Advertisement
E-Paper

ট্রাম্পের প্রস্তাব কি ফেরাচ্ছেন মোদী? মার্কিন এফ-৩৫ নয়, পুতিনের এসইউ-৫৭-য় ভরসা করতে পারে ভারত

আমেরিকায় তৈরি ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ এবং রাশিয়ায় নির্মিত সুখোই ‘এসইউ-৫৭’-এর মধ্যে কোনও একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানকে ভারতীয় বায়ুসেনা বেছে নিতে পারে বলে কিছু দিন ধরেই জল্পনা রয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ ১৭:০৩
India actively considering Russia’s offers on joint production of Sukhoi Su-57

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং২’ বিক্রির বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু তা ফিরিয়ে পুরনো সামরিক সহযোগী রাশিয়ার উপরেই ভরসা রাখতে চলেছে ভারত। সিএনবিসি টিভি-১৮-য় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাব মেনে যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ববিমান ‘সুখোই এসইউ-৫৭’ (‘ফেলন’ নামে যা পরিচিত) নির্মাণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেঙ্গালুরুর ইয়ালেহাঙ্কা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এ যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করতে এসেছিল এফ-৩৫ এবং এসইউ-৫৭। সে সময় থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, আমেরিকা বা রাশিয়ার মধ্যে কোনও একটি দেশের থেকে সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার দিকে ঝুঁকতে পারে নয়াদিল্লি। ঘটনাচক্রে, ফ্রান্সে তৈরি ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রাফালের পরে ভারতীয় বায়ুসেনা গত কয়েক মাস ধরেই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান পেতে সক্রিয় হয়েছে।

মূল কারণ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের সময়ই ভারতকে ‘এফ-৩৫এ’ মডেলটি বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। মার্চ মাসে ভারতকে ‘এসইউ-৫৭ই’ (এসইউ-৫৭-র এক্সপোর্ট ভ্যারিয়েন্ট) যুদ্ধবিমানের ‘যৌথ উৎপাদন’ এবং ‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তরে’র প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। পাশাপাশি, ক্রেমলিনের তরফে বার্তা দেওয়া হয়, তারা এসইউ-৫৭ ফাইটার জেটের গুরুত্বপূর্ণ ‘সোর্স কোড’ দিতেও রাজি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ গোড়া থেকেই রুশ বিমান কেনার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ, অতীতে কখনও আমেরিকার তৈরি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান ভারতীয় সেনা ব্যবহার করেনি।

অন্য দিকে, মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০-সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলটদের। তা ছাড়া, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ স্লোগানের মাধ্যমে দেশের মাটিতে উন্নত হাতিয়ার তৈরির উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত রাখছে কেন্দ্র। সেই মাপকাঠির নিরিখে রুশ এসইউ-৫৭-র পাল্লা ভারী ছিল। কারণ, এফ-৩৫-এর নির্মাতা সংস্থা লকহিড মার্টিন নয়াদিল্লিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরে নারাজ বলেই সূত্রের খবর। অন্য দিকে, রাশিয়ার সুখোই সংস্থা ইতিমধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ (হ্যাল)-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে যুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ বিমান উৎপাদন শুরু করেছে।

রাফাল থেকে ‘শিক্ষা’ এবং ‘সোর্স কোড’?

প্রসঙ্গত, ‘সুখোই-৫৭’র মূল নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘ইউনাইটেড এয়ারক্র্যাফ্‌ট কর্পোরেশন’। তবে স্টেলথ ক্যাটেগরির দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানের নকশা তৈরি করেছে বিখ্যাত রুশ লড়াকু বিমান কোম্পানি ‘সুখোই’। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ‘এসইউ-৫৭’ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে রুশ বায়ুসেনা। স্টেলথ ক্যাটেগরির হওয়ায় একে রাডারে চিহ্নিত করা কঠিন। শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমানের সঙ্গে আকাশযুদ্ধের পাশাপাশি, মাটিতে লক্ষ্যবস্তুর উপরেও নিখুঁত ভাবে হামলা চালাতে পারে সুখোই এসইউ-৫৭। গত দু’বছরে ইউক্রেনের যুদ্ধে বার বার এই যুদ্ধবিমান তার দক্ষতা প্রমাণ করেছে। অন্যদিকে, এফ-৩৫ লাইটিং-২ সে ভাবে এখনও আকাশযুদ্ধে পরীক্ষিত নয়

কোনও যুদ্ধবিমানের সমস্ত সংবেদনশীল তথ্য এবং বহুমুখী কার্যকারিতার প্রয়োগ নির্ভর করে ‘সোর্স কোড’-এর উপর। অত্যন্ত সংবেদনশীল তথ্য। রাফাল যুদ্ধবিমানের ‘সোর্স কোড’ ভারতকে দেয়নি ফ্রান্স। ফলে রাফাল যুদ্ধবিমানে ‘ব্রহ্মস’-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুশ ক্ষেপণস্ত্র বসানো সম্ভব হয়নি। ভারতীয় বায়ুসেনাকে ‘ব্রহ্মস’ ব্যবহারের জন্য নির্ভর করতে রুশ সুখোই-৩০-এর উপর। ‘এসইউ-৫৭’-র ‘সোর্স কোড’ পেলে অনায়াসেই তাতে ব্যবহারযোগ্য সমস্ত ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইন্টিগ্রেট’ করতে পারবে বায়ুসেনা। রুশ যুদ্ধবিমানটিতে ‘অস্ত্র’, ‘রুদ্রম’ সহ বিভিন্ন দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র অতি সহজেই বসাতে পারবে ভারত। বসানো যাবে দেশে তৈরি ‘আয়েসা’ (অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যান্‌ড অ্যারে) রেডার।

কারণ রয়েছে আরও

ট্রাম্প সরকার ভারতকে এফ-৩৫ বিক্রি করতে চাইলেও, প্রযুক্তি দেওয়া তো দূরের কথা, পূর্ণ কর্তৃত্বও দিতে রাজি নয়। সেই যুদ্ধবিমান কোন শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে, তার নিয়ন্ত্রণও থাকবে পেন্টাগনের হাতে! তা ছাড়া, ‘অপারেশন সিঁদুর’ পর্বে ‘ব্রহ্মস’ হানায় পর্যুদস্ত পাকিস্তান সম্প্রতি আমেরিকার কাছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ‘থাড’ (টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স) চেয়ে আর্জি জানিয়েছে। সেই আর্জি মঞ্জুর হলে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতীয় বায়ুসেনার বহরে পঞ্চম প্রজন্মের মার্কিন ‘স্টেল্‌থ’ যুদ্ধবিমান অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়বে বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা। প্রসঙ্গত, মনমোহন সিংহের জমানাতেই ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের উদ্দেশ্যে ‘পিএকে-এফএ টি-৫০’ কর্মসূচি শুরুর চুক্তি করেছিল। কিন্তু প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত মতপার্থক্যের জেরে ২০১৭ সালে তা ‘হিমঘরে’ পাঠিয়ে দিয়েছিল মোদী সরকার।

Donald Trump Narendra Modi Sukhoi Su 57 Russia Vladimir Putin F-35 Lightning II Su-57 Felon SU 57 fighter jet Fighter Jet Fighter Jet Source Code
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy