একটু সাবধানে থাকলেই এড়ানো যায় গর্ভাবস্থার ঝুঁকি। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।
আজকের দিনে প্রায় সব গর্ভাবস্থাতেই ঝুঁকি বেশি। আসলে ৩৫–এর নীচে গর্ভসঞ্চার আর ক’টা-ই বা হয়! তার উপর আছে প্রবল মানসিক চাপ ও মেদবাহুল্য, যার সূত্রে ডায়াবিটিস বা হাইপ্রেশারও থাকে অনেকের৷ সঙ্গে ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস যুক্ত হলে তো হয়েই গেল!
‘না, তা বলে টেনশন করার দরকার নেই’, বললেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিজিত ঘোষ৷ তাঁর মতে, প্রথমত, বেশি টেনশনে সমস্যা বাড়ে৷ তা ছাড়া আজকাল এত রকম আধুনিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও চিকিৎসা বেরিয়ে গিয়েছে যে একটু সাবধানে থাকলে, শুরু থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ও যথাযথ ব্যবস্থা নিলে বিপদ সামলানো যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই৷
দেখে নিন, কী কী সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন, এমন জটিলতার কারণ ও লক্ষণই বা কী।
আরও পড়ুন: কমোডের ফ্লাশেও লুকিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য, জানতেন!
জটিলতার কারণ
হবু মায়ের বয়স ৩৫–এর চেয়ে যত বেশি হয়, তত সমস্যা৷ ধূমপান, মদ্যপান বা ড্রাগের নেশা। আগে গর্ভপাত, মৃত সন্তানের জন্ম বা জন্মের পরই সন্তান মারা যাওয়ার ইতিহাস যদি থাকে, তা হলে কিছু ক্ষেত্রে সময়ের আগে বা কম ওজনের সন্তান জন্মায়৷ হবু মায়ের কিছু অসুখ যেমন, ডায়াবিটিস, হাইপ্রেশার, মৃগি, রক্তাল্পতা, কোনও জটিল সংক্রমণ, মানসিক রোগ বা পরিবারে জেনেটিক অসুখও জটিলতার কারণ৷ গর্ভাবস্থায় যদি প্রেশার–সুগার বাড়ে, জরায়ু–জরায়ুমুখ–প্ল্যাসেন্টা সমস্যা হয়, ভ্রূণ যে তরলে ডুবে থাকে তার পরিমাণ খুব হেরফের হয়। কখনও বাড়ে, কখনও কমে। নেগেটিভ ব্লাডগ্রুপের মায়ের গর্ভে পজিটিভ ব্লাডগ্রুপের সন্তান আসে, ভ্রূণের বৃদ্ধি থমকে যায়৷ গর্ভে একাধিক সন্তান থাকলেও জটিলতা আসে অনেক সময়৷
সমস্যা ঠেকাতে
প্রি–ন্যাটাল কাউন্সিলিং করে তবে গর্ভসঞ্চারের কথা ভাবুন৷ গর্ভসঞ্চারের পর নিয়মিত ডাক্তার দেখান, যাতে সমস্যা হওয়ামাত্র ব্যবস্থা নেওয়া যায়৷ সুষম খাবার খান৷ ভিটামিন–মিনারেল সাপ্লিমেন্টও খেতে হতে পারে৷ ওজন বেশি বাড়তে শুরু করলে মা–বাচ্চা, দু’জনেরই ক্ষতি৷ কাজেই কতটা ওজন বাড়া স্বাভাবিক, তা জেনে সেই মতো সাবধান হয়ে চলুন৷ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন৷ সিগারেট–মদ–ড্রাগ ছোঁওয়া পর্যন্ত যাবে না৷ কথায় কথায় ওষুধ খাবেন না৷ ছোটখাটো ব্যাপারেও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন৷ আইভিএফ হলে জেনে নিন জরায়ুতে ক’টা ভ্রূণ দেওয়া হবে৷ দুই বা তার বেশি ভ্রুণ জরায়ুতে এলে সময়ের আগে প্রসবের আশঙ্কা বাড়ে৷ বাড়ে বিপদের আশঙ্কা।
জটিলতা আছে বুঝলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছবি:শাটারস্টক।
পরীক্ষা–নিরীক্ষা
সাধারণ পরীক্ষার পাশাপাশি করতে হয় কিছু বিশেষ পরীক্ষা৷ যেমন, ভ্রূণের শারীরিক ত্রুটি ধরতে স্পেশাল বা টার্গেটেড আলট্রা সাউন্ড৷
গর্ভস্থ সন্তানের জেনেটিক কোনও সমস্যা, মস্তিষ্ক বা শিরদাঁড়ার সমস্যা আছে বলে সন্দেহ হলে অ্যামনিওসিন্টেসিস বা কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং করানো উচিত৷
সামান্য কিছু ক্ষেত্রে ভ্রূণের ক্রোমোজোমের ত্রুটি, রক্তের অসুখ ও জটিল কোনও সংক্রমণ আছে কি না জানতে আম্বেলিকাল কর্ড থেকে রক্ত নিয়ে কর্ডোসেন্টেসিস বা পারকিউটেনিয়াস আম্বেলিকাল ব্লাড স্যাম্পলিং করা হয়৷
সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে মনে হলে স্ক্যান করে জরায়ুমুখের মাপ নেন চিকিৎসক৷ ভ্যাজাইনা থেকে রস নিয়ে তাতে ফিটাল ফাইব্রোনেকটিন আছে কি না দেখা যায়৷
সন্তানের সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে নন–স্ট্রেস টেস্ট পদ্ধতিতে ভ্রূণের হার্ট রেট মনিটর করা হয়৷ সঙ্গে করা হয় বিশেষ ফিটাল আলট্রাসাউন্ড৷
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা মানেই টেনশন৷ যা মাত্রা ছাড়ালে সন্তান ও মা— উভয়েরই ক্ষতি৷ কাজেই ডাক্তারের উপর ভরসা রাখুন৷ ধ্যান, আড্ডা, বই পড়া, গান শোনা— মোদ্দা কথা যাতে টেনশন কমে, তাই করুন৷
আরও পড়ুন: বেড়েছে সচেতনতা কমেছে ম্যালেরিয়া
বিপদের লক্ষণ
রক্তপাত, অবিরাম মাথাব্যথা, তলপেট কামড়ানো বা ব্যথা, ভ্যাজাইনা দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বা এক ধাক্কায় অনেকটা জল বেরিয়ে যাওয়া, লাগাতার বা ঘন ঘন পেটে শক্ত ভাব অনুভব, বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়া, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালা হওয়া, চোখে আবছা দেখা বা একই জিনিস দু’টো–তিনটে করে দেখা৷
চিকিৎসা
এ ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্রামে থাকতে হয় হবু মাকে৷ কড়া নজরদারির প্রয়োজন হলে এক–আধবার দু’–এক দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ারও দরকার হতে পারে৷ কিছু ওষুধপত্র চলে৷ সন্তান অপুষ্ট হতে পারে মনে হলে তারও কিছু চিকিৎসা প্রয়োজন হয়৷ এর পর অবশ্যই সময় মতো মা ও নবজাতকের চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে এমন হাসপাতালে প্রসব করাতে হবে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy