Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bird Trafficking

‘পাখি সব করে রব’, ওদের করোনা-হীন জীবনে চিরস্থায়ী শুধুই ‘লকডাউন’

ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অনুযায়ী এ দেশের জঙ্গলে মেলা ১,২০০-র বেশি প্রজাতির পাখি ধরা, মারা কিংবা পোষা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২১ ১৩:১৩
Share: Save:

বন্দিত্বই ওদের জীবনের একমাত্র সঙ্গী। অতিমারির আবহে লকডাউন নয়, ওদের বন্দিত্বের কারণ মানুষের শখ পূরণ। ওরা খাঁচার পাখি। তারের জালে ঘেরা ছোট্ট পরিসরেই যাদের জীবনের বারোমাস্যা। মুক্ত আকাশ যাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ‘পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ি পাখির ডাকে জেগে’র মানে যাদের কাছে শুধুই যন্ত্রণা। যদিও ওরা কেউ করোনাভাইরাসের শিকার নয়।

ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭২) অনুযায়ী এ দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে মেলা ১,২০০-র বেশি প্রজাতির পাখি ধরা, মারা কিংবা পোষা পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিছু নিয়ম মেনে বিদেশি পাখি পোষায় ছাড় রয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই সেই সব নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বন দফতর এবং কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণ অপরাধ দমন শাখার অভিযানে কয়েক হাজার পাখি ধরা পড়েছে। টিয়া, চন্দনা, ফুলটুসি, পাহাড়ি ময়নার মতো ভারতীয় প্রজাতি রয়েছে এই তালিকায়। দেখা গিয়েছে এই ছোট খাঁচা বা কাপড়ের ব্যাগে পাখিই ছানাদের ঠাসাঠাসি করে ভরে পাচারের সময় তাদের অনেকেই দমবন্ধ হয়ে বা ‘ডিহাইড্রেশন’-এ মারা পড়ে। কারও ডানা তো কারও পা ভাঙে।

‘প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন’ (প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৬০) অনুযায়ী বিদেশি পাখি পোষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই নজরদারির ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। তাই নির্দ্বিধায় খাঁচার সঙ্কীর্ণ পরিসরে রেখে দেওয়া হয় পাখিদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাসের পর মাস ভাল করে নড়াচড়ার সুযোগ না পেয়ে তাদের ডানার পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। ওড়ার ক্ষমতা চলে যায়। বহুমূল্য হায়াসিন্থ ম্যাকাও বা মলাক্কার কাকাতুয়া যাতে দাঁড়ের শিকল কেটে উড়ে পালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নিষ্ঠুর ভাবে কেটে দেওয়া হয় ডানার ‘ফ্লাইট ফেদার’ (ওড়ার পালক)।

হাঁস-মুরগির মতো গৃহপালিত এবং ‘খাদ্য’ হিসেবে পরিগণিত পাখিদের ক্ষেত্রেও নিষ্ঠুর আচরণের দায়ে জেল ও জরিমানার সাজার ব্যবস্থা রয়েছে ভারতীয় আইনে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইনরক্ষকদের দৃষ্টি কখনওই পড়ে না বলে অভিযোগ। তাই মালগাড়িয়ে বাক্সে ভরে বা সাইকেলের সঙ্গে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে মুরগি নিয়ে যাওয়াই কার্যত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বহু বার জানিয়েছে, এমন অস্বাস্থ্যকর আবহে হাস-মুরগি পরিবহণ করা হলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে প্রবল। বস্তুত, গত দু’দশকে একাধিক বার ‘বার্ড ফ্লু’ সংক্রমণের ঘটনা সেই বিপদের আভাসও দিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। যদিও ‘পেটা’-র পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি এখনও হাল ছাড়তে নারাজ। সংগঠনের তরফে ধারাবাহিক ভাবে প্রাণীদের উপর নিষ্ঠুরতা বন্ধ করা আবেদন নিয়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহ জুড়ে ‘প্রাণীদের প্রতি সদয় হন’ আবেদন নিয়ে প্রচার শুরু করেছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE