E-Paper

ডায়েটে থাকুক প্রদাহরোধক খাবার

কোনও জীবাণু, আঘাত বা কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। তাই খুব জরুরি প্রদাহরোধক খাদ্যাভ্যাস।

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫৬

—প্রতীকী চিত্র।

বেশ কয়েক দিন ধরে শরীরে অস্বস্তি বোধ করছিলেন নিমিশা। কেমন একটা বমি-বমি ভাব, গ্যাসের সমস্যার জন্য কাজে মন বসানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে তিনি জানতে পারলেন, ‘অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ডায়েট’ বা প্রদাহরোধক খাদ্যাভ্যাস তাঁর এই সমস্যার সমাধান।

সহজ কথায় বলতে গেলে, বডি ইনফ্লামেশনের অর্থ হল প্রদাহ। চিকিৎসকেরা বলেন, শরীরের প্রদাহকে একেবারেই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ, সাধারণত কোনও জীবাণু, আঘাত বা কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেই প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এর ফলে হতে পারে জ্বর, যন্ত্রণা, ফোলা ভাব। এ ছাড়া গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বমি বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যায় যাঁরা ভুগতে থাকেন, তাঁদের জন্যও খুবই জরুরি প্রদাহরোধক খাদ্যাভ্যাস।

—প্রতীকী চিত্র।

যা-যা থাকবে ডায়েটে

পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী জানাচ্ছেন, এই খাদ্যাভ্যাসের মূলে হল এমন খাবার বেছে নেওয়া যা প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি, ভিটামিন সি, ফাইবারে ভরপুর। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীর মতে, যদি খাদ্যতালিকায় রাখা যায় ভিটামিন এ, সি, ই, কে-যুক্ত খাবার, তা হলে শরীরের প্রদাহ কমবে। কেমন খাবার বেছে নিতে পারেন এ ক্ষেত্রে?

হলুদ বা কমলা রঙের ফল যেমন পেঁপে, পেয়ারা, আম, ডিমের কুসুম ও কিছু বিশেষ ধরনের মাছ হয় ভিটামিন এ-তে ভরপুর। আমলকি, কমলালেবু, পেয়ারা বা কাঁচা আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। শাক, সবুজ আনাজপাতি, ব্লুবেরি, ডিম, চিজ় থেকে ভিটামিন কে, অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস মিলতে পারে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এ ছাড়াও জরুরি বাদাম, আভোকাডো। কারণ এতে থাকে ভিটামিন ই। মেথি, পালং, সরষে শাকেও থাকে অনেক অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। স্যামন, পমফ্রেট, ইলিশ বা রুই, কাতলা, সয়াবিন, চিয়া সিড, তিসি থেকে মেলে ওমেগা-থ্রি। হার্ট, কিডনিকে ভাল রাখতে খুবই উপকারী এই ধরনের খাবার।

—প্রতীকী চিত্র।

রোজকার রান্নায় ব্যবহৃত হয় এমন বেশ কিছু মশলাতেও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে। ধরা যাক হলুদ। কারকিউমিন থাকে হলুদে, যা প্রদাহ কমাতে বেশ কার্যকর। এ ছাড়াও গোলমোরিচ, মৌরি, আদা, রসুন খেলেও শরীরের প্রদাহ রোধ করা যায়। শরীর থেকে টক্সিন বার করতে খুবই উপকারী হচ্ছে জল। রোজ তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সুবর্ণা। চিনি ছাড়া ফলের রসও উপকারী হতে পারে কিছু ক্ষেত্রে।

এড়িয়ে যেতে হবে

কোয়েল জানাচ্ছেন, ময়দা, চিনি, ভাজাভুজি বা অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেলে যেমন শরীরে অস্বস্তি বাড়ে, ঠিক তেমনই নানা ধরনের রোগও চেপে বসতে পারে। রেড মিট বা প্রসেসড ফুডও সমান ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবারগুলিতে ট্রান্স ফ্যাট, চিনি, প্রিজ়ারভেটিভের পরিমাণ বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

রান্নায় অল্প করে চিনি দেওয়ার যে অভ্যাস রয়েছে ঘরে ঘরে, তা-ও কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন সুবর্ণা। কারণ, একাধিক পদ রান্নার সময়ে প্রতিটি পদে চিনি দেওয়ার ফলে যে পরিমাণ চিনি যায় আমাদের শরীরে, তা-ও যথেষ্টই প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি এ-ও জানাচ্ছেন, অনেকেই চিনির বদলে গুড় ব্যবহার করেন রান্নায়। এ ক্ষেত্রে ক্ষতি কিছুটা কম হলেও আসল সমস্যাটাই হয় শরীরে ‘সুগার কনটেন্ট’ কমানো নিয়ে। তাই যদি খাদ্যতালিকা থেকে একেবারেই বাদ দেওয়া যায় মিষ্টি তা হলে উপকার মিলতে পারে।

—প্রতীকী চিত্র।

জরুরি কথা

অনেক সময়ে সব পুষ্টিকর উপাদান হাতের কাছে থাকলেও রান্না পদটিতে সেই পুষ্টি বজায় থাকে না। রান্নার সময়ে অতিরিক্ত তাপ, মশলা বা বেশি সময় ধরে কষিয়ে ফেললে তার প্রভাব পড়তে পারে খাবারের গুণমানের উপরে।

চিকিৎসকেরা এ-ও জানাচ্ছেন, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জরুরি হচ্ছে নিয়মিত শারীরচর্চা।

নিজের শরীর-স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হওয়াও দরকার। কী খাওয়া উচিত তা নিজে ঠিক না করে যদি পুষ্টিবিদ, চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যতালিকা বানানো যায়, তা হলে সবচেয়ে বেশি উপকার মিলতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Diet Diet Tips Health care Food habits

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy