Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Texas

টেক্সাসে বন্দুকবাজ হামলায় প্রাণ হারালেন ২০ জন, অভিবাসী বিদ্বেষ থেকেই কি হামলা! তদন্তে গোয়েন্দারা

হামলার মিনিট কুড়ি আগে ‘8chan’ ওয়েবসাইটে ‘দ্য ইনকনভিনিয়েন্ট ট্রুথ’ নামে একটি ইস্তেহার প্রকাশিত হয়। চার পাতার ওই ইস্তেহারে দাবি তোলা হয় আমেরিকায় অভিবাসী প্রবেশ বন্ধের।

মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: এপি।

মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
এল পাসে শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ১৪:৩০
Share: Save:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেটেক্সাসে ওয়ালমার্ট স্টোরের ভিতরে ঢুকে হামলা চালাল এক বন্দুকবাজ। তাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন। গুরুতর জখম হয়েছেন প্রায় ৩০ জন, যাঁদের মধ্যে রয়েছে দু’বছরের শিশু থেকে ৮১ বছরের প্রবীণ ব্যক্তিও। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁদের। জীবিত অবস্থায় ওই হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে জাতি বিদ্বেষ থেকেই হামলাকারী এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অনুমান মার্কিন গোয়েন্দাদের।

হামলাকারী ২১ বছরের ওই শ্বেতাঙ্গ যুবকের নাম প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস। টেক্সাসের‌ অ্যালেনের বাসিন্দা সে। শনিবার সকালে ১০টা ৪০ নাগাদ স্থানীয় মানুষ যখন কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন, তখনই মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত চেকপয়েন্ট থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এল পাসো শহরের সিয়েলো ভিস্তা শপিং মলের কাছে ওয়ালমার্টের ওই স্টোরটিতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ে প্যাট্রিক। এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে।

কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকায় আচমকা গুলির শব্দে চমকে ওঠেন ক্রেতা এবং ওয়ালমার্টের কর্মীরা। হূলস্থূল পড়ে যায় চারদিকে। কিছু মানুষ স্টোর থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করেন অনেকে। হামলাকারীর নজর এড়াতে জামাকাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন কিছু জন। কেউ কেউ আবার আশ্রয় নেন টেবিল-চেয়ারের নীচে। সেই অবস্থায় গোটা ঘটনা ক্যামেরা বন্দি করার সাহসও দেখান কয়েকজন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে সেগুলি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তাতে এদিক ওদিক রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

হামলার বিবরণ দিচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শী। ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন: পাঁচ অনুপ্রবেশকারীর মৃতদেহ ফেরত নিক পাকিস্তান, বলল ভারতীয় সেনা, নীরব ইসলামাবাদ​

হামলার সময় ওই ওয়ালমার্ট স্টোরে প্রায় তিন হাজার গ্রাহক ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু হামলার খবর পেয়ে ছ’মিনিটের মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাওয়া রক্তক্ষয় কিছুটা হলেও আটকানো গিয়েছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। তারা স্টোরটি ঘিরে ফেলায় আত্মসমর্পণ করে প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস। বাইরে বেরিয়ে পুলিশের হাতে ধরা দেয়। হামলাকারীর সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যে নানা তথ্য উঠে এলেও, আল পাসোর পুলিশ প্রধান গ্রেগ অ্যালেন জানিয়েছেন, একাই হামলা চালিয়েছে প্যাট্রিক।

অন্য দিকে মার্কিন প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলার মিনিট কুড়ি আগে ‘8chan’ ওয়েবসাইটে ‘দ্য ইনকনভিনিয়েন্ট ট্রুথ’ নামে একটি ইস্তেহার প্রকাশিত হয়। চার পাতার ওই ইস্তেহারে দাবি তোলা হয় আমেরিকায় অভিবাসী প্রবেশ বন্ধের। বলা হয়েছে, এমন চললে এক দিন অভিবাসীদের হাতেই টেক্সাসের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। নিজেদের সুবিধা মতো নিয়ম-কানুন পাল্টাবে তারা। তাতে ডেমোক্র্যাটদের হাত আরও শক্ত হবে। এ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে শ্বেতসন্ত্রাসের বলি হন ৫১ জন। যে ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট এই হামলা চালিয়েছিল, তাকেও সমর্থন করা হয় ওই ইস্তেহারে। হামলা চালানোর আগে প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস ওই ইস্তেহারটি পোস্ট করেছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। এর আগে, এই ‘8chan’ ওয়েবসাইটেই ক্রাইস্টচার্চ হামলার কথা ঘোষণা করেছিল হ্যারিসন ট্যারান্ট।

ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘যে তরতাজা প্রাণগুলি কেড়ে নেওয়া হল, তাঁদের আজ আমাদের সঙ্গে থাকার কথা ছিল। ২০ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জখম হয়েছেন অনেকে। এই হামলাকে নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং ঘৃণা-অপরাধ বলে গণ্য করব আমরা, যা আসলে ঘটেছে।’’

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবি স্থানীয় মানুষের। ছবি: এপি।

আরও পড়ুন: মহাকাশ থেকে কেমন দেখতে পৃথিবী, উৎক্ষেপণের ১২ দিনের মাথায় প্রথম ছবি পাঠাল চন্দ্রযান-২​

২০১৬-য় নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকেই অভিবাসী প্রবেশ রোখা নিয়ে সরব হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেও নিজের অবস্থান বদলাননি তিনি। বরং অভিবাসী রুখতে মার্কিন সীমান্তে দেওয়াল তোলার প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এল পাসো হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন তিনিও। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে লেখেন, ‘এল পাসোর হামলার ঘটনা শুধুমাত্র দুর্ভাগ্যজনকই নয়, এই হামলা কাপুরুষোচিত। এই দুঃসময়ে দেশবাসীর পাশে রয়েছি। হামলার তীব্র নিন্দা করছি। নিরীহ মানুষের হত্যা কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না।’

গত এক সপ্তাহে এই নিয়ে দু’-দু’টি হামলার সাক্ষী থাকল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে, ২৮ জুলাই ক্যালিফোর্নিয়ার গিলরয়ে রসুন উৎসবে হামলা চালায় এক বন্দুকবাজ। তাতে তিন জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময় চলাকালীন আত্মঘাতী হয় হামলাকারী। তবে তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এল পাসোর হত্যাকাণ্ড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE