বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানাল, বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই বা বাদ গিয়েছে, তাঁরা আধার নিয়ে অনলাইনেও আবেদন জানাতে পারবেন। কমিশনকে সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব, আবেদনের সময় আধার বা পরিচয়ের যে কোনও নথি নেওয়া হোক। অন্য নথির জন্য ভোটারদের সময় এবং সুযোগ দেওয়া হোক।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জানাতে পারবেন ভোটারেরা। তাঁদের সহযোগিতা করতে পারবেন বুথ লেভেল এজেন্টরা। তা ছাড়া বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে সব রাজনৈতিক দলের সভাপতিকে নোটিস দিতে বলেছে শীর্ষ আদালত। সেই নোটিসে জানানো হয়েছে, এক, ভোটাররা নিজে অথবা এজেন্টদের সহযোগিতায় অনলাইনে আবেদন জমা দিতে পারবেন। সশরীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুই, ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাদ পড়া ভোটারদের বিষয়ে অভিযোগ জানানো যাবে। তিন, বিএলও-দের কাছে সরাসরি ফর্ম জমা দিলে রসিদ দিতে হবে। তবে এই রসিদ দেওয়া মানেই ফর্ম গ্রহণ করা হলে এমনটা ধরা যাবে না।
শুক্রবারের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজনৈতিক দলগুলি। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের মন্তব্য, “বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) রাজনৈতিক দলের হয়। এলাকার প্রায় সবাই তাঁদের চেনেন। কারও নাম বাদ গেলে এজেন্টরা নিশ্চয়ই জানবেন। তাঁরা আপত্তি করছেন না কেন?” কমিশনের আইনজীবী বলেন, “প্রায় সব বুথেই এজেন্ট রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জোট থাকায় তারা সব বুথে আলাদা করে এজেন্ট নিয়োগ করেনি।” আগামী ৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি।
আরও পড়ুন:
আদালতে দুই পক্ষের সওয়াল পর্বে তুলে ধরা হল এখানে—
কমিশন: ভুলবশত কারও নাম বাদ পড়লে আবেদন করা যাবে। স্বপক্ষে অতিরিক্ত নথিও নেওয়া হবে।
কমিশন: সব থানা, পঞ্চায়েত এলাকা এবং এজেন্টদের বাদ পড়াদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
কমিশন: কোনও রাজনৈতিক দল এখনও পর্যন্ত একটিও অভিযোগ জমা দেননি।
সুপ্রিম কোর্ট: স্বীকৃত ১২টি রাজনৈতিক দলের সব বুথে এজেন্ট নেই। প্রয়োজনে তারা এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবে।
কমিশন: বিহারের সব রাজনৈতিক দলের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখছে। ১.৬ লক্ষ এজেন্ট তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতি দিন ১০টি করে বাদ পড়া নাম খতিয়ে দেখছে। এই কাজ শেষ হলে সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
কমিশন: নথি যাচাই এবং অভিযোগের সুযোগ দেওয়া হবে সবাইকে। তার আগে কোনও নাম বাদ দেবে না ইআরও।
মামলাকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ: অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের নাম বাদ গিয়েছে। তারা কাজের জন্য বাইরে আছেন। তারা ফিরে আসতে পারেননি। তাঁদের নাম তো বাদ গেল।
বিচারপতি কান্ত: কিন্তু এজেন্টরা গ্রামের মানুষ। ছোট গ্রামে একে অপরকে চিনবে। তাঁরা সেই তথ্য জানাননি কেন?
বিচারপতি কান্ত: আমরা ভাবছি এজেন্টরা কী করছেন? রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের এত দূরত্ব কেন?
সুপ্রিম কোর্ট: পুরো বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি। আমরা চাইছি এই পুরো প্রক্রিয়া হোক ভোটার বান্ধব।
কমিশন: অযথা বিষয়টি নিয়ে জটিলতা বৃদ্ধি করছেন মামলাকারীরা। ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ আবেদন করেছেন। কমিশনের উপর বিশ্বাস রেখেছেন।
বিচারপতি বাগচী: রাজনৈতিক দলগুলির থেকে ভোটাররা নিজেদের অধিকার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন।
বিচারপতি কান্ত: আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আধার বা পরিচয়ের যে কোনও নথি নেওয়া হোক। ধরুন, আজ আধার দিয়ে আবেদন করলাম। কিন্তু মাধ্যমিক সার্টিফিকেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আবেদন জমা নিন। বাধা দেবেন না। অন্য নথির জন্য সময় এবং সুযোগ দিন।
কমিশন: কোটি কোটি মানুষ আবেদন জমা দিয়েছেন। কয়েক দিন অপেক্ষা করুন। অনেক গল্প ছড়ানো হচ্ছে। কমিশনের উপর আস্থা রাখুন।
সুপ্রিম কোর্ট: খসড়া তালিকায় নাম তোলার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে। খসড়া তালিকায় নাম না-থাকলে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জানানো যাবে।
সুপ্রিম কোর্ট: বিহারের ১২টি রাজনৈতিক দলের ১.৬৭ এজেন্ট রয়েছেন। তাঁরা প্রতি দিন ১০টি করে নাম যাচাই করছেন। অর্থাৎ, প্রতি দিন ১৬ লক্ষ বাদ পড়া নাম যাচাই করা হচ্ছে। ৬৫ লক্ষের নাম যাচাই করতে ৪-৫ দিন সময় লাগা উচিত। তার পরেও অতিরিক্ত সময় থাকছে।
সুপ্রিম কোর্ট: ভোটাররা অভিযোগ জানাতে পারবেন। তাঁদের সহযোগিতা করতে পারবেন বুথ লেভেল এজেন্টরা।
সুপ্রিম কোর্ট: ভোটারদের প্রয়োজনীয় আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ১১টি নথির যে কোনও একটি অথবা আধার কার্ড জমা দেওয়ার জন্য সহযোগিতা করতে পারবেন এজেন্টরা।
সুপ্রিম কোর্ট: বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে সব রাজনৈতিক দলের সভাপতিকে নোটিস দিতে হবে। সেখানে জানাতে হবে
১) ভোটাররা নিজে অথবা এজেন্টদের সহযোগিতায় অনলাইনে আবেদন জমা দিতে পারবেন। সশরীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
২) ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাদ পড়া ভোটারদের বিষয়ে অভিযোগ জানানো যাবে।
৩) বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-দের কাছে সরাসরি ফর্ম জমা দিলে রসিদ দিতে হবে। তবে এই রসিদ দেওয়া মানেই ফর্ম গ্রহণ করা হল, এমনটা ধরা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্ট: কী কী নথি জমা দেওয়া হচ্ছে তার উপর নজর রাখুক কমিশন।
সুপ্রিম কোর্ট: কমিশনকে রশিদ অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে।