মণিপুরে বেআইনি অসত্র উদ্ধারের অভিযানে ‘বৃহত্তম সাফল্য’ পেল অসম রাইফেল্স ও পুলিশের যৌথবাহিনী। শুক্রবার রাত থেকে ইম্ফল উপত্যকার পাঁচটি জেলায় জঙ্গিডেরায় শুরু হওয়া অভিযানে বহু আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ৩০০-র বেশি বিভিন্ন মডেলের রাইফেল, বিপুল পরিমাণে কার্তুজ এবং বিস্ফোরক এমনকি, গোলা-সহ মর্টার!
মণিপুর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে ১৫১টি ৭.৬২ এসএলআর, ৬৫টি ৫.৫৬ ইনসাস এবং ৭৩টি অন্যান্য রাইফেল রয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি ৯ এমএম কার্বাইন, দু’টি এমপি৫ সাব-মেশিনগান, ১২টি হালকা মেশিনগান, একটি এআর-১৫ সেমি অটোম্যাটিক রাইফেল, ছ’টি একে সিরিজের রাইফেল, দু’টি আমোঘ রাইফেল, ছ’টি পিস্তল এবং একটি ‘ফ্লেয়ার গান’ উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। ওই এলাকায় সক্রিয় মেইতেই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি গত দু’বছরের হিংসাপর্বে ওই সব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে ধারণা পুলিশের।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রায় দুশো জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
পরবর্তী সময়ে ইম্ফল হাই কোর্ট ওই বিতর্কিত নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও শান্তি ফেরেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। কারণ, কুকিদের মনে তৈরি হয়েছে নতুন আশঙ্কা। মূলত ইম্ফল উপত্যকার সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্য দিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। কুকিদের অভিযোগ, হিংসা থামানোর অজুহাতে মেইতেই প্রভাবিত পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় ধীরে ধীরে পাহাড়ি এলাকায় জনজাতিদের জমি দখলের অভিযান শুরু করা হচ্ছে। যদিও মণিপুর পুলিশ সম্প্রতি মেইতেই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাম্বাই টেঙ্গলের শীর্ষনেতা কানন সিংহকে গ্রেফতার করেছে। এ বার মেইতেই প্রভাবিত এলাকা থেকে উদ্ধার হল বিপুল অস্ত্র।