উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে কংগ্রেসের আয়োজিত ম্যারাথনে ভিড়ের চাপে পড়ে যাচ্ছে কিশোরীরা। মঙ্গলবার। ছবি— পিটিআই।
শ’য়ে শ’য়ে তরুণী, কিশোরী রাস্তায় নেমেছেন। উপলক্ষ, কোভিড-কালে ম্যারাথন! অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। বালাই নেই দূরত্ব-বিধির। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার ‘লড়কি হুঁ লড় সকতি হুঁ’ স্লোগানের প্রচারে কংগ্রেস মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে মহিলাদের জন্য যে ম্যারাথন আয়োজন করেছিল, যাবতীয় করোনা-বিধি জলাঞ্জলি দেওয়ার এই ছবি সেখানকারই।
শুধু তা-ই নয়, দৌড় শুরুর পরে সামনের সারিতে থাকা তরুণীরা পড়ে যাওয়ায় পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হল! যদিও শেষ পর্যন্ত কেউ গুরুতর আহত হননি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল, দেশে যখন ওমিক্রনের হাত ধরে তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক, তখন মাস্ক ছাড়া ও দূরত্ব-বিধি না মেনে এই ম্যারাথন আয়োজন করা আদৌ উচিত হয়েছে কি না।
তবে কোভিড-বিধি ভঙ্গে পিছিয়ে নেই কোনও রাজনৈতিক দলই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মণিপুরে, ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। দুই রাজ্যেই মোদীর সভায় ভিড় উপচে পড়ল। প্রধানমন্ত্রীকে অনেকটা সময়ই মুখে মাস্ক ছাড়া ঢোল বাজাতে বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল। প্রধানমন্ত্রী বুধবার পঞ্জাবে ফিরোজপুরে বিরাট জনসভা করবেন। কোভিডের সংক্রমণ যতই বাড়ুক, তাঁর জনসভা বাতিল হচ্ছে না।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল গত তিন দিন তিন নির্বাচন-মুখী রাজ্যে জনসভা করেছেন। শনিবার পঞ্জাবের অমৃতসরে, রবিবার উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে, সোমবার উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে। মঙ্গলবার কেজরীওয়াল জানিয়েছেন, তিনি কোভিডে আক্রান্ত।
কোভিডের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের ধাক্কায় রাজ্যে-রাজ্যে রাতে কার্ফু জারি হচ্ছে। বাস, ট্রেন, মেট্রোয় যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ জারি হচ্ছে। বাজার-হাট থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের ভোটের প্রচারে, জনসভায় কোনও লাগাম টানছেন না। রাজনৈতিক দলগুলি বলছে, নির্বাচন কমিশন প্রচারে বা নির্বাচনী জনসভায় কোনও বিধিনিষেধ জারি করেনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, রাজনৈতিক নেতারা নিজে থেকে কেন আরও দায়িত্বশীল হবেন না?
দিল্লিতে শুধু মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল নন, বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারিও কোভিড আক্রান্ত। বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র আজ কেজরীওয়ালকে ‘সুপার স্প্রেডার’ বলে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু বিজেপির হয়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী আজ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামিকে নিয়ে রোড-শো করেছেন। সেখানে না ছিল গাড়িতে সওয়ার নেতাদের মুখে মাস্ক, না রাস্তায় কর্মীদের মুখে।
সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও, গত কয়েক সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশে মোদী একের পর এক জনসভা করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁকে মাস্ক ছাড়া দেখা গিয়েছে। গত সপ্তাহে অমিত শাহের কর্মসূচিতেও মাস্ক উধাও ছিল। এখনও উত্তরপ্রদেশে কোনও দলই জনসভায় রাশ টানছে না।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশে মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষের পুরো টিকাকরণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজ যে মণিপুরে অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, সেখানেও টিকাকরণের হার কম।
মঙ্গলবারও আলিগড়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকারি অনুষ্ঠানে বিরাট ভিড় হয়েছে। পিছিয়ে নেই সমাজবাদী পার্টির প্রচারও। তাঁর প্রচার-যাত্রায় প্রবল ভিড়েও না আছে মাস্ক, না দূরত্ব-বিধি। এসপি নেতা অখিলেশ যাদব ৮ ও ৯ জানুয়ারি অযোধ্যা যাবেন।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা আপাতত ঘরবন্দি। ৯ জানুয়ারি উত্তরাখণ্ডে দু’টি জনসভা করবেন। বরেলীতে কংগ্রেসের ম্যারাথনে আজ পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় কংগ্রেসের স্থানীয় নেত্রী সুপ্রিয়া আরোণের যুক্তি, বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরেও তো হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন! কংগ্রেসের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন সহযোগিতা না করাতেই বিশৃঙ্খলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy