Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
COVID-19

কমে যায় টি-সেল, কোভিড যুদ্ধে নয়া দিশা দেখাচ্ছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা

মিলিত ভাবে কাজটি করছেন ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট, কিং’স কলেজ লন্ডন এবং গাই’জ ও সেন্ট টমাস হাসপাতালের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা।

কোভিডে আক্রান্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ব্রাজিলে। ছবি: এএফপি।

কোভিডে আক্রান্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ব্রাজিলে। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

ব্রিটেনে এক দল বিজ্ঞানী কোভিড-১৯-এ গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসায় সম্ভাব্য নতুন একটি পথের সন্ধান পেয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যাঁরা খুবই অসুস্থ, তাঁদের শরীরে টি-সেলের সংখ্যা খুবই কম থাকছে। এই বিশেষ কোষগুলি দেহকে সংক্রমণ মুক্ত করার কাজ করে। ‘ইন্টারলিউকিন-৭’ নামে একটি ওষুধ শরীরের টি-সেল বাড়াতে সাহায্য করে। এ বার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা হবে, এই ওষুধটির প্রয়োগে টি-সেলের সংখ্যা বাড়লে, সেটা কোভিড-১৯-এ গুরুতর অসুস্থদের নিরাময়ে সাহায্য করে কি না।

মিলিত ভাবে কাজটি করছেন ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট, কিং’স কলেজ লন্ডন এবং গাই’জ ও সেন্ট টমাস হাসপাতালের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল দু’টির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনুশঙ্কর হরি এই টি-সেল বাড়িয়ে রোগ নিরাময়ের গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চিকিৎসক রোহিত সাহা গবেষক দলটির সদস্য। ক্রিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আড্রিয়ান হেডে বলছেন, ‘‘টি-সেলগুলির অবস্থা দেখে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা যাদের, তাদের সংখ্যাই নাটকীয় ভাবে কমে যাচ্ছে কোভিড-১৯-এ গুরুতর আক্রান্তদের শরীরে। করোনভাইরাস সেগুলিকে কব্জা করে ফেলছে।’’ এক জন সুস্থ ব্যক্তির ১ মাইক্রোলিটার (০.০০১ মিলিলিটার) রক্তে ২০০০ থেকে ৪০০০ টি-সেল থাকে। আর কোভিড-আক্রান্তদের অনেকের ক্ষেত্রে তা ২০০ থেকে ১২০০-তে নেমে যাচ্ছে।

কী এই টি-সেল? জীবাণু মোকাবিলার জন্য রক্তে থাকে শ্বেত রক্তকণিকা। তার মধ্যে লিম্ফনোড, টনসিল, প্লিহায় তৈরি হওয়া শ্বেত রক্তকণিকাগুলি শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে। এগুলিকে বলে লিম্ফোসাইট। টি-সেল এক ধরনের লিম্ফোসাইট। গলার থাইমাস গ্রন্থিতে তৈরি হয় বলে এমন নামে পরিচিত। অধ্যাপক হেডের বক্তব্য, কোভিড রোগীদের দেহে এদের সংখ্যা কেন ও কী ভাবে কমছে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। এটা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। তবে টি-সেলের সংখ্যা যে কমছে, এই তথ্যটিই বর্তমানে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দু’ভাবে—

এক, টি-সেলের সংখ্যার হ্রাস থেকেই একটা ধারণা মিলছে, কারও ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক আকার নিতে চলেছে কি না।

দুই, টি-সেল বাড়িয়ে হয়তো গুরুতর অসুস্থদের সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে, এমন আশা তৈরি হয়েছে।

মনুশঙ্কর জানাচ্ছেন, ইন্টেনসিভ কেয়ারে থাকা প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীর প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে লিম্ফোসাইটের সংখ্যা ৪০০-৮০০-তে নেমে যাচ্ছে। আবার তাঁরা যখন সেরে উঠতে শুরু করছেন, তখন এদের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করছে‌।

আরও পড়ুন: লুকোলেই হিতে বিপরীত, স্বচ্ছতা থাক কোভিড-তথ্যে

ইন্টারলিউকিন-৭ ওষুধটি এ পর্যন্ত অল্প সংখ্যক সেপসিস রোগীর উপরে পরীক্ষা করা হয়েছে। এবং নিরাপদে তাদের শরীরে এই বিশেষ কোষগুলির সংখ্যা বাড়ানো গিয়েছে। ওষুধটি দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও সে কাজটা করা যায় কি না, সেটার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা হবে এ বার। ক্রিটিক্যাল কেয়ারে তিন দিনের বেশি রয়েছেন, শুধু এমন রোগীদের উপরেই এই পরীক্ষা করা হবে। মনুশঙ্কর বলছেন, ‘‘আমরা আশা করছি, টি সেলের সংখ্যা বাড়লে, নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণও বিদায় নেবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গুরুতর করোনা-সংক্রমিতদের আমরা নানা রকম সহায়ক ব্যবস্থা দিই, কিন্তু রোগটির সরাসরি কোনও চিকিৎসা আমাদের হাতে নেই। নতুন পথে সাফল্য পেলে, ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসকদের কাছে সেটা হবে, সবচেয়ে উৎসাহের বিষয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 British Scientists
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE