Advertisement
E-Paper

ভাত খেয়েও রোগা থাকুন

রোগা হওয়ার জন্য সবচেয়ে আগে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ভাত। তাতে কি আদৌ কাজ হয়? ভাত খেয়েও রোগা থাকবেন কী ভাবে?রোগা হওয়ার জন্য সবচেয়ে আগে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ভাত। তাতে কি আদৌ কাজ হয়? ভাত খেয়েও রোগা থাকবেন কী ভাবে?

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১

রোগা হওয়ার সহজ উপায়, রোজকার ডায়েট থেকে ভাত বাদ— অনেকের মনেই এ রকম ধারণা বহাল তবিয়তে বদ্ধমূল। ভাতের বদলে তখন চলতে থাকে ওটস, কিনোয়া, মুয়েসলি, খুসখুস, ব্রাউন ব্রেড, নিদেনপক্ষে আটার রুটি। কিন্তু রোজকার তালিকা থেকে ভাত বাদ দিলেই কি সমস্যার সমাধান হয়?

ছোট থেকে মাছ-ভাতে অভ্যস্ত বাঙালি রোগা হতে গিয়ে হঠাৎ করে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিলে মুশকিলে পড়েন। তা অস্বাভাবিকও নয়। ভাতে আছে কার্বোহাইড্রেট, যা শরীরে এনার্জির জোগান দেয়। আবার অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট রোজ শরীরে জমা হতে থাকলে পরে তা ফ্যাটে পরিণত হয়। তা বলে ভাত বন্ধ করে দেওয়া কি ঠিক?

কী ভাবে খাদ্যতালিকায় থাকবে ভাত?

ভাতের পরিমাণ

যতটা পরিমাণে ভাত আমরা খাই, তার বেশির ভাগটাই শরীর গ্রহণ করে। ভাতে ফাইবার নেই বললেই চলে। যদি ভাতের পরিমাণ কমিয়ে তার সঙ্গে ফাইবারসমৃদ্ধ আনাজপাতি যোগ করা যায়, তা হলে রোজই ভাত খাওয়া যায়। এখানেই আসে পরিমাণের প্রসঙ্গ। হয়তো ভাতের সঙ্গে কয়েক রকম তরকারি, মাছ রয়েছে। কিন্তু তা বলে কি ভাল পদ হলেই এক থালা ভাত খাওয়া উচিত?

ডায়েটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘ভাতের পরিমাণ এক বারে এক থালা হওয়া উচিত নয়। কে রোজ কতটা পরিমাণে ভাত খাবেন, তা নির্ভর করে সেই মানুষটির উচ্চতা এব‌ং ওজনের উপরে। এক জন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আদর্শ উচ্চতা ও ওজনসম্পন্ন মানুষের ডায়েটে সাধারণত ৫৫-৬০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। সেই কার্বোহাইড্রেট মানে কিন্তু পুরোটাই ভাত নয়। তার মধ্যে বিস্কিট, ফলের কার্বোহাইড্রেটও পড়ে। সহজ ভাবে বললে, কারও ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী যদি সারা দিনে যতটা কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন, তা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে চার ভাগে, তা হলে প্রাতরাশ, দুপুর, বিকেল ও রাতে চার বারই ভাত খেতে পারেন তিনি।’’ তবে ফ্যান গেলে নিয়েই ভাত খাওয়া উচিত। ফলে স্টার্চ বেরিয়ে যায় ভাত থেকে ও তা শরীরের ওজন বাড়ায় না, মত ডায়েটিশিয়ানের।

ভাতে ফাইবার থাকে না বলে তার সঙ্গে এমন কিছু খেতে হবে, যা ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করবে। শাক, মরসুমি আনাজপাতি, ফল, স্যালাডের পাশাপাশি মাছ, মাংস, ডিমজাতীয় প্রোটিন দরকারি। যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা স্বচ্ছন্দে পনির, সয়াবিন খেতে পারেন। রোগা কিংবা সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন সুষম আহার।

জড়িয়ে মনস্তত্ত্ব

বাঙালি দিনের বেলায় ভাত খেতেই স্বচ্ছন্দ। এই সময়ে মেটাবলিজ়মের হার থাকে বেশি। ফলে হজমও হয় তাড়াতাড়ি। দিনের বেলা সাদা ভাত খেলে সারা দিন পড়ে থাকে কাজের জন্য। তাই সাদা ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হওয়া সত্ত্বেও তা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় না।

ডায়েটিশিয়ান অর্পিতা দেব বলছেন, ‘‘যাঁরা দিনে দু’-তিন বার ভাত খেয়ে অভ্যস্ত, হঠাৎ করে ভাত বন্ধ করে দিলে অস্বস্তি বোধ করবেন। এখানকার জলবায়ুতে বাঙালি ভাত খেয়ে অভ্যস্ত। সেই তৃপ্তি রুটি বা অন্য কিছুতে আসা সম্ভব নয়। আবার উত্তর ভারতীয়রা রুটিতেই স্বচ্ছন্দ। নিজের মানসিকতা বদলালে, রুটি ও ভাত— যে কোনও কিছুই খাওয়া যায় তৃপ্তি ভরে।’’

কেউ ভাত খেতে ভালবাসেন, আবার কেউ একদমই এড়িয়ে যান। কিন্তু অতিরিক্ত ভাত খাওয়া বা একদম না খাওয়া ঠিক নয়। আগে বড় এক গ্লাস জল খেয়ে খেতে বসার অভ্যেস করা উচিত ছোটবেলা থেকেই। এতে খাবার ভাল হজম হয়, আবার জল খেলে পেট খানিকটা ভরে যায়। বড় প্লেটে নয়, ছোট বাটিতে ভাত খাওয়া ভাল। যাঁরা বেশি ভাত খান, তাঁরা চামচে করেও খেতে পারেন। চামচে ভাত উঠবে অল্প ও একটা সময়ের পরে খেতে ক্লান্তি জন্মাবে।

জরুরি ব্যায়ামও

অল্প পরিমাণে ভাত খেলেই চলবে না, শরীর সুস্থ রাখার জন্য দরকার ব্যায়ামও। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় বলছেন, ‘‘ভাত খাওয়ার পরে ভাতঘুম, আলস্য তৈরি হয়। খাওয়ার অন্তত দেড় থেকে দু’ঘণ্টা পরেই এক্সারসাইজ় করা উচিত। তার আগে করলে বদহজম ও অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা বাড়ে। ভাত খেয়েও রোগা থাকার জন্য বিশেষ কোনও এক্সারসাইজ় হয় না। শুরু করতে পারেন পুশ আপ, স্কোয়াট, লাঞ্জ জাতীয় শরীরের জোর বাড়ানোর ব্যায়াম দিয়ে।

ভাত সম্পর্কে ধারণা ও সত্যতা

• ভাত খেলেই ফ্যাট জন্মায় না। ভাতে থাকা কার্বোহাইড্রেট দীর্ঘ দিন ধরে জমতে জমতে ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হয়। শরীরই তাকে ফ্যাটে পরিণত করে। কিন্তু ভাত খেলেই যে কার্বোহাইড্রেট জমে ভুঁড়ি বাড়বে, এই ধারণা একেবারে ভুল।

• ভাত খেলেই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে, তা-ও ঠিক নয়। বরং ভাতে কোলেস্টেরলই থাকে না। ফলে এই সমস্যাতেও নির্দ্বিধায় ভাত খাওয়া যায়।

• ইদানীং গ্লুটেনের সমস্যায় ভোগেন বহু মানুষ। গ্লুটেন অ্যালার্জি এড়াতে চাইলে ভাতের চেয়ে উপকারী আর কিছু নেই।

• ভাত আবার অ্যামিনো অ্যাসিডে ভরপুর। শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অ্যামিনো অ্যাসিড খুব জরুরি।

• ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, যা শরীরের কোষ সুস্থ রাখে।

• ডায়েটিশিয়ান অর্পিতা দেব বলেছেন, ‘‘ডায়াবিটিস হলে ভাত কমিয়ে দেওয়ার বা না খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু আগের রাতে ভাত তৈরি করে সারা রাত ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। পরদিন ফ্রিজ থেকে বার করে ভাত গরম করবেন না। ঘরোয়া তাপমাত্রায় এনে গরম তরকারি দিয়ে খেতে পারেন ডায়াবিটিকরা। সারা রাত ঠান্ডায় থাকলে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভাতের বায়োলজিক্যাল অ্যাভেলেবিলিটি কমে। শরীর সেই ঠান্ডা ভাতের পুরোটা গ্রহণ করে না।’’

• অনেকেই ডায়েট করার সময়ে ব্রাউন রাইসের দিকে ঝোঁকেন। সাদা ভাতের তুলনায় ব্রাউন রাইসের মধ্যে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার থাকে বেশি। তবে ব্রাউন রাইসের স্বাদ আবার অনেকেরই অপছন্দ। সে ক্ষেত্রে রোজ সিদ্ধ চালের সাদা ভাত খেতে পারেন। তবে সিদ্ধ, ঢেঁকি ছাঁটা, কালো... যে ধরনের চাল থেকেই ভাত তৈরি হোক না কেন, পরিমাণ হোক সীমিত।

• ভাত খেলে শরীরে সেরাটোনিন নামে এক ধরনের হরমোন ক্ষরিত হয়। ঠিক ভাবে ভাবতে অর্থাৎ ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে সাহায্য করে সেরাটোনিন। আবার এই হরমোন মনও ভীষণ ভাল রাখে।

তা হলে এ বার থেকে খুশিমনেই ভাত খান, তবে কিনা অবশ্যই মেপে।

রূম্পা দাস

মডেল: তৃণা, ছবি: অমিত দাস

মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত

পোশাক: ওয়েস্টসাইড, পার্ক স্ট্রিট

ফিটনেস অ্যাকসেসরিজ়: ট্রান্সফর্মেশন ফিটনেস স্টুডিয়ো (টিডিএস), নেতাজি নগর

Diet Fitness Rice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy