বিহারের জেডিইউ প্রার্থী অনন্ত সিংহকে ভোটের পাঁচ দিন আগে খুনের দায়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টির কর্মী ৭৫ বছর বয়সি দুলারচাঁদ যাদবকে খুন করেছেন তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা। শনিবার রাত ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ অনন্ত এবং তাঁর দু’জন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই সাংবাদিক বৈঠক করে সে খবর জানান এসএসপি কার্তিকেয় কে শর্মা। পুলিশের বক্তব্য, ঘটনাস্থলে এই তিন জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
দুলারের মৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত মোট ছ’টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাতে প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে অনন্তের নাম রয়েছে। তিনি মোকামা বিধানসভা কেন্দ্রের চার বারের বিধায়ক। ২০২২ সালে অস্ত্র সংক্রান্ত একটি মামলায় নাম জড়ানোয় বিধায়ক পদ হারান অনন্ত। তার পর ওই কেন্দ্র থেকে জেতেন তাঁর স্ত্রী নীলম দেবী। ২০২৫ সালের ভোটে আবার জেডিইউয়ের টিকিট পেয়েছেন। অভিযোগ, পিকের দলের প্রার্থীকে লক্ষ্য করে প্রথম গুলি চালিয়েছিলেন অনন্তই। পরে তাঁর দলের কর্মীরা বৃদ্ধকে মারধর করেন। শেষে গাড়ি চাপা দিয়ে তাঁকে খুন করা হয়।
আরও পড়ুন:
দুলারের নাতি নীরজ কুমার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশের এফআইআর-এ বলা হয়েছে, অনন্তের গুলি দুলারের পায়ের গোড়ালিতে লেগেছিল। তিনি পড়ে গেলে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয় বৃদ্ধকে। তার পর একটি গাড়ি তাঁকে কয়েক বার পিষে দিয়ে চলে যায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না। ফুসফুস ছিঁড়ে পাঁজরের হাড় ভেঙে মৃত্যু হয়েছে দুলারের।
এসএসপি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমরা যা তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি, তার ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা একটি ভিডিয়ো ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সংগ্রহ করেছি। অনন্ত সিংহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনিই প্রধান অভিযুক্ত।’’ তদন্তের জন্য সিআইডি-র বিশেষ দল গঠন করেছে বিহার পুলিশ। অনন্ত ছাড়া বাকি দুই ধৃত হলেন মণিকান্ত ঠাকুর এবং রঞ্জিৎ রাম। ঘটনায় তাঁদের মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, কে গুলি চালিয়েছিলেন, গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারা এবং অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
রবিবার সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে অনন্তের পেজ থেকে। গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘সত্যমেব জয়তে। মোকামার মানুষের প্রতি আমার আস্থা আছে। এ বার ভোটে লড়বে মোকামার মানুষই।’’
মোকামায় জন সুরাজ পার্টির হয়ে লড়ছেন প্রিয়দর্শী পীযূষ। নিহত দুলার সম্পর্কে তাঁরই আত্মীয়। গত বৃহস্পতিবার প্রিয়দর্শীর সমর্থনে একটি মিছিলে দুলার ছিলেন। সেই মিছিল অনন্তের সমর্থনে আয়োজিত মিছিলের মুখোমুখি চলে আসে এবং দুই দলের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তাতেই দুলারের মৃত্যু হয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, দুলার গাড়িতে বসেছিলেন। সেই সময়ে জেডিইউ-এর সমর্থকেরা এসে তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। এর পর অনন্ত নিজে এসে গুলি চালান। গোড়ালি ফুঁড়ে সেই গুলি বেরিয়ে গিয়েছে। দুলারের দেহ পুলিশ পেয়েছিল গাড়ির ভিতরেই।