নিজের বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে পি চিদম্বরম। সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) কপিল সিব্বল, নীতীশ কুমার ও সীতারাম ইয়েচুরি। — নিজস্ব চিত্র
লোকসভায় কংগ্রেসের সুবক্তার অভাব। সেই তুলনায় রাজ্যসভায় আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বল, দিগ্বিজয় সিংহ, জয়রাম রমেশের মতো দুঁদে বক্তা রয়েছেন। কিন্তু যতই ভাল বক্তৃতা দিন না কেন, এঁদের নিয়ে অভিযোগও রয়েছে। কেউ নিজেকে বেশি জাহির করতে চান তো কাউকে বাকিদের পছন্দ নয়। এই পরিস্থিতিতে সকলের পছন্দের লোক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বৃহস্পতিবার বাজেট নিয়ে মোদী সরকারকে যে ভাবে নিশানা করেছেন তিনি, তাতে তাঁর কদর আরও বেড়েছে। শুধু অর্থনীতি নিয়েই নয়, রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও এখন চিদম্বরমের পরামর্শ নিচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ভুলভ্রান্তি এবং তার লক্ষ্য নিয়ে নরেন্দ্র মোদী যে বারবার অবস্থান বদলাচ্ছেন, তা চিদম্বরমই প্রথম তুলে ধরেন। সেই অনুযায়ীই রাহুল গাঁধী মোদীকে আক্রমণের নকশা তৈরি করেছেন। চিদম্বরমের এই ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের নমুনা মিলেছে দিল্লিতে, তাঁর লেখা একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে। শুক্রবার সেই অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে একই সঙ্গে হাজির হয়েছেন মনমোহন সিংহ ও রাহুল গাঁধী। আবার ওই মঞ্চ থেকেই নোট বাতিল নিয়ে নিজের অবস্থান সম্পূর্ণ বদলে ফেলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার একে ‘চূড়ান্ত অব্যবস্থা’ আখ্যা দিয়েছেন। চিদম্বরম নিজে অভিযোগ তোলেন, রঘুরাম রাজন পুরোপুরি নোট বাতিলের বিরুদ্ধে ছিলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ থেকে তাঁকে সরানোর এটাও একটা কারণ। তাঁর দাবি, যার ভিত্তিতে নোট বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সেই আলোচনার তথ্য প্রকাশ্যে আনা হোক।
এ বার বাজেটের আগে ও পরেও মোদী সরকারকে নিশানা করতে চিদম্বরমকেই মাঠে নামিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যসভাতেও বাজেট নিয়ে বিতর্কে চিদম্বরমের বক্তৃতা শুধু কংগ্রেস নেতাদের নয়, বাম-তৃণমূলের নেতাদেরও সাধুবাদ কুড়িয়েছে। এমনকী বিজেপি সাংসদরাও বলছেন, কংগ্রেসের অন্য নেতাদের মতো চিদম্বরম শুধু যে অরুণ জেটলির বাজেটের সমালোচনা করেছেন তা-ই নয়, তার ভাল দিকগুলিও উল্লেখ করেছেন। ইউপিএ-সরকারের কোন কোন প্রকল্প নরেন্দ্র মোদী সরকার আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার উল্লেখ করেছেন। আবার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে আক্রমণ করতে তিনি হাতিয়ার করেছেন সঙ্ঘ-পরিবারের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘর বিবৃতিকে।
সমস্যা একটাই। তা হল, এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তির মতো দুর্নীতিতে তাঁর পুত্র কার্তির নাম সামনে এসেছে। সারদা কেলেঙ্কারিতেও তাঁর স্ত্রী নলিনীর নাম জড়িয়েছে। এর পিছনে অর্থমন্ত্রী হিসেবে চিদম্বরমের নিজের ক্ষমতা কাজে লাগানোর অভিযোগও উঠেছে। তাই কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, হাইকম্যান্ডের পক্ষে চিদম্বরমকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই ব্যবহার করা সম্ভব। তার বেশি হলে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বেরও গায়ে এসে লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy