চিন জুড়ে খাদ্য সঙ্কট ক্রমশ গুরুতর হচ্ছে। ফাইল চিত্র।
গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড ২.০! না, চেয়ারম্যান মাওয়ের জমানার মতো দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনও। তবে চিন জুড়ে খাদ্য সঙ্কট যে ক্রমশ গুরুতর হচ্ছে, তার আঁচ মিলেছে ইতিমধ্যেই। আর সেই সঙ্গেই সামনে আসছে এতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন— খাদ্য সঙ্কট থেকে আমজনতার নজর ঘোরাতেই কি ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে উঠছে চিনের কমিউনিস্ট সরকার?
সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কটের মোকাবিলা করার জন্য গত মাসের মাঝ পর্বে ‘অপারেশন ক্লিন প্লেট’ চালু করেছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। দেশবাসীর প্রতি তাঁর কঠোর বার্তা ছিল, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই যেন খাদ্যদ্রব্য নষ্ট না করা হয়। সরকারি নির্দেশিকায় অতিথি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। এমনকী, যে সব সেলিব্রিটিরা একগাদা খাবার খাওয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন সরকারি চ্যানেল গ্লোবাল টিভি তাঁদের সমালোচনায় সরব হয়েছিল।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, চিনফিং যে কারণ দু’টি তুলে ধরেছেন তা আদতে অর্ধসত্য। শুধু করোনা আর বন্যা নয়, দক্ষিণ চিন সাগরে ‘পেশি প্রদর্শন’ করতে গিয়ে আমেরিকার পাশাপাশি কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও কূটনৈতিক সঙ্ঘাতে জড়িয়েছে বেজিং। এই তিনটি দেশ থেকেই চিন সবচেয়ে বেশি খাদ্যসামগ্রী আমদানি করে। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন তিনি। অগস্ট মাসে চিনের ‘অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, দ্রুত কৃষি সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে না পারলে আগামী বছর দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্যাংগংয়ে মুখোমুখি ট্যাঙ্ক বাহিনী, দিল্লিতে বৈঠকে রাজনাথ
মে মাসের গোড়ায় চিনা প্রধানমন্ত্রী লি খছিয়াং করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উচ্চ ফলনসীল ফসল আর শুয়োর পালনের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস আগেই আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লুয়ের কারণে চিনে কয়েক কোটি শুয়োর মেরে ফেলতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চিনাদের প্রিয় মাংসের প্রবল মূল্যবৃদ্ধিও হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালেই পার্টি অফিস চালাচ্ছেন লালু! মামলা আদালতে
ঘটনাচক্রে, মে মাসের গোড়াতেই লাদাখে লাল ফৌজের অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিল। এমন যোগসূত্রকে নিছক কাকতালীয় হিসেবে মেনে নিতে রাজি নন অনেকেই। আর এ ক্ষেত্রে তাঁদের হাতিয়ার ইতিহাস।
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ১৯৫৮ সালে চিনা জনগণের বড় অংশকে ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মাও দে জং। কিন্তু গ্রামে গ্রামে কমিউন বানিয়ে অদক্ষ কৃষিশ্রমিক ব্যবহারের সেই নীতি ধাক্কা খেয়েছিল অচিরেই। শুধু কৃষি নয়, নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। ছড়িয়ে পড়েছিল দুর্ভিক্ষ। কিন্তু একদলীয় চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সে কথা স্বীকার করেনি। এমনকি, গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সমালোচনা করায় প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইকে!
শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে ইতি টেনেছিলেন মাও। এবং তার পরেই ম্যাকমোহন লাইনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে ভারতীয় এলাকায় এততরফা আগ্রাসন চালায় চিনা সেনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই ধারণা, অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে জনতার নজর ঘোরাতেই এমন পদক্ষেপ করেছিলেন মাও। ইতিহাসের আশ্চর্য সমাপতনের আশঙ্কা তাই মোটেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy