জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমা থেকে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভা নির্বাচনের আগেই সেই দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে চিঠি লিখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত দিনে তা কার্যকর হওয়ায় কি মমতাকে কৃতিত্ব দেবেন? নতুন জিএসটি কাঠামো ঘোষণার পরে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল নির্মলাকে। জবাবে তাঁর মুখে শোনা গেল পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রশংসা। সেই সঙ্গে মমতার সেই চিঠি নিয়েও তিনি মুখ খুললেন।
শনিবার একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গেলে বিমায় জিএসটি মকুব সংক্রান্ত মমতার চিঠি নিয়ে নির্মলাকে প্রশ্ন করা হয়। সঞ্চালক বলেন, ‘‘তৃণমূলের দাবি, এক বছর আগে মমতা জীবন ও স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে আপনাকে চিঠি দিয়েছিলেন। এখন সেটা বাস্তবায়িত হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। আপনি কি এর জন্য মমতাকে কৃতিত্ব দেবেন?’’
আরও পড়ুন:
-
প্রাথমিক মামলায় আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ! ইডি হেফাজতে চাইলেও শর্তসাপেক্ষে জামিন
-
জিএসটি ২.০ মধ্যবিত্তকে অনেক সুরাহা দেবে! বললেন নির্মলা, জিএসটি ৩.০-তে কী কী থাকবে, জানিয়ে রাখলেন তা-ও
-
প্রবল মতানৈক্য, জিএসটি নিয়ে ‘নাছোড়’ দুই রাজ্যকে শেষে কী ভাবে রাজি করালেন নির্মলা? বৈঠকের নাটকীয় আড়াই ঘণ্টা
গত ৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে নির্মলার নেতৃত্বে বৈঠকে বসেছিল জিএসটি কাউন্সিল। সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রী সেখানে ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর তাঁরা জিএসটি সংস্কারের বিষয়ে একমত হন। রাতে তা ঘোষণা করা হয়। সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলি এই সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। তাদের প্রধান উদ্বেগ ছিল রাজস্ব নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলকে রাজি করানো গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমার প্রশংসা করে নির্মলা বলেন, ‘‘প্রথমত, আমি ভারতের রাজনীতিতে মহিলা নেত্রীদের খুব সম্মান করি। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীও মহিলা। তিনি জিএসটি কাউন্সিলে খুব ভাল ভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। যে বিষয়গুলি আমি সমর্থন করি না, তা নিয়েও ওঁর বক্তব্য খুব সুচিন্তিত এবং সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত।’’
মমতার চিঠি এবং জিএসটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কৃতিত্ব প্রসঙ্গে নির্মলা বলেন, ‘‘মমতা আমাকে বিমায় জিএসটি তোলার কথা বলে চিঠি লিখে থাকতে পারেন। কিন্তু জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রথমেই আমি যে কাজটা করেছিলাম, তা হল প্রত্যেক মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো। দলমত নির্বিশেষে। আমরা সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে এমন একটি পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করেছি, যা মানুষের পক্ষে ইতিবাচক। তাই বৈঠকে উপস্থিত সকলের কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।’’
বিজেপি হোক বা বিরোধীশাসিত রাজ্য, জিএসটি সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক অর্থমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত ভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নির্মলা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি গতকাল (শুক্রবার) সকল অর্থমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত ভাবে মেসেজ করে ধন্যবাদ জানিয়েছি। কারণ, তাঁরা এই অসাধারণ কাজটি সম্ভব করে দেখিয়েছেন। জিএসটি কাউন্সিল স্বাধীনতার পরে তৈরি একমাত্র সাংবিধানিক কাঠামো। সেখানে আমরা সমস্ত মতপার্থক্যকে জয় করে এমন একটা বিষয় দাঁড় করাতে পেরেছি, যাতে দেশের মানুষ খুশি। এটা সকলের কৃতিত্ব।’’
এত দিন জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমায় ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হত। নতুন ঘোষিত জিএসটি কাঠামোয় এই দুই ক্ষেত্র থেকে জিএসটি সম্পূর্ণ তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এখন থেকে যে কোনও বিমায় জিএসটি-র পরিমাণ হবে শূন্য। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই নিয়ম কার্যকর করা হবে। সাধারণ মানুষের খরচ কমাতে, বিমায় তাঁদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন নির্মলা।