Advertisement
E-Paper

মাওবাদী নেতা হিডমার খোঁজ কী ভাবে পেল নিরাপত্তাবাহিনী? সন্দেহের তির আত্মসমর্পণকারী আর এক শীর্ষনেতার দিকে

মঙ্গলবার অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ বিভিন্ন জেলা জুড়ে ‘অপারেশন অক্টোপাস’ চালিয়ে ৩১ জন মাওবাদীকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে যৌথবাহিনীর অভিযানের জেরে অধিকাংশই ছত্তীসগঢ় থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৬
How CPI Maoist top commander Madvi Hidma tracked by security force, a story of split a betrayal emerges

নিহত মাওবাদী নেতা মাধবী হিডমা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গত এক দশকে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে মাওবাদী গেরিলাবাহিনীর অন্তত দু’ডজন অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তেলঙ্গানা থেকে আগত ‘উচ্চবর্ণের’, শিক্ষিত নেতাদের নিয়ে গঠিত শীর্ষবৃত্তের মধ্যে ‘ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী মুখ’ হওয়ার ব্যতিক্রমী নজির গড়েছিলেন। মঙ্গলবার সকালে ছত্তীসগঢ়ের সুকমা জেলা লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের আলুরি সীতারামরাজু জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হলেন নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণতম সদস্য মাধবী হিডমা। আর সেই সঙ্গেই আবার উঠে এল ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’।

পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালে নিহত মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে বিবেক ওরফে অভয় ওরফে সোনু গত ১৪ অক্টোবর ৬০ জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে মহারাষ্ট্রের গঢ়ছিরৌলিতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। মাওবাদী পলিটব্যুরোর এই সদ্য-প্রাক্তন সদস্যই হিডমার গতিবিধির খবর পুলিশকে দিয়েছিলেন বলে মাওবাদীদের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি। অন্য একটি খবরে দাবি, পিএলজিএর সবচেয়ে দক্ষ বাহিনী ‘১ নম্বর ব্যাটালিয়নে’র আত্মসমর্পণকারী এক নেতা ওয়াম লাকমুর থেকেও হিডমার গতিবিধি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। দক্ষিণ বস্তারে যৌথবাহিনীর লাগাতার হানাদারিতে কোণঠাসা হিডমা যে শ’দুয়েক মাওবাদীকে নিয়ে তেলঙ্গানা-অন্ধ্র সীমানার জঙ্গলে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন, গত অক্টোবরে আত্মসমর্পণ করেই সেই তথ্য পুলিশকে দিয়েছিলেন ওয়াম। এর আগে গত মে মাসে মাওবাদী সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু ওরফে গগন্না নিহত হওয়ার পরেও উঠে এসেছিল বিশ্বাসঘাতকতার তত্ত্ব।

মঙ্গলবার সকালে অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং তেলঙ্গানা— এই তিন রাজ্যের সীমানায় থাকা মারেদুমিলির জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হিডমার পাশাপাশি নিহত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী মদাকম রাজে এবং আরও চার মাওবাদী। তাঁরা সকলেই মাওবাদী সশস্ত্র বাহিনী পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে কোন সূত্রে খবর পেয়ে সিআরপিএফের কোবরা কমান্ডো এবং তিন রাজ্যের পুলিশ অভিযান চালাল, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। এরই পাশাপাশি, মঙ্গলবার অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ বিভিন্ন জেলা জুড়ে ‘অর্গানাইজেশন ফর কাউন্টার টেরোরিস্ট অপারেশনস’ বা অক্টোপাস চালিয়ে ৩১ জন মাওবাদীকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ছত্তীসগঢ় থেকে পালিয়ে এসে আলুরি সীতারামরাজু, কৃষ্ণা, গোদাবরী, বিজয়ওয়াড়া এবং এনটিআর জেলায় লুকিয়েছিলেন বলে অন্ধ্র পুলিশের এডিজি মহেশচন্দ্র লাড্ডা জানিয়েছেন।

সুকমা জেলার জনজাতি অধ্যুষিত পুবর্তী গ্রামের বাসিন্দা হিডমা নয়ের দশকে মাওবাদী বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ১ নম্বর ব্যাটালিয়নের প্রধান হিসাবে ২৫০ জনের দলকে নেতৃত্ব দিতেন তিনি (যদিও গত কয়েক মাসে সেই ব্যাটালিয়নের গেরিলাদের বড় অংশই আত্মসমর্পণ করেছেন)। পাশাপাশি, সামলাতেন দণ্ডকারণ্য জ়োনাল কমিটির দায়িত্ব। সিপিআই (মাওবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণতম সদস্য হিডমার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে বিজেপি বিধায়ক ভীমা মাণ্ডবী খুনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। খোঁজ দিতে পারলে ৪০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছিল।

কেন্দ্র বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশবাহিনীর ঘোষিত অঙ্ক মিলিয়ে হিডমার মাথার দাম পরবর্তী সময় বেড়ে ১ কোটি টাকা হয়েছিল। কিন্তু এত দিন তিনি ছিলেন অধরা। মাওবাদীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সংগঠনের ‘মোবাইল অ্যাকাডেমিক পলিটিক্যাল অর্গানাইজ়েশন স্কুল’-এর প্রাক্তন প্রধান রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে শ্রীনিবাসের হাতে প্রাথমিক ভাবে দণ্ডকারণ্য জ়োনাল কমিটির দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বয়স এবং স্বাস্থ্যের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পাননি। এর পরে তেলঙ্গানার আর এক নেতা তক্কল্লাপল্লি বাসুদেব রাও ওরফে আশান্নার নামও আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পেয়েছিলেন হিডমা। তাঁর নেতৃত্বেই ২০১০ সালে দন্তেওয়াড়ায় ৭৬ জন সিআরপিএফ জওয়ান খুন, ২০১৩ সালে জিরম ঘাঁটিতে ছত্তীসগঢ় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন্দকুমার পটেল, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা মহেন্দ্র কর্মা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল-সহ একাধিক কংগ্রেস নেতাকে জঙ্গলের পথে ঘিরে খুন করা হয়েছিল। ২০২১ সালে ২২ জন নিরাপত্তাকর্মী খুনের ঘটনারও মূল অভিযুক্ত তিনিই ছিলেন।

প্রসঙ্গত, প্রাক্তন মাওবাদী সাধারণ সম্পাদক মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতির খোঁজ নেই দীর্ঘ দিন। গত কয়েক বছরে গঢ়চিরৌলী-অবুঝমাঢ়ের ‘রেড করিডরে’ তাঁর গতিবিধির কোনও খবর নেই। চলতি বছরে মাওবাদী পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি, তাঁর স্ত্রী রবি ভেঙ্কাটা লক্ষ্মী চৈতন্য ওরফে অরুণা, সাধারণ সম্পাদক কেশব রাও, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নরসিংহচলম ওরফে সুধাকরের মতো শীর্ষ বস্তারের জঙ্গলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। জীবিত নেতাদের মধ্যে এখনও সক্রিয় রয়েছেন মাওবাদী সাধারণ সম্পাদক ‘দলিত মুখ’ হিসাবে পরিচিত থিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেবুজি ওরফে চেতনদেওজি, পলিটব্যুরো সদস্য মিসির বেসরা ওরফে ভাস্কর ওরফে সুনির্মল এবং পিএলজিএ কমান্ডার গণেশ উইকে ওরফে গণেশন্না, সুজাতা ওরফে কল্পনা, মল্ল রাজা রেড্ডি ওরফে সায়ান্না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দেওয়া ৩১ মার্চের চূড়ান্ত সময়সীমা মেনে মাওবাদী নির্মূলের লক্ষ্যে এ বার তাঁদের সন্ধানে যৌথবাহিনী।

CPI Maoist Madvi Hidma CPI-Maoist Maoist Maoists Naxals
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy