ছ’বছরের সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানাজানি হতেই অশান্তি। কিন্তু প্রেমিকা চেয়েছিলেন প্রেমিকের সঙ্গেই সংসার পাততে। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে দেখা করেছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে। কিন্তু বিয়েতে নারাজ প্রেমিক। বিয়ের জন্য জোরাজুরি করতেই গলা টিপে প্রেমিকাকে খুন করে দেহ পুঁতে দেন নদীর চরে। নিখোঁজ হওয়ার ছ’মাস পরে যুবতীর কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রেমিককে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে কর্নাটকের গদক জেলায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের নাম সতীশ হিরেমথ। ২৭ বছরের ওই যুবকের সঙ্গে প্রায় ছয় বছরের প্রেম ছিল ২৬ বছরের মধুশ্রী অঙ্গদির। তাঁরা দু’জনেই গদক জেলার একই গ্রামের বাসিন্দা। প্রতিবেশীও বলা চলে। রবিবার সতীশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যুবকের স্বীকারোক্তি, ছ’মাস আগে প্রেমিকাকে খুন করেছেন তিনি। বস্তুত, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে খোঁজ মিলছিল না মধুশ্রীর।
পুলিশ জানিয়েছে, সতীশের সঙ্গে মধুশ্রীর সম্পর্কের কথা দুই পরিবার জানতে পারার পর সমস্যা হয়। মধুশ্রীকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসে তাঁর পরিবার। ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর ওই আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি যুবতী। কোথাও মেয়ের খোঁজখবর না মেলায় মাসখানেক পর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে মধুশ্রীর পরিবার। তদন্তে নেমে যুবতীর প্রেমিকের খোঁজ করতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে তাঁরও হদিস পায়নি পুলিশ। অবশেষে সেই যুবককে খুঁজে বার করেছে পুলিশ। তার পর মিলেছে মধুশ্রীর খোঁজও। যদিও তিনি আর বেঁচে নেই!
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, নিখোঁজ হওয়ার দিন সতীশের সঙ্গে দেখা করেন মধুশ্রী। দু’জনে মিলে নারায়ণপুরার একটি খামারবাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা বাড়ির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তখন মধুশ্রী প্রস্তাব দেন, তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেওয়ার। কিন্তু সতীশ রাজি হননি। ওই নিয়ে দু’জনের মনোমালিন্য হয়। ঝগড়া করতে করতে একসময় মেজাজ হারিয়ে প্রেমিকার গলা টিপে ধরেন সতীশ। মধুশ্রীর ওড়না ছাড়িয়ে নিয়ে তাঁরই গলায় চেপে ধরেন প্রেমিক। শ্বাসরোধ করে খুন করেন প্রেমিকার দেহ নদীর চরে পুঁতে দিয়ে পালিয়ে যান যুবক।
আরও পড়ুন:
গত ছ’মাস নানা জায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েছেন সতীশ। একটি পেট্রল পাম্পে কাজ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ডেরা’য় হানা দেয় পুলিশ। আটক করা হয় সতীশকে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই অভিযুক্ত স্বীকার করে নিয়েছেন খুনের কথা। তিনি জানিয়েছেন, রাগের বশে প্রেমিকাকে মেরে ফেলেছেন। কারণ, বিয়ের জন্য জোরাজুরি ভাল লাগছিল না তাঁর। ঘটনাক্রমে গ্রেফতার করা হয় সতীশকে।
ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নদীর চর থেকে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু সেখানে আর এক ‘চমক’। কারণ, কঙ্কাল পাওয়া গেলেও বালি খুঁড়ে মাথার খুলি পাওয়া যায়নি। তা হলে কি মধুশ্রীর মুন্ডু কেটে ফেলেছিলেন সতীশ? ঘটনার তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে পুলিশ। অভিযুক্তের ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেখান থেকে খুনের বিষয়ে কোনও তথ্য মেলে কি না, দেখছেন তদন্তকারীরা। তদন্তের স্বার্থে ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আদালতে হাজির করাবে পুলিশ।