জাতপাতের ভিত্তিতে কোনও মিছিল বা মিটিং করা যাবে না। জনসমাবেশে উল্লেখ করা যাবে না জাতের প্রসঙ্গ। এমনকি রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে কোথাও জাতের উল্লেখ করা হলেও পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। সম্প্রতি এমনই নিয়ম চালু হল উত্তরপ্রদেশে। এলাহাবাদ হাই কোর্টের গত ১৬ সেপ্টেম্বরের একটি রায়কে উল্লেখ করে রবিবার যোগী আদিত্যনাথের সরকার নির্দেশনামা জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জাতিভিত্তিক যে সমস্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়, তা এখন থেকে নিষিদ্ধ। এই ধরনের সমাবেশ সমাজে জাতিবৈষম্য ছড়ায় যা জাতীয় ঐক্যের বিরোধী। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব দীপক কুমার সমস্ত জেলার জেলাশাসক এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিককে এই সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রাস্তাঘাটে কোনও পোস্টার, সাইনবোর্ডে জাত উল্লেখ করে কিছু লেখা যাবে না। কোনও গাড়িতে যদি এমন কিছু লেখা থাকে বা জাতের উল্লেখ পর্যন্ত থাকে, তবে জরিমানা করতে হবে। পুলিশের খাতাতেও জাতের কথা লেখা যাবে না। তফসিলি জাতি ও উপজাতি আইনের অধীনে যে সমস্ত অপরাধের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, একমাত্র তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে বলে জানিয়েছে সরকার।
আগামী দু’বছরের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। তার আগে এই ধরনের সরকারি নির্দেশিকা রাজ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং তার সহযোগী দলগুলির উপরেও এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ভোটব্যাঙ্কের অঙ্ক কষে নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশে জাতপাতকে হাতিয়ার করে অনেক দলই। জাতের ভিত্তিতে অনেক রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথা রেখে ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিছু দিন আগে এলাহাবাদ হাই কোর্ট একটি মামলায় উত্তরপ্রদেশ সরকারকে জাতিবৈষম্য মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছিল। পুলিশের নথিতে যাতে কোনও ভাবেই জাতের কথা উল্লেখ না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। প্রয়োজনে পুলিশের নিয়মও পরিবর্তন করতে বলেছিল আদালত। তার পরেই সরকারের এই নির্দেশিকা এসেছে।
সরকারের নির্দেশিকায় আদৌ কতটা কাজ হবে, ইতিমধ্যে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সমাজের বৈষম্য কি এতে দূর হবে? প্রশ্ন তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘পাঁচ হাজার বছর ধরে মানুষের মনে যে কুসংস্কার গেঁথে রয়েছে, তা সরানোর জন্য কী পদক্ষেপ করা হবে? জাতভিত্তিক পোশাক, প্রতীক চিহ্ন। তাদের মোকাবিলার জনগোষ্ঠীর থেকে যে বৈষম্য ছড়ায়, তার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে? কারও নাম জিজ্ঞাসা করার আগেই জাত জিজ্ঞাসা করার যে মানসিকতা, তা নিয়ে কী করা হবে? জাতপাতের কারণে যখন কাউকে জোর করে ঘর মুছতে বাধ্য করা হয়, তার কী হবে? আর জাতিভেদের কারণে যে ষড়যন্ত্র হয়ে চলেছে, যে সমস্ত অপমানজনক অভিযোগ আনা হচ্ছে, তার কী হবে?’’