Advertisement
E-Paper

মেটিয়াবুরুজ কি ভুলে যাচ্ছে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহকে? মনে করানোর উদ্যোগে প্রদর্শনী

‘মুলাকাত মেটিয়াবুরুজ সে’ নামের এই প্রদর্শনী নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের গড়ে তোলা সংস্কৃতিকে মনে করায়। মঙ্গলে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সুযোগ আছে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১১ তারিখ পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ১৫:১১
প্রদর্শনী চলছে।

প্রদর্শনী চলছে। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে একেবারেই ‘অন্য জগৎ’ যেন মেটিয়াবুরুজ। অন্তত অনেকেরই তেমনই ধারণা। শহরের এ দিকের মানুষের পায়ের ধুলো ও দিকে কালেভদ্রে পড়ে। অথচ এই অঞ্চলের জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গৌরবের ইতিহাস। নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের হাতেই গোড়াপত্তন হয়েছিল এই জায়গার। নবাব এই মেটিয়াবুরুজেই গড়ে তুলেছিলেন ‘ছোটা লখন্উ’ সেসব এখন শুধুই ইতিহাস। সেই শায়েরি, ঠুংরি আর নবাবি খানার সেইঐতিহ‍্য, সংস্কৃতি কি এখনও বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে এখনকার মেটিয়াবুরুজ?

বিরিয়ানির ধামসা আলু মুখে পুরে তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে এলে ওয়াজেদ আলিকে মনে পড়ে বটে, কিন্তু একুশ শতকের মেটিয়াবুরুজের মাটি কি নবাবকে মনে রেখেছে? সেই উত্তর খুঁজতেই কোভিড কালে এই অঞ্চলে পা রেখেছিলেন কত্থক নৃত‍্যশিল্পী শ্রুতি ঘোষ। মেটিয়াবুরুজ চষে ফেলে, এখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বিষয়টি শুধু গবেষণাতেই আটকে রাখেননি। মেটিয়াবুরুজেই নবাবকে নিয়ে আয়োজন করেছেন এক প্রদর্শনীর। যে প্রদর্শনী ওয়াজেদ আলির গড়ে তোলা সংস্কৃতিকে মনে করায়। মঙ্গলে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সুযোগ আছে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১১ তারিখ পর্যন্ত। প্রদর্শনীর নাম ‘মুলাকাত মেটিয়াবুরুজ সে’। প্রদর্শনীতে রয়েছে মেটিয়াবুরুজের ইমামবাড়া, মসজিদ, দরগার সাদা-কালো ছবি, নবাবকে নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার প্রতিলিপি, নবাবকে আধার করে লেখা বইয়ের প্রচ্ছদ, বাঁয়া-তবলা, ঘুঙুর, আলবোলা দিয়ে সাজানো নবাবি মজলিশের আসর, মেটিয়াবুরুজকে নিয়ে তৈরি ভিডিয়ো দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী।

দর্শককে প্রদর্শনী ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন আয়োজক শ্রুতি ঘোষ।

দর্শককে প্রদর্শনী ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন আয়োজক শ্রুতি ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

১৮৫৬ সালে লখন্উ ছেড়ে মেটিয়াবুরজে ঘাঁটি গাড়েন অওধের শেষ নবাব। কিন্তু বেশি দিন সেখানে থাকতে পারলেন না। পরের বছরই মহাবিদ‍্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে ভারতে। ফোর্ট উইলিয়ামে বন্দি করা হয় ওয়াজেদ আলিকে। ২৫ মাসের পর বন্দিদশা কাটিয়ে ফেরেন মেটিয়াবুরুজে। লখন্উের অনুকরণে গড়ে তোলেন এই জায়গা। বড় বড় প্রাসাদ থেকে নাচ-গান, সবেতেই অওধি ছোঁয়া। কিন্তু সে সবের এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই বলেই জানাচ্ছেন শ্রুতি। ইমামবাড়া বাদ দিয়ে ইট-কাঠ-পাথরের স্থাপত‍্য, প্রাসাদ তো কবেই মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। সেই ঐতিহ‍্য আর সংস্কৃতিও বিস্মৃতির পথে। শ্রুতি বলেন, "কত্থকের তিন ঘরানা। লখনউ, জয়পুর এবং বেনারস। নাচের সুবাদে লখনউ ঘরানার ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে ওয়াজেদ আলি শাহকে নিয়ে আমার উৎসাহ বেড়েছে। ভেবেছিলাম, মেটিয়াবুরুজ এবং নবাবকে নিয়ে প্রযোজনা তৈরি করব। কিন্তু তার আগে তো বিষয়টি জানতে হবে। সেই জানতে গিয়েই গবেষণা শুরু করা। বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশন ফর দি আর্টস’-এর 'আর্টস রিসার্চ প্রোগ্রাম’ বিভাগে গবেষণার কাজ শুরু করা। গত বছর মার্চে কাজ শুরু করেছি। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গবেষণার মেয়াদ রয়েছে।’’

প্রর্দশনীতে মেটিয়াবুরুজ নিয়ে তৈরি ভিডিয়ো চলছে।

প্রর্দশনীতে মেটিয়াবুরুজ নিয়ে তৈরি ভিডিয়ো চলছে। নিজস্ব চিত্র।

ভিডিয়ো

এত বছরের পুরোনো ইতিহাস, সংস্কৃতি জানার জন‍্য দেড় বছর বড্ড কম সময় বলেই মনে করেন তিনি। খাতায়-কলমে গবেষণা শেষ হলেও কাজ, অনুসন্ধান চলবে। এই অঞ্চলের তরুণ প্রজন্মের কাছে ওয়াজিদ আলির পরিচয় খুব সীমিত। এই প্রদর্শনী মেটিয়াবুরুজকে ওয়াজেদ আলির কর্মকাণ্ড, সংস্কৃতি আর রীতিনীতি চেনানোর প্রথম ধাপ বলে মনে করেন শ্রুতি।

exhibition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy