Advertisement
E-Paper

সরকার গড়ার উদ্যোগ বিশ বাঁও জলে, ফের জ্বলছে মণিপুর! নতুন অশান্তি কেন বাধল, কী পরিস্থিতি উত্তর-পূর্বের রাজ্যে

রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর পরিস্থিতি খানিক নিয়ন্ত্রণে এলেও বিক্ষিপ্ত অশান্তি এখনও চলছে রাজ্য জুড়ে। মণিপুরে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে মেইতেই এবং কুকি জনজাতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফল মেলেনি!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫ ১৭:৩৪
Peace has not returned to Manipur even under President\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s rule, tensions flare up again

অশান্ত মণিপুর। ছবি: পিটিআই।

মণিপুর রয়েছে সেই মণিপুরেই!

কখনও শান্ত হয়, পরক্ষণেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত দু’বছরে বার বার মণিপুরের চিত্র বদলেছে। কুকি জনজাতি এবং মেইতেই গোষ্ঠীদের মধ্যে সংঘর্ষে মণিপুরে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আবার পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শান্তি ফিরেছে! তবে সেই শান্তি আবার বিঘ্নিত হয়েছে কোনও এক ঘটনায়। স্থায়ী সমাধান এখনও অধরা মণিপুরে।

অশান্ত মণিপুর

শনিবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মণিপুরে। অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ইম্ফল। সেই অশান্তির আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে অন্য জেলাগুলিতেও। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে বিক্ষোভকারীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলিও ছুড়তে হয় পুলিশকে।

ঘটনার সূত্রপাত

ঘটনার সূত্রপাত একটি গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে। শনিবার মেইতেই গোষ্ঠীভুক্ত সংগঠন আরামবাই টেংগোলের এক কমান্ডর পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ! খবর ছড়িয়ে প়়ড়তেই একদল বিক্ষোভকারী জড়ো হন পশ্চিম ইম্ফলের কোয়াকেইথেল পুলিশ পোস্টের সমানে। ‘গুজব’ ছড়ায় ওই পোস্টেই নাকি আটকে রাখা হয়েছে তাঁদের! অবিলম্বে ধৃতদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। কয়েক জন যুবককে নিজের গায়ে পেট্রল ঢালতেও দেখা যায়। নিজেদের পুড়িয়ে মারার হুমকিও দেন বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর চালানো হয় ওই পুলিশ পোস্টেও। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ। দুই পক্ষের ধস্তাধস্তিতে দুই সাংবাদিক-সহ তিন জন আহত হন। তার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন দিকে অশান্তির আগুন ছড়াতে শুরু করে।

পুলিশের পদক্ষেপ

রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে উত্তেজনা। শুধু ইম্ফল নয়, আশপাশের মেইতেই অধ্যুষিত এলাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাফ, আধাসেনাও নামানো হয়। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে মণিপুরের বেশ কয়েকটি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিষ্ণুপুর জেলায় কার্ফু জারি করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবল, কাকচিঙের মতো জেলাগুলিতে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাঁচ বা তার বেশি লোকের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মণিপুর পুলিশ। অন্য দিকে, শনিবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার থেকে ১০ দিন মণিপুর বন্‌ধের ডাক দিয়েছে আরামবাই টেংগোল। রাস্তাঘাটে যান চলাচল স্তব্ধ করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

সমাজমাধ্যমে যাতে কোনও রকম গুজব বা হিংসাত্মক বক্তব্য ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই জন্য সতর্ক পুলিশ ও প্রশাসন। দিকে দিকে চলছে নাকা চেকিং। আগামী পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে মণিপুরের অবস্থা থমথমে। নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কাও করছে পুলিশ। আগাম ব্যবস্থাও নিয়েছে তারা।

কুকি-মেইতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও বীরেন সিংহের পদত্যাগ

২০২৩ সাল থেকেই কুকি ও মেইতেইদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অশান্ত মণিপুর। অশান্তি ঠেকাতে ব্যর্থ তৎকালীন এন বীরেন সিংহের সরকার, এমন অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। মণিপুরের অশান্তির আঁচ পড়েছে সংসদেও। কেন প্রধানমন্ত্রী অশান্ত মণিপুর নিয়ে চুপ, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয় বিরোধীরা। সংসদে মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবিও জানানো হয়। একাধিক পদক্ষেপও পরিস্থিতি বদলাতে পারেনি! এ হেন পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন বীরেন। মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ, বীরেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ শুধু বিরোধীদের নয়। বিজেপির অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে। শোনা গিয়েছিল, বীরেন সরকারের বিরুদ্ধে বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছে কংগ্রেস। তার আগেই ইস্তফা দিয়ে দেন এন বীরেন সিং। ফলে মণিপুরে জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। বর্তমানে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছেন রাজ্যপাল অজয় ভল্লা। অনেকেই ভেবেছিলেন, রাষ্ট্রপতি শাসনে শান্তি ফিরবে মণিপুরে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বার বার দফায় দফায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে উত্তেজনা দেখা গিয়েছে।

মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন

মার্চ মাসের গোড়া থেকে আবার উত্তেজনা ছড়াতে থাকে মণিপুরে। সেই সময় ইম্ফল, চুরাচান্দপুর-সহ একাধিক জেলায় সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য জুড়ে ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’ বা আফস্পার (আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট) মেয়াদ বৃদ্ধি করে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাঁচটি জেলার ১৩টি থানা এলাকা বাদ দিয়ে গোটা মণিপুরে আফস্পার মেয়াদ বৃদ্ধি হচ্ছে। এখনও সেই আইনই চলছে।

শান্তি ফেরানোর চেষ্টা কেন্দ্রের

রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর পরিস্থিতি খানিক নিয়ন্ত্রণে এলেও বিক্ষিপ্ত অশান্তি জারি ছিল। মার্চ মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘অবাধ চলাচল’ নির্দেশের প্রতিবাদে মণিপুরের কুকি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্‌ধের ডাকও দেওয়া হয়েছিল। গত ১৩ মার্চ বন্‌ধ প্রত্যাহার করা হলেও কুকিরা জানিয়ে দিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ তাঁরা মানবেন না। কুকিদের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ‘অবাধ চলাচল’-এর বিরোধিতা করে যাবেন। শুধু তা-ই নয়, মণিপুরে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে মেইতেই এবং কুকি জনজাতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু তাতেও যে শান্তি ফেরেনি, তা দফায় দফায় উত্তেজনাতেই প্রমাণিত!

নতুন সরকার গঠনের উদ্যোগ

মণিপুরে শুধু কুকি ও মেইতেই মধ্যে অশান্তিতে থেমে নেই, অন্য গোষ্ঠীদের মধ্যেও মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ বাধে। সেই তালিকায় রয়েছে মার এবং জ়োমি জনজাতি। সম্প্রতি মণিপুরে রাজনৈতিক টালবাহানা শুরু হয়েছে। আবার সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করেছেন বিজেপি বিধায়কেরা। তবে এখনও সরকার গঠনের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। সেই আবহে আবার নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বলতে শুরু করল মণিপুরে।

Manipur Violence BJP N Biren Singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy