি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিল? সিবিআইয়ের চার্জশিটে পুলিশের বেশ কয়েকটি বিষয়ে গাফিলতির কথা সামনে আসতেই ফের এই প্রশ্নটি ফের উঁকি দিতে শুরু করেছে।

সিবিআই কয়েক দিন আগেই চার্জশিটে জানিয়েছিল হাথরসের তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এর পর সরাসরি পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলল তারা। সম্প্রতি সিবিআই যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে তরুণীর বয়ান থেকে শুরু করে মেডিক্যাল পরীক্ষা—সব কিছুতেই যে পুলিশি তৎপরতার অভাব ছিল, সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফরেন্সিক প্রমাণও হাতে পাওয়া যায়নি বলেই দাবি সিবিআইয়ের। ঘটনার পরই একই অভিযোগ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে তুলেছিলেন নির্যাতিতার পরিবার।

সিবিআইয়ের দাবি, পুলিশের প্রাথমিক গাফিলতির কারণে তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা এবং পরবর্তী কালে ফরেন্সিক পরীক্ষায় দেরি হয়। নানা ফাঁক-ফোঁকর থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। যদি এই ঘটনাটা প্রথম থেকেই ঠিক ভাবে দেখা হত, তা হলে এই সব তথ্য পাওয়া যেত বলেই চার্জশিটে জানিয়েছে সিবিআই।

চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ৪ অভিযুক্তের মধ্যে সন্দীপ নামে এক জনের সঙ্গে ওই তরুণীর সম্পর্ক ছিল। ১৭ অক্টোবর থেকে ৩ মার্চের মধ্যে তাঁদের দু’জনের মধ্যে ফোনে ১০৫ বার কথা হয়েছে। সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শী এমনটাই দাবি করেছে সিবিআইয়ের কাছে। সেই ঘটনার পর তরুণী এবং অভিযুক্ত সন্দীপের মধ্যে কথা বন্ধ হয়ে যায়।

চার্জশিটে আরও দাবি করা হয়েছে, অভিযুক্ত তরুণীর সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করত বিভিন্ন নম্বর থেকে। কিন্তু তরুণী সেই ফোন ধরেননি বলেই প্রমাণ পেয়েছে সিবিআই। তাঁদের দাবি, সে কারণেই একটা আক্রোশ তৈরি হয়েছিল অভিযুক্তের মধ্যে।

আরও পড়ুন: পুলিশে ভরসা ছিল না যোগীর, বললেন মন্ত্রী

সিবিআই বলেছে, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তরুণী, তাঁর মা এবং দাদা মাঠে ঘাস কাটতে যান। তাঁরা একসঙ্গেই ঘাস কাটছিলেন। কিছু ক্ষণ পর তরুণীর দাদা বাড়িতে ঘাসের বোঝা রাখতে যান। দাদা চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর তরুণী মাকে বলেছিলেন, ক্লান্ত লাগছে। তখন তরুণীর মা তাঁকে বলেছিলেন, যে ঘাসগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো জড়ো করতে। তাঁর থেকে ৫০ মিটার দূরেই কাজ করছিলেন মা। কিছু ক্ষণ পরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ করতে শুরু করেন। তখন খেতের মধ্যে তাঁর চটি পড়ে থাকতে দেখে খুঁজতে শুরু করেন মা। তখনই তরুণীকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। তরুণীর দাদা ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে কাঁধে নিয়ে চাঁদপা থানায় পৌঁছন অভিযোগ দায়ের করতে।

চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার পরে পুলিশ ১৯ তারিখে নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করে। সেই বয়ানে ১৯ বছরের কিশোরী জানান, ৪ জন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছে। ৩ জনের নামও তিনি বলেন। কিন্তু তার পরেও পুলিশ এফআইআর-এ শুধু এক জনেরই নাম লেখে। শুধু তাই নয়, নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষাও তারা করায়নি।

তার পর, গত ২২ সেপ্টেম্বর তরুণীর বয়ান ফের রেকর্ড করা হয়। সেই বয়ানে ৪ অভিযুক্ত সন্দীপ, রামু, লবকুশ এবং রবি-র নামে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন তরুণী। পাশাপাশি এটাও জানিয়েছিলেন, সন্দীপ তাঁকে গলা টিপে ধরায় বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। এটাই ছিল তরুণীর মৃত্যুর আগে শেষ বয়ান। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বয়ান দিয়েছিলেন। সেই বয়ানের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে ৩৭৬ডি ধারায় (গণধর্ষণ) মামলা দায়ের করা হয়।

সিবিআই এই ঘটনার তদন্তের জন্য আরও কিছুটা সময় চেয়েছে আদালতের কাছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর চার জনের বিরুদ্ধে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। গুরুতর জখম অবস্থায় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ২৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তরুণীর। এই ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ঘটনাটি নিয়ে ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকায় শেষমেশ সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

হাথরসের ঘটনায় পুলিশের উপরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ভরসা ছিল না বলে সোমবার দাবি করেন উত্তরপ্রদেশের সিনিয়র বিজেপি নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্য সুনীল ভারালা। শ্রম প্রতিমন্ত্রী ভারালা জানিয়েছেন, সেই জন্যই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন যোগী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hathras Case CBI Uttar Pradesh Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE