দৃশ্য ১: হাসপাতালে বিছানায় নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে বছর এগারোর ছেলেটির দেহ। ছেলের দেহের পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা। এই দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সেরাও। বার বার মহিলাকে সান্ত্বনা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন আত্মীয়েরা। কিন্তু ছেলেকে ছেড়ে যেতে চাইছিলেন না মা। অনেক চেষ্টার পর তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
দৃশ্য ২: দু’বছরের সন্তানের দেহ কোলে নিয়ে চিৎকার করতে করতে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসকদের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে এক সন্তানহারা বাবার কাতর আর্তি— ‘‘আমার ছেলেকে বাঁচান, ডাক্তারবাবু।’’ এ দৃশ্য দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনও। ধুরু বিষ্ণু (২)। করুরে পদপিষ্টে মৃতদের তালিকার কনিষ্ঠতম সদস্য। বাবার সঙ্গে ‘থলপতি’ বিজয়কে দেখতে গিয়েছিল সে। কিন্তু আর ফেরা হল না। ভিড়ের নীচে পিষে মৃত্যু হয় তার। ছেলের দেহ বুকে জড়িয়ে হাসপাতালে ছোটেন তার বাবা। কিন্তু চিকিৎসকেরাও কিছু করতে পারেননি। কারণ, আগেই মৃত্যু হয়েছিল সেই একরত্তির।
পদপিষ্টে মৃত দু’বছরের ধুরু বিষ্ণু। ছবি: সংগৃহীত।
দৃশ্য ৩: হাসপাতালে স্ট্রেচারে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একরত্তির দেহ। পাশে ‘পাথরের মূর্তির’ মতো দাঁড়িয়ে মা। সন্তানকে সাদা চাদরে মোড়ানোর দৃশ্য বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কথা হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু ফ্যালফ্যাল করে সন্তানের দেহের দিকে তাকিয়ে। আর চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসছে। কাকিমার সঙ্গে তামিল নেতা-অভিনেতা বিজয়কে দেখতে গিয়েছিল সে। দু’জনেই ভিড়ের নীচে চাপা পড়ে যায়। কাকিমা কোনও রকমে বাঁচলেও, সেই একরত্তির মৃত্যু হয়। পরিবারের এক সদস্য আফসোস করে বললেন, ‘‘আমাদেরই ভুল। ছেলেটাকে পাঠানো উচিত হয়নি।’’
দৃশ্য ৪: কয়েক জনের দেহ শনাক্ত হয়েছে। এখনও অনেকের দেহ শনাক্তকরণ বাকি। দুর্ঘটনার পর দেহগুলি একে একে পৌঁছেছিল হাসপাতালের মর্গে। দিশাহারা, বিচলিত এবং উদ্বিগ্ন পরিজনেরা মর্গের বাইরে ভিড় জমান। ক্রমে ভিড় বাড়ছিল। মর্গের বাইরে পরিবেশ স্বজন হারানোর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিল। অনেকে এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল ছুটে বেড়াচ্ছেন স্বজনের খোঁজে। অনেকে খোঁজ করছেন মর্গে। এ দৃশ্য গোটা করুরকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
তামিলনাড়ুর এই পদপিষ্টের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ শিশু-সহ ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে ঘিরে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। পদপিষ্টের এই ঘটনার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে তামিলাগা ভেটরি কাজ়াগম (টিভিকে)-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা তামিল নেতা-অভিনেতা ‘থলপতি’ বিজয়। এই অভিযোগ তুলে মাদ্রাজ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে টিভিকে। সিবিআই তদন্তের দাবিও তোলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, শনিবার করুরে বিজয়ের প্রচারসভা ছিল। পুলিশের দাবি, দুপুর ৩টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই সভার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিজয় নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে আসেন। ফলে যে পরিমাণ লোক জমায়েতের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি, তার তুলনায় দ্বিগুণ মানুষ হাজির হন। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।