দেশের ভিতরে যাতায়াত করতেন চার্টার্ড হেলিকপ্টারে। থাকতেন বিলাসবহুল হোটেলে। চড়তেন বিদেশি গাড়ি, বাইকে। টাকা দিয়ে পেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের এক দ্বীপ সেন্ট কিটসের নাগরিকত্ব। তাঁর এক একটা ঘড়ির দাম ছিল ২৫ লক্ষ টাকা। এ হেন প্রতীক রাধাকৃষ্ণন গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশের হাতে। অভিযোগ, বিনিয়োগের নামে প্রতারণা করতেন লোকজনকে। বিশেষত বৃদ্ধদের। আর এ ভাবে হাতিয়েছিলেন ৬৫ কোটি টাকা।
গত ৬ জুলাই নিজের বিলাসবহুল গাড়ি চালিয়ে বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ৩৫ বছরের প্রতীক। আচমকাই গা়ড়ি থামায় পুলিশ। প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পুলিশ সূত্রে খবর, মুম্বই, পুণে, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কেরল থেকে প্রায় ৩০ জন তাঁর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাঁর ভুয়ো সংস্থায় বিনিয়োগ করে সব হারিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, রোহন মেনন নামে সেন্ট কিটস দ্বীপরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন তিনি। ওই নামেই প্রতারণা করতেন। নিজেকে আইআইটির ছাত্র বলেও দাবি করতেন তিনি। এ-ও দাবি করতেন, আমেরিকার কলেজে থেকে এমবিএ পাশ করে সেখানকার সংস্থায় কাজ করেছেন। দুবাইয়ে তাঁর নিজের সংস্থা রয়েছে।
গত জুন মাসে মুম্বইয়ের এক থানায় প্রতীকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ৬২ বছরের এক বৃদ্ধ। তিনি সান্তাক্রুজের বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, প্রতীকের ‘টারস প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট’ সংস্থায় ৫.২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। ২০২৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করছেন। প্রতীক দাবি করেছিলেন, দুবাইয়ে তাঁর সংস্থা রয়েছে। অভিযোগকারী জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রথম ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। তাঁকে প্রতীক জানিয়েছিলেন, তাঁর সংস্থায় বিনিয়োগ করলে মাসে মাসে ১০ শতাংশ সুদ পাবেন তিনি। সেই মতো পরের মাসে ৯০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। এর পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ওই বৃদ্ধ ৫.১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
অভিযোগকারী মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন শাখাকে জানিয়েছেন, প্রতীকের কাছে তাঁর দুবাইয়ের দফতর দেখার অনুরোধ করেছিলেন। প্রতীক সেই নিয়ে টালবাহানা করেন। মার্চ মাসে বৃদ্ধ দুবাইয়ে পৌঁছে যান। তখন প্রতীক দাবি করেন, তিনি আমেরিকায় রয়েছেন। তাই সে সময়ে দুবাইয়ের দফতর ঘুরিয়ে দেখাতে পারছেন না। এর পরেই বৃদ্ধ বুঝতে পারেন, প্রতীকের আদৌ কোনও সংস্থা নেই। তিনি তখন তাঁর কাছে টাকা ফেরত চান। বৃদ্ধের অভিযোগ, প্রতীক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
বৃদ্ধের অভিযোগ পেয়ে মুম্বই পুলিশ তদন্ত নামে। তারা বেঙ্গালুরুর এক বিলাসবহুল হোটেলে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে হোটেল কর্মীরা জানান, প্রতীক ওই দিন সন্ধ্যাতেই চেকআউট করছেন। বেরিয়েছেন গাড়ি নিয়ে। তার পরেই মোবাইল ফোনের টাওয়ারে নজর রেখে প্রতীককে ধাওয়া করেন তদন্তকারীরা। শেষে রাস্তা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেন।
তবে এই প্রথম নয়, পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগেও থানায় দু’বার প্রতীকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তিনি কয়েক মাস জেলেও থেকেছেন। ২০২২ সালে চেন্নাইয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম বার প্রতারণার মামলা দায়ের করেছিলেন এক ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২.৮২ কোটি টাকা তাঁর থেকে হাতিয়েছেন প্রতীক। ২০২৩ সালের মার্চে গ্রেফতার হন যুবক। ওই বছরের নভেম্বরে জামিনও পান। জেল থেকে বেরিয়ে ২০২৪ সালে রোহন মেনন নাম নিয়ে ভুয়ো তথ্য দিয়ে সেন্ট কিটস দ্বীপের নাগরিকত্ব পান তিনি।
পুলিশ তদন্তে জেনেছে, বিনিয়োগকারীদের প্রতীক নিজের বন্ধু বা অন্য কারও অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সেখানে টাকা পাঠাতে বলতেন। ওই অ্যাকাউন্টের গ্রাহককে ১ শতাংশ কমিশন দিতেন। মুম্বইয়ের ওয়েস্ট সাইবার থানার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার পুরুষোত্তম করাদ জানিয়েছেন, গ্রেফতারির পরে ১৯ জুলাই প্রতীকের বিরুদ্ধে আরও এক ব্যক্তি প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। মূলত বৃদ্ধ বিনিয়োগকারীরাই ছিলেন তাঁর নিশানা। হাওয়ালার মাধ্যমে সেই বিনিয়োগের টাকা মুম্বইয়ে পাঠাতেন। সেই টাকায় বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন।